নিশানায় আদালত!!

 নিশানায় আদালত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে গোটা দেশ এখন তোলপাড় হচ্ছে।আইনের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে জাতীয় রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে চড়েছে।এই বিরোধের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
ওয়াকফ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে শতাধিক মামলার আবেদন। সেই আবদনের উপর ভিত্তি করে দেশের শীর্ষ আদালতে দুই দফা শুনানিও গ্রহণ করে।আংশিক শুনানি শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সরাসরি এই নতুন আইনে স্থগিতাদেশ না দিলেও, কয়েকটি বিষয়ে ‘নেতিবাচক’ পর্যবেক্ষণ করেছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রের শাসক দল। এই আবহে দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে। বিচারপতিদের এক্তিয়ার নিয়েও গেরুয়া শিবিরের অনেকে তোপ দাগছেন। এই সবের মাঝে এবার সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এই নিয়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। সংবাদ সংস্থাগুলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপি সাংসদ শ্রীদুবে বলেছেন, ‘দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ উসকে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দায়ী। সুপ্রিম কোর্ট তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদি সব কিছুর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, তাহলে সংসদ এবং রাজ্যের বিধানসভাগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেছেন, ‘নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে আপনি কিভাবে নির্দেশনা দিতে পারেন? রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। সংসদ এই দেশের আইন প্রণয়ন করে। আপনি কি সেই সংসদকে নির্দেশ দেবেন? আপনি কিভাবে একটি নতুন আইন তৈরি করছেন?কোন আইনে লেখা আছে যে রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।এর মানে হল আপনি এই দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন।
গোড্ডার চারবারের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘আদালত সংসদের তৈরি আইন বাতিল করে দিচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত নির্দেশ দিচ্ছে।অথচ রাষ্ট্রপতিই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন।আইন তৈরি করা সংসদের কাজ।এই কথা সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আদালতের কাজ হলো সেই আইনের ব্যাখ্যা দেওয়া এবং রক্ষা করা। আপনারা বলে দেবেন সংসদ কি করবে? এখানেই শেষ নয়, ওয়াকফ প্রসঙ্গ তুলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন ওয়াকফ বাই ইউজার’ বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য নথি চাওয়া হচ্ছে না? তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘রামমন্দির মামলায় আদালত দলিলের প্রমাণ চেয়েছিল।কিন্তু এই ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ
করেন।তিনি আদালতের অতীতের কয়েকটি রায় যেমন সমকামিতাকে বৈধ ঘোষণা করা, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬ (এ) ধারা বাতিল করাকে বিচার বিভাগের ‘অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
শুধু সাংসদ নিশিকান্ত দুবেই নন, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ‘বিচারিক হস্তক্ষেপ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকে একটি নির্দিষ্ট সয়মসীমার মধ্যে বিলে স্বাক্ষর করার নির্দেশ দিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উপরাষ্ট্রপতিই বলেছেন, ‘এই দেশ কি এমন এক গণতন্ত্র যেখানে বিচারপতিরা আইনপ্রণেতা, নির্বাহী এবং সুপার পার্লামেন্ট হিসাবেও কাজ করবেন? তিনি রাজ্যসভায় বলেছেন, ‘একটি রায় এসেছে, যেখানে রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? দেশে কী হচ্ছে? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। এর মধ্যে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিস্ফোরক মন্তব্য, স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
বিরোধী দল কংগ্রেস আবার আদালত নিয়ে মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে। সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘ওরা শীর্ষ আদালতকে দুর্বল করতে চাইছে। কংগ্রেস নেতা প্রবীণ আইনজীবী সলমন খুরশিদ এনিয়ে বলেছেন, ‘একজন সাংসদ যদি সুপ্রিম কোর্ট বা কোনও আদালতের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব মিলিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেছেন, সাংসদের মন্তব্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এর সাথে দলের কোন সম্পর্ক নেই। এই ধরণের মন্তব্যের সাথে দল সহমত প্রকাশ করে না এমনকি সমর্থনও করে না।প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে কী তাই?এই জল কতটুকু গড়ায় সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.