৪৭৬.৫৫ কোটি টাকার পুর বাজেট পেশ : মেয়র!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলা পুর নিগম এলাকার উন্নয়নে, মানুষের কল্যাণে ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার ২০২৫-২৬ সালের অর্থবর্ষের জন্য অর্থ বাজেট পেশ করেছে।৪৭৬ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করেছেন মেয়র। এক বছরে এই টাকা খরচ করবে পুর নিগম। বাজেটে রাজস্ব ও মূলধন আয় ধরা হয়েছে ৪৭৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। তাতে বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৭২ লক্ষ ২ হাজার টাকা। গত অর্থবর্ষে মোট বাজেট ধরা হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা।আর রাজস্ব ও মূলধনী আয় ধরা হয়েছিল ৪১৫ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা।বাজেটে ঘাটতি ছিলো ৭৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।বাজেট পেশ করে মেয়র দীপক মজুমদার জানান, গত বছরের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৯ লক্ষ টাকা। এবার বাজেটে ৭২ লক্ষ ২ হাজার টাকা ঘাটতি থাকলেও আগরতলা পুর নিগম তার নিজস্ব আয় ও সরকারী অনুদান প্রাপ্তির মাধ্যমে পূরণ করবে বলে মেয়র জানান। বুধবার বাজেট পেশ করার আগে মেয়র শ্রী মজুমদার মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে উগ্রপন্থীরা বর্বরোচিতভাবে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করায় তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।এই ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত ও কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।পুর বাজেট অধিবেশনে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া হয়। বাজেট পেশ করে মেয়র জানান,পুর নিগম যেসব কাজ করবে তা হলো- বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে শহরের তিনটি স্থান যথা শকুন্তলা রোড, রামনগর ৪ নং রাস্তা, সৎসঙ্গ আশ্রম এলাকায় তিনটি নতুন ফ্লাড পাম্প হাউস, ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। নতুন – ফ্লাড পাম্প ও জল নির্গমণকারী পাইপলাইন বসানো হবে আনুমানিক ৪ কোটি ব্যয়ে। দুর্গা চৌমুহনী বাজার এলাকায় ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১টি অত্যাধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করা হবে। পুর নিগমের বর্ধিত এলাকায় ৫ কোটি অর্থ ব্যয়ে নতুন বৈদ্যুতিক লাইন সম্প্রসারণ, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
নতুন ওয়ার্ড অফিস নির্মাণ বাবদ ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করা হয়েছে। তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের ৩টি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শহরের ৫টি বড় জলাশয় শিব বাড়ি, প্রতাপগড় ঋষি কলোনি, অভয়নগর বাজার, অভয়নগর ভেটিরিনারি হাসপাতাল, রাধানগর পুকুর সৌন্দর্যায়ন ও পুনঃনির্মাণের লক্ষে ১৭ কোটি টাকার অনুমতি ব্যয় ধার্য করা হয়েছে। ত্রিপুরার জল বোর্ড প্রকল্প ব্যতিত শহরে পানীয় জলের সরবরাহের উন্নতি কল্পে পুর নিগম ১১ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। পুর এলাকায় মশক নির্মূলিকরণের লক্ষ্যে ফগিং মেশিন ও কীটনাশক সংগ্রহ বাবদ ৫ গুণ অধিক অর্থ ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব বাজেটে রাখা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইজিএম হাসপাতালের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জেকশন গেট এলাকায় পুর নিগমের নিজস্ব জমিতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ‘আগরতলা সিভিস হসপিটাল’ চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। উক্ত বরাদ্দ অর্থ থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে নানাবিধ নির্মাণ কাজে এবং বাকি ৫ কোটি টাকা বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ ব্যয় করা হবে। প্রস্তাবিত হাসপাতালটিতে ২৪ ঘন্টা ওপিডি পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে এবং পাশাপাশি উপস্থিত রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে।
ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার নামে একটি নতুন প্রকল্পের অধীন রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা ও ভর্তুকি মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করবে আগরতলা পুর এলাকায়। এ বাবদ ২ কোটি টাকা অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। এরজন্য প্রয়োজনীয় জমিও নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার আগরতলা পুর এলাকায় জিবি বাজার, বটতলা বাজার, আখাওড়া গোল চক্কর ও লেক চৌমুহনী বাজারে নতুন পাকা বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগরতলা পুর নিগম এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ১২০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে, যার মাধ্যমে রাস্তা, গলি, ড্রেন, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণের ব্যাপক উদ্যোগ রূপায়ণের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে।
আগরতলা পুর এলাকায় গৃহ নির্মাণের জন্য ত্রিপুরা বিল্ডিং রুলস, ২০১৭কার্যকর আছে। উক্ত আইনের বিধান অনুযায়ী এ যাবৎকাল পর্যন্ত আবেদনকারীকে অন-লাইন পদ্ধতিতে দরখাস্ত জমা দেওয়ার বিধান ছিলো। বর্তমানে এ ব্যবস্থার পরিবর্তে অটো-ডিসি আর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং সমস্ত প্রকৌশলীদেরকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাজেট পেশ করে মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় পূরণ এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে কাজ করে চলেছে। পুর নিগম সুন্দর, স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন, যানজটমুক্ত আগরতলা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে।তাতে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার আহ্বান রাখেন তিনি।
তিনি জানান, বিগত অর্থ বছরগুলিতে আগরতলা শহর ও তার সন্নিহিত এলকাকে সুন্দর করার জন্য অনেক জলাশয় তৈরি করা হয়েছে, নতুন রাস্তা, কালভার্ট, ড্রেন, পাবলিক টয়লেট, পার্ক এবং শ্মশান নির্মাণের পাশাপাশি মিউনিসিপাল মার্কেটের মতো কিছু পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে।প্রসঙ্গত,এবার নিয়ে মেয়র হিসাবে তিনি চতুর্থবার পুর বাজেট পেশ করলেন।