উত্তর-পূর্ব ও অষ্টলক্ষ্মী!!

২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে প্রথম অষ্টলক্ষ্মী’ বলে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন।কেন তিনি উত্তর- পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষ্মী বলেছিলেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রীর মতে, উত্তর-পূর্ব বলতে অনেকেই একটি দিককে বোঝে।আমরা বলি, উত্তর-পূর্ব মানে জৈব অর্থনীতি, বাঁশশিল্প, চাশিল্প, স্কিল, পেট্রোলিয়াম, ক্রীড়া, ইকো ট্যুরিজম এবং জৈব পণ্য। এই আটটি বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সম্ভাবনা নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত দাঁড়িয়ে আছে। যা এক সঙ্গে ভারতের কোথাও নেই। তাই আগামী ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারতকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল হবে আগামীদিনের পাওয়ার সেন্টার। ক্ষমতা ও শক্তির ভরকেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার দিল্লীতে আয়োজিত দুইদিনব্যাপী ‘নর্থ ইস্ট ইনভেস্টর সম্মেলনের উদ্বোধন করে এই কথাগুলি বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, পূর্ব মানেই হলো ক্ষমতায়ন, সক্রিয়তা, শক্তি এবং পরিবর্তন। স্বাধীনতার পর থেকে এই উত্তর-পূর্ব ভারতকে নিছক সীমান্ত হিসাবে বিবৃত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা উত্তরপূর্ব ভারতকে গোটা দেশের কাছে উজ্জ্বলতম করে তোলার জন্য সব থেকে বেশি জোর দিয়েছি। আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তার জন্য সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে পরিকাঠামো এবং সড়ক নির্মাণে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার জন্য সব থেকে বেশি লগ্নি করা হবে উত্তর-পূর্ব ভারতেই। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতি যে উত্তর-পূর্ব ভারতের সার্বিক বিকাশে নতুন গতি আনবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতির পরই সম্মেলনে উপস্থিত দেশের প্রথম সারির ধনীতম শিল্পপতিরা একের পর এক উত্তর-পূর্বে লগ্নি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর মুকেশ আম্বানি যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন আদানি গোষ্ঠীর গৌতম আদানি সহ আরও বেশ কয়েকজন।
সম্মেলনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়নমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বাইছে। আজ এই অঞ্চলে ১৭টি বিমানবন্দর রয়েছে। ২০০০ এরও বেশি বিমান চলাচল করছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রচুর রেল চলাচল করছে। আগামীদিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। যা আজ থেকে পনেরো বছর আগে কেউ কল্পনাও করেনি। সিন্ধিয়া আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আন্তর্জাতিক করিডরে পরিণত হবে। তাই বিনিয়োগকারীদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মেক ইন নর্থ ইস্ট’ এবং মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনের মুখ্য উদ্দেশ্যই হলো, দেশের অষ্টলক্ষ্মী অর্থাৎ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সুযোগের ভূমি হিসাবে তুলে ধরা এবং বৈশ্বিক ও দেশীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। জানা গেছে, বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে পর্যটন ও আতিথেয়তা, কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র, বস্ত্র, তাঁত ও হস্তশিল্প, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি এবং সক্ষম পরিষেবা, অবকাঠামো ও সরবরাহ, জ্বালানি, বিনোদন ও ক্রীড়া।
এদিন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, এক সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছিল বোমা, বন্দুক, অবরোধের ভূমি। এখন মানুষ এই অঞ্চলটির অভাবনীয় অগ্রগতি দেখছেন। সরকার এই অঞ্চলের অগ্রগতি অক্ষুণ্ণ রাখতে বদ্ধপরিকর। বৈচিত্রই হলো এই অঞ্চলটির অন্তর্নিহিত মূল শক্তি। প্রধানমন্ত্রীর মতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল মানে অষ্টলক্ষ্মীর উপস্থিতি। এই অঞ্চলটি এখন সুযোগ ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন অগ্রগতির দিকে পা বাড়িয়েছে। আজ থেকে পনেরো বছর আগের উত্তর-পূর্ব ভারত এবং আজকের উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। আমরা চাই উন্নয়নের গতি যেন আরও বেগবান হয়। তবেই এই ধরনের উদ্যোগ বেশি করে সফল হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রকৃত অর্থেই অষ্টলক্ষ্মী এবং আগামীদিনের পাওয়ার সেন্টার হয়ে উঠবে।