ক্ষতির মুখে রাজ্যের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ীরা
কোনও এক সময় প্রতিটি ঘরের কোণে দেখা যেতো সহজলভ্য প্রাকৃতিক ফুলঝাড়ু । কিন্তু ইদানীংকালে এর অপ্রতুলতায় শুধু দেখা মিলছে কৃত্রিমভাবে তৈরি বাজারজাত প্লাস্টিক ফুলঝাড়ুর । তার একটা কারণ বলা যেতে পারে রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে বা দোকানে প্লাস্টিক ফুলের সহজলভ্যতা । কিন্তু প্রশ্ন , রাজ্যের বিভিন্ন বন জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে সবুজ সোনা বলে আখ্যায়িত উৎপাদিত ফুলঝাড়ু বহিঃরাজ্যেও জনপ্রিয় হলেও কোথায় উধাও হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ঘর থেকে ? জানা যায় , প্রতি বছর মরশুমে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন ফুলঝাড়ু উৎপাদন হয় সারা রাজ্যে । এবং তা শুধু প্রকৃতিতেই নয় , বনবাসী বনাধিকার আইনে পাট্টা প্রাপকেরাও ফুলঝাড়ুর চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হন । জানা যায় এই বছরেই শুধুমাত্র লংতরাইভ্যালির ছাওমনু রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়েছে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন ফুল ঝাড়ু ।
যা প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরে লাভের মুখ দেখেছেন স্থানীয় জুমিয়ারা এবং সারা রাজ্যে ফুলঝাড়ু থেকে বন দপ্তরের রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা । কিন্তু দেখা যাচ্ছে , রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বন দপ্তরের সঙ্গে সংযোগ না হওয়ায় শিলাছড়ি , বনকুল , করবুক , মুঙ্গিয়াকামী , তৈদু , অমরপুর , রইস্যাবাড়ি , তীর্থমুখ , প্রভৃতি ফুলঝাড়ু উৎপাদন রেঞ্জ এলাকা থেকে ঝাড়ু সংগ্রহ করা হয়নি । জানা যায় , বন দপ্তরের অধিগৃহীত ত্রিপুরা বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ডের তুঘলকি নিয়মে অনুমতি পত্রে বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে ব্যবসায়ীদের হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার । অভিযোগ উঠছে কোথাও কোথাও দিতে হচ্ছে ডোনেশন । আবার কোথাও কোথাও নেই স্থানীয় জৈব বৈচিত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান কিন্তু এদিকে চেয়ারম্যান স্বাক্ষরবিহীন সিদ্ধান্তপত্র আবার সেট বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ড মানতে রাজি নয় । আবার এদিকে ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে বা দপ্তর নির্দেশিত ক্ষুদ্র ক্রয় মূল্যের উপর পাঁচ ধরনের মোট আটাশ শতাংশ কর ।
যার জুরি ভারতের কোনও রাজ্যে মেলা ভার । ঠিক এমনি এক ঘটনা উঠে এলো শীলাছড়ি , করবুক , বনকুল থেকে যেখানে ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় চম্পালাল মোদক নামে এক ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী । মরশুমী বন করল সংগ্রহের অভাবে জঙ্গলেই পঁচে যায় বহু লক্ষ টাকার ফুলঝাড়ু ।ঠিক একই চিত্র উঠে শিলাছড়ি, করবুক,বনকুল থেকে যেখানে ম্যনেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না পাওয়ার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় চম্পলাল মোদক নামে এক ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী। মরশুমী বন ফসল সংগ্রহের অভাবে জঙ্গলেই পঁচে যায় বহু লক্ষ টাকার ফুলঝাড়ু। ঠিক একই চিত্র উঠে আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ত্রিপুরা বায়োডাইভারসিটি বোর্ডেরঅনুমতি না পেয়ে জঙ্গলেই পঁচে নষ্ট হচ্ছে বন এলাচি , তোকমা বীজ , ফুলঝাড়ু , ভাইকাং বীজ , জারুল পাতা , বন কচু , বন হলুদ , ছাতির বাঁশ প্রভৃতি সহ বিভিন্ন মূল্যবান বনৌষোধি । বন দপ্তর হারাচ্ছে লক্ষাধিক টাকার বনমাশুল আর পাহাড়ে বসবাসকারী জনজাতিরা হারাতে বসেছে তাদের উপার্জন ।
দেখা যাচ্ছে একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি দ্বারা ত্রিপুরা বন দপ্তর ১৮ এপ্রিল ২০২০ কার্যকরী করে নন টিম্বার ফরেস্ট প্রোডাক্ট পলিসি অব ত্রিপুরা । অভিযোগ উঠছে এই পলিসি তৈরিতে কোনওপ্রকার পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি রাজ্যের ক্ষুদ্রজাত বনজ বিশেষজ্ঞদের এবং জনতার । এতে উল্লেখ্য নেই রাজ্যে উৎপাদিত ক্ষুদ্র প্রজাতির অর্থকরী বনজ ফসল ক্রয়বিক্রয়ে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বা কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র বনজভিত্তিক শিল্প স্থাপনে বন দপ্তরের পরিকল্পনা । অর্থকরী ক্ষুদ্র বনজ চাষ ও সংরক্ষণ , অবলুপ্তপ্রায় ক্ষুদ্র প্রজাতির সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা , বন মাশুল নির্ধারণ এবং বনজ সংগ্রহে অনুমতি প্রদান সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ গেছে এই বন নীতিতে । মজার বিষয় তদন্তানুযায়ী অবলুপ্তপ্রায় গন্ধকী ও মেহেন্দি গাছকে বাদ দিয়ে জলপাই ফলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সংরক্ষণ কর্মসূচিতে । ক্ষুদ্র বনজ সম্পদ রক্ষায় সুষ্ঠুনীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ত্রিপুরা উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান অল ত্রিপুরা মাইনর ফরেস্ট প্রডিউস ট্রেডার্স ইউনিয়নের কর্নধার মিহির বরণ চক্রবর্তী ।