বাণিজ্য সংকট!!

বাণিজ্য সংকট বলতে আমরা সাধারণত কী বুঝি?অথবা বাণিজ্য সংকট কাকে বলে?খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, বাণিজ্য সংকট বলতে বোঝায়, এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হঠাৎ করে বড় ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দেয়।যেমন,পণ্যের দামের দ্রুত পতন, বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি, বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো ভেঙে যাওয়া, অথবা প্রত্যাহার করে নেওয়া, আচমকা কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করা ইত্যাদি। এমন কিছু ঘটলে, এতে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বা পড়তে পারে। আরও বিস্তারিতভাবে বলা যায়, বাণিজ্য সংকট হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। এই অস্থিরতা নানা কারণে হতে পারে। এই কারণগুলি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করা জরুরি।
প্রথমত শুল্কবৃদ্ধি।শুল্কবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি প্রধান বাধা। কারণ এটি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অস্থির ও কঠিন করে তোলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে এসে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই শুল্কযুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই জল কতদূর পর্যন্ত গড়াবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ। এখন বিশ্ব অর্থনীতি এবং বিশ্ব রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয়ত,বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা।যেমন কোনও দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বা অন্য কোনও দেশের পণ্যের প্রবেশাধিকা সীমিত অথবা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বাণিজ্য সংকট তৈরি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আট মাস ধরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে যে ফাটল তৈরি হয়েছে ও সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, তাতে এই দুই দেশের মধ্যে শুধু বাণিজ্য সংকটই নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়েছে।তারই জের ধরে ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে প্রিয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।তারই পাল্টা হিসাবে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার ভারত থেকে সুতা আমদানি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে উভয় দেশে কম-বেশি বাণিজ্য সংকট তৈরি হয়েছে।
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধের কারণে বাণিজ্য সংকট তৈরি হতে পারে। আর বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধ লেগেই রয়েছে। এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। চতুর্থ কারণ হচ্ছে, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা। এ জন্যও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এছাড়াও আরও একাধিক কারণ রয়েছে। তবে এই চারটি কারণকেই বাণিজ্য সংকটের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসাবে গণ্য করা হয়।
বাণিজ্য সংকটের প্রভাব কিন্তু আরও মারাত্মক।এতে ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য বড় ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিনিয়োগে কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। কর্মসংস্থানের সুযোগ মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। দেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেয়। জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায়। এমন আরও বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাণিজ্য সংকটের কারণে।
আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটাই পথ, যে কোনও মূল্যে সম্পর্কের উন্নয়ন।সম্পর্কের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈরিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। যাতে করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করা এবং সুদৃঢ় করা যায়। বাণিজ্য সংকট কাঁটাতে সমস্ত বাধা ও প্রতিবন্ধকতাগুলি আলোচনা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দূর করা। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুটো ক্ষেত্রকেই নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলি দূর করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই কাজগুলি খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বাণিজ্য সংকটও কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্তিশালী করতে বাণিজ্য সংকটের নিরসন জরুরি।এছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই।