দিল্লীতে কৃষি উন্নয়নে জাতীয় সম্মেলন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের জোরালো দাবি উত্থাপন করলেন কৃষিমন্ত্রী!!

 দিল্লীতে কৃষি উন্নয়নে জাতীয় সম্মেলন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের জোরালো দাবি উত্থাপন করলেন কৃষিমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘বিজ্ঞান ও কৃষির
মেলবন্ধনই আগামী দিনের কৃষি উন্নয়নের চাবিকাঠি। কৃষকদের স্বনির্ভর করতে হলে এই পথেই হাঁটতে হবে’
এমন বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল কনফারেন্স অন এগ্রিকালচার ফর দ্য খারিফ ক্যাম্পেইন ২০২৫।কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে ত্রিপুরার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ। রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের আগামীদিনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একাধিক দাবি উত্থাপন করেন মন্ত্রী রতনলাল নাথ। ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষকদের সমস্যাগুলি সরাসরি কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচরে আনতে এই সম্মেলনকে এক কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন শ্রীনাথ। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানান – রাজ্যে চলমান কৃষি প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরাও এই প্রকল্পগুলির সুফল পেতে পারেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যার ফলে কৃষকের ফসলের যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা যেন কেন্দ্রীয় ফসল বিমা যোজনার আওতায় স্থানীয় ভিত্তিতে যুক্ত হয়, সেই দাবিও তিনি তুলে ধরেন।
ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষিপণ্যকে দেশের বৃহত্তর বাজারে পৌঁছে দিতে পরিবহণের দিকটি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই বাস্তবতাকেই সামনে এনে মন্ত্রী রতনলাল নাথ অনুরোধ করেন- দিল্লীগামী ট্রেনে যেন একটি রেফ্রিজারেটেড কম্পার্টমেন্ট বরাদ্দ করার দাবি জানান। যাতে কৃষকদের উৎপাদিত ফল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল অর্থাৎ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাজনক পণ্য সঠিক অবস্থায় বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায়। রাজ্যের কৃষকের পক্ষে এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা।
একবিংশ শতাব্দীর কৃষির উন্নয়নে গবেষণা ও শিক্ষা কতটা প্রয়োজনীয়, তা উপলব্ধি করে মন্ত্রী রতনলাল নাথ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে ত্রিপুরায় একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানান। তার মতে, ‘রাজ্যে কৃষিবিদ্যা, উদ্যানপালন, পশুপালন ও মৎস্য চাষে আধুনিক পদ্ধতি প্রচার ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কৃষি-ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।’ এই জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, ‘ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে কৃষিকে বিজ্ঞানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার। কৃষকের উৎপাদন বাড়াতে হবে, খরচ কমাতে হবে এবং ন্যায্য দাম দিতে হবে।’ তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক কৃষি (ন্যাচারাল ফার্মিং), আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, উন্নততর বীজ প্রজাতি এবং সরকারী প্রকল্পগুলিকে আরও জোরদার করার মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। তিনি আশাবাদী, এই প্রচেষ্টা কৃষকদের স্বনির্ভর করবে, গ্রামগুলিকে উন্নত করবে এবং জাতিকে শক্তিশালী করে তুলবে। এই কর্মসূচিতে আইসিএআর বিজ্ঞানী, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, কৃষি, উদ্যানপালন, পশুপালন ও মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকরা মিলিত বাবে এক কোটির বেশি কৃষকের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবেন। এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য থাকবে, খরিফ মৌসুমে চাষযোগ্য প্রধান ফসলের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারী প্রকল্পগুলির প্রচার, কৃষকদের মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার ব্যবহারে দিশা দেখানো এবং কৃষকদের মতামত গ্রহণ করে ভবিষ্যতের গবেষণাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। এটা ঠিক যে, বিগত কয়েকবছর ধরে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণের নানা স্তরে পরিবর্তনের আভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার পেছনে রয়েছে কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথের সক্রিয় ভূমিকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান হোক বা কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করার প্রচেষ্টা, তার নেতৃত্বে রাজ্য কৃষি বিভাগ একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।এই জাতীয় কনফারেন্সে তার দাবিগুলি রাজ্যের কৃষকদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য এক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।বিশেষত রেফ্রিজারেটেড ট্রেন কামরার দাবি ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ রাজ্য কৃষির মানচিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে উঠতে পারে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবিগুলিকে গুরুত্ব দেয় এবং বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়, তবে ত্রিপুরার কষকরা কেবল আত্মনির্ভরই হবেন না, বরং দেশের কৃষিক্ষেত্রেও একটি অনন্য ষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.