কাঞ্চনপুরে ভুট্টার রেকর্ড উৎপাদন, বাজারে বিক্রি নেই হতাশায় কৃষক!!

 কাঞ্চনপুরে ভুট্টার রেকর্ড উৎপাদন, বাজারে বিক্রি নেই হতাশায় কৃষক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-খরিফ মৌসুমে কাঞ্চনপুর মহকুমার বিভিন্ন কৃষি অঞ্চল জুড়ে ভুট্টা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।আবহাওয়ার অনুকূলতা ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চাষাবাদ হয়েছে বিপুল পরিমাণে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। তবে আশার বিপরীতে হতাশার চিত্র উঠে আসছে বাজারে ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে না। কাঞ্চনপুর মহকুমার সুকনাছড়া, সাতনালা, শাকানশেরমুন এলাকায় পাঁচ হেক্টর জমিতে সরকারী উৎসাহে ভালো বাজার দর পাওয়ার আশায় শতাধিক কৃষক ভুট্টা চাষ করেছে। এই তিনটি অঞ্চল ছাড়াও মহকুমার আরও বেশ কিছু এলাকায় ভুট্টা চাষ করেছে কৃষকরা। আশানুরূপ উৎপাদন হলেও ভুট্টার দাম পাওয়া যাচ্ছে না।ফলে ভুট্টা খেতেই নষ্ট হচ্ছে।ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে কৃষকরা। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।
উৎপাদন রেকর্ড সংখ্যক বাড়লেও দাম পড়তির দিকে। জমিতে ফলন ভালো হলেও বাজারে ভুট্টার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে পড়ে গেছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকা থেকে ৯টাকা কেজি দরে (এক কেজিতে আট নয়টি ভুট্টা অর্থাৎ একেকটা ভুট্টার দাম এক টাকার কম)। অথচ উৎপাদন ব্যয় এবং শ্রমের খরচ বিবেচনায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) হওয়া ছিল অন্তত প্রতি কেজি ৪০ টাকা বা তারও বেশি।সরকারীভাবে নির্ধারিত ক্রয় কেন্দ্রের অভাবে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছে বহিঃরাজ্যের ফড়িয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে। আবার কোন কোন কৃষক দাম না পেয়ে ভুট্টা খেতই কেটে ফেলেছে।
কৃষকরা অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাজারে সরকারী হস্তক্ষেপের অভাবের কারণে ফড়িয়ারা কম দামে ভুট্টা কিনে উচ্চমূল্যে বহিঃরাজ্যে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করছে। ফলত, প্রকৃত উৎপাদকরাই বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য আয়ের সুযোগ থেকে। কৃষকদের দাবি উৎপাদনের মৌসুম শুরুর অনেক আগেই সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল। স্থানীয় সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এখনো অনুপস্থিত।ফলে কৃষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ।
স্থানীয় কৃষক দিলীপ রিয়াং, বিনয় দেবনাথ বলেন ভুট্টা উৎপাদনের জন্য আমরা ঋণ নিয়েছি, দিনরাত শ্রম দিয়েছি। এখন যখন ফলন হয়েছে, তখন ন্যায্য দাম না পেয়ে পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভুট্টা চাষে, মহকুমার কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো।
কাঞ্চনপুর মহকুমা কৃষি আধিকারিক কবীর দেববর্মা জানান বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরকারী ক্রয় নীতির দুর্বলতার কারণেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি কেজি ভুট্টা বিক্রি করে কৃষকদের বীজ কেনার দামও উঠছে না। মহকুমা কৃষি আধিকারিক শ্রীদেববর্মা মনে করেন সরাসরি সরকারীভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করে বিক্রির ব্যবস্থা করলে এবং ভর্তুকি ভিত্তিক পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে লাভবান হতো। এসব ব্যবস্থা কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারে এবং এই প্রত্যন্ত কৃষি মহকুমার অর্থনীতি টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। কাঞ্চনপুর মহকুমার কৃষকরা আজ একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। তারা কৃষি দপ্তরের উৎসাহে ভুট্টা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে ফলে রাজ্যের কৃষকের উন্নয়ন নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.