সোলার জাগরণ চাইলেন রতন, ৭০জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ!!

 সোলার জাগরণ চাইলেন রতন, ৭০জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:-ত্রিপুরার গৃহস্থালি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।একদিকে যেমন বিদ্যুৎ বিল হচ্ছে শূন্য, অন্যদিকে নিজেরাই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে রোজগারের পথ খুলেছে। আর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে চালু হওয়া ‘পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনা’।রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ রবিবার আগরতলায় মহাকরণে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৭০ জন গ্রাহক তাদের ঘরের ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ আয়ও করেছেন। এপ্রিল মাসে এই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে মোট ৩০ হাজার ৯০২ টাকা ৭০ পয়সা জমা পড়েছে।এই প্রকল্পের সুফল তুলে ধরে এ দিন মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ‘যেখানে একদিকে বিদ্যুৎ খরচের বোঝা লাঘব হচ্ছে, অন্যদিকে আয়ও বাড়ছে। রাজ্যের আরও মানুষ যেন এই প্রকল্পে যুক্ত হন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি জানান, রাজ্যের প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং জ্বালানি ক্রমবর্ধমান সংকটের কথা মাথায় রেখেই নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে আগ্রসর হচ্ছে রাজ্য সরকার। মন্ত্রী এ দিন আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড (TSECL)- এর ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু ও এই প্রকল্পে সঙ্গে যুক্ত গোটা দলের প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের ঐকান্তিক উদ্যোগেই সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন থেকে শুরু করে ভর্তুকির প্রক্রিয়া, ব্যাঙ্ক ঋণ, গ্রাহক সচেতনতা ও হেল্প ডেস্ক সেবা সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী মোদি সূচনা করেন পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনা। যার উদ্দেশ্য হল গৃহস্থালি ছাদে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেন্দ্রীয় সরকার কিলোওয়াট পর্যন্ত প্লান্টে ভর্তুকি দিচ্ছে। ১ কিলোওয়াটে ভর্তুকি দিচ্ছে ৩৩ হাজার টাকা, ২ কিলোওয়াটে ৬৬ হাজার টাকা, এবং ৩ কিলোওয়াটে ৮৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই ভর্তুকি ২০২৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে।
রবিবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ মন্ত্রী তথ্য দিয়ে জানান, প্রকল্পের
অধীনে ১ মে ২০২৫ পর্যন্ত রাজ্যে ১৩,৫৩৬ জন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর মধ্যে ২৬৬ জনের বাড়িতে সৌর প্যানেল স্থাপিত হয়েছে, আরও ৬০ জনের স্থাপন প্রক্রিয়া শেষ হলেও তা এখনও পোর্টালে আপডেট হয়নি সরকারী ভর্তুকি পেয়েছেন ১৮৪ জন এবং ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছেন ৯৫ জন, যারা ১ মোট কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার ঋণ গ্রহণ করেছেন। এ দিন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৫০ হাজার পরিবার যদি গড়ে ৩ কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার প্ল্যান্ট বসান, তবে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১৫০ মেগাওয়াট। দিনে গড়ে ৪ ইউনিট উৎপাদনের ভিত্তিতে ৭টাকা ৫৬ পয়সা ইউনিট দরে বছরে ১৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। যদি রাজ্যের ৭.৫৫ লক্ষ ডোমেস্টিক গ্রাহক এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেন, তবে বছরে ৭৮১ কোটি টাকার বিদ্যুৎ রাজ্যেই উৎপাদন সম্ভব। ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-প্রতিটি রাজস্ব বিভাগে নোডাল অফিসার নিয়োগ, শহর ও গ্রামে মেগা ক্যাম্প-হেল্প ডেস্ক এবং হেল্পলাইন নম্বর ৬০৩৩১৩১৬৮১ চালু, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ভিডিও, ফ্লেক্স, ব্যানার ও প্রচারপত্রে প্রচার, ১৬৩ জন কর্মীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ-মিটার রিডার এবং অন্যান্য কর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাডি প্রচার, সহ যারা পিএম সূর্যঘর মুফত বিজয় যোজনায় সুবিধা নিতে চাইবেন তাদের জন্য সহজে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা ইত্যাদি। ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিগমের সাম্প্রতিক উন্নয়ন (২০১৮-২০২৫) এর মধ্যে রয়েছে, ৩১ টি নতুন ৩৩ কেভি সাবস্টেশন, ৬ টি ১৩২ কেভি সাবস্টেশন (১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে), শহরে ৩৭০ কিমি আণ্ডার গ্রাউণ্ড কেবল লাইন টানা, গ্রামে ১২৯০ কিমি কভার্ড কন্ডাক্টর (৬৮৪ কোটি টাকা), মোট ১১,৮৯৬ কিমি এবি কেলে (১৪২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে) ১.৩৬ লক্ষ পরিবারের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ, PM-Janman প্রকল্পে ১১,৬৯২ টি পরিবারের বিদ্যুৎতায়ন এবং ৬ লক্ষ ইলেকট্রনিক মিটার স্থাপনের কাজ চলছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে, রুখিয়া গ্যাস প্ল্যান্টে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (৯৩৫কোটি টাকা ব্যয়ে।গোমতি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও মহারাণী মাইক্রো হাইডেল প্রজেক্টের পুনরুজ্জীবন। তবে রাজ্যে ৩৭০মেগাওয়াটের গ্রীষ্মকালীন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হতে পারে সৌরশক্তি ব্যবস্থাপনাই। পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনা’র মাধ্যমে ত্রিপুরা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভর হচ্ছে না, একই সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন উৎপাদক- ভোক্তা শ্রেণি, যারা নিজেরাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রাজ্য সরকারকে সহায্য করেছেন এবং ব্যক্তিগত আয়ও বৃদ্ধি করেছেন। রাজ্য সরকার সক্রিয় প্রচেষ্টা, বিদ্যুৎমন্ত্রী তনলাল নাথের নেতৃত্বে ও বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসুর -ক্ষ রূপায়ণ সব মিলিয়ে ত্রিপুরা এক নতুন শক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.