আইজিএম হাসপাতালে,নিম্নমানের খাবার সরবরাহ বিপাকে রোগী, ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের সরকারী হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য যেসব অসুস্থ রোগী ভর্তি থাকেন সেসব অসুস্থ রোগীর জন্য হাসপাতালের তরফে পথ্য তথা খাবার দেওয়া হলেও সেসব খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের ও খাওয়ার অযোগ্য।রোগীরা সেই কারণে হাসপাতালের পথ্য তথা খাবার বর্জন করেই চলেছেন।তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃহৎ অংশের রোগী সেই কারণে খাবার না নিলেও দূরদূরান্তের একাংশ সাধারণ ও গরিব অংশের রোগী নিরুপায় হয়ে সেই খাবারই গ্রহণ করছেন। এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের প্রধান দুই হাসপাতাল জিবি এবং আইজিএমের রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের।তবে হাসপাতালের তরফে রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছে হাসপাতালে রোগীর ডায়েট চার্ট, পথ্য ও খাবারের তালিকা অনুযায়ী গুণগত মান বজায় রেখে ভালো রান্না করে খাবার দেওয়া হয়। রাজ্যের প্রধান দুই হাসপাতালের তরফে এই দাবি করা হলেও রোগীরা তা মানতে রাজি নয়। রোগীর আরও অভিযোগ, খাওয়া মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। রোগীর জন্য বরাদ্দ খাবার যেমন মিলছে না, তেমনি খাবারের গুণগতমানও সঠিক নয়। খাবার পরিবেশনের টাইম-টেবিলও মানা হচ্ছে না।হাসপাতালে রোগীকে কি ধরনের পথ্য তথা খাবার দেওয়া হয়, গুণগতমান সঠিক আছে কিনা, সময়মতো রোগীরা খাবার পাচ্ছেন কিনা, খাবার পরিবেশনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হচ্ছে কিনা- এইসব সঠিকভাবে দেখভালে স্বাস্থ্য দপ্তর ও হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের তরফে যেন কেউ নেই। আর তার সুযোগ নিচ্ছে খাবারের জোগান ও খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। ফলে স্বাস্থ্য দপ্তর হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করে হাসপাতালে দিলেও রোগীর পথ্য ও খাবার নিয়ে হাসপাতালগুলিতে দিনের পর দিন চলছে ব্যাপক অনিয়মও দুর্নীতি। সব কিছু জেনেশুনেও স্বাস্থ্য দপ্তর কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল মেডিকেল সুপার ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করছেন বলেও অভিযোগ। আর সেই কারণে অমানবিকভাবেই বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তাতে রোগীর ক্ষোভ অসন্তোষ বাড়ছেই। এই সংবাদ প্রতিবেদনে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী রেফারেল হাসপাতাল আইজিএমে রোগীর পথ্য তথা খাবার পরিবেশনে কি ধরনের অনিয়ম, বেনিয়ম খাওয়ার অযোগ্য খাবারও দুর্নীতি করা হচ্ছে তার কিছুটা তুলে ধরা হল। আইজিএমে সব রোগীকে সকালের খাবার তথা টিফিন হিসাবে দেওয়া হয় দুধ ও কলা। সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টায় এই খাবার দেওয়া হয়। ডেয়ারির দুধ দেওয়া হলেও আসলে জল মেশানো দুধের সাদা কালার আকৃতির দুধ রোগীকে নিত্যদিন খাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীরা এই গুরুতর অভিযোগ আনছেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। সকালে দুটি পোক্ত পাকা কলা দেওয়ার কথা থাকলেও অত্যন্ত সরু খাওয়ার অনুপযুক্ত কলা দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে অধিকাংশ কলাই অর্ধেক পচা দেওয়া হয়। তারপর দুপুর সাড়ে বারোটা-১টার মধ্যে মধ্যাহ্নের খাবার দেওয়া হলেও হাসপাতালের নির্দিষ্ট ডায়েট তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে না। মশুরি ডাল, নিরামিশ সবজি, পল্ট্রি ডিমের (১টি) তরকারি ও ভাত মধ্যাহ্নের খাবার দেওয়া হলেও রান্নার গুণগত মান নিম্নমুখী হওয়ায় খাবার মুখে নিতে রোগীর অনিচ্ছা হচ্ছে বলে রোগীর অভিযোগ। মশুরি ডালের নামে জলডাল, নিরামিশ সবজি দেওয়া হচ্ছে কোনরকম নামকাওয়াস্তে। ডিমের তরকারির (পেয়াজি) ডিম পরীক্ষা করে না দেওয়ায় রোগীর থালায় পচা ডিমও পড়ছে। বিকালে সাড়ে চারটায় পাঁচটায় দুধ ও পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে। যে পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে তা রাবারের মতো। পাউরুটি রাবারের মত শক্ত ও ছিঁড়তে গেলে লম্বা হয়ে যায়- কিন্তু সহজে টুকরো করতে পারছেন না রোগীরা। অত্যন্ত নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পাউরুটি দিনের পর দিন রোগীকে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য দপ্তর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেদিকেও কোনও নজর দেওয়ার যেন সময় নেই। পাউরুটি একজন সাধারণ রোগীকে যে পরিমাণ দেওয়ার কথা সেই পরিমাণ পাউরুটিও দেওয়া হচ্ছে না। রাত ৭টা-৮টার সময় রাতের খাবারে ভাত, মশুরি ডাল, নিরামিশ সবজি দেওয়া হয়। রাতের খাবারের গুণগতমানও অরুচিপূর্ণ নিম্নমানের খাবারও দিনের পর দিন রোগীকে দেওয়া হচ্ছে বলে রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন সেই অভিযোগও করেছেন। প্রসূতি মায়েদের জন্য বিশেষ খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। প্রসূতি মায়েদের প্রতিদিন দুটি হাঁসের ডিম সেদ্ধ, দুটি সবরি কলা, ১টি আপেল, ১টি বিস্কুটের পেকেট, পাউরুটি ১০০ গ্রাম ও ফলের রস (পেকেট) দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল থেকে দাবি করা হলেও তাও বাস্তবে প্রসূতি মায়েরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।তাছাড়া প্রসূতি মায়েদের জন্য গুণগতমানের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ডায়েট তালিকতায় লেখা থাকলেও রোগীর ভাগ্যে সেই তালিকার অর্ধেক পথ্য তথা খাবার জুটছে না বলেও রোগীর অভিযোগ।এদিকে, শিশু ওবৃদ্ধ রোগীর জন্য পৃথক কোনও খাবার না দিয়ে সাধারণ রোগীরদের মতো খাবার দেওয়া হচ্ছে।