ক্রমশ বেঁকে যাচ্ছে রত্নেশ্বর মন্দির!!

 ক্রমশ বেঁকে যাচ্ছে রত্নেশ্বর মন্দির!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ধর্ম আর রহস্যের মিশেলে গড়ে ওঠা প্রাচীন কাশী। এখানে প্রতিটা ঘাটে মহাদেবের ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। আর সেখানেই নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক অনন্য মন্দির -রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির। যাকে স্থানীয়রা ‘কাশী করবত’ নামেও চেনে। ‘করবত’ শব্দের অর্থই হল হেলে থাকা, আর এই মন্দিরটির বিশেষত্বই হল পিছনের দিকে হেলে থাকা অবস্থা।
মণিকর্ণিকা ঘাটের ঠিক পাশে অবস্থিত এই মন্দিরটির হেলান প্রায় ৯ ডিগ্রি, যা বিশ্বের বিখ্যাত ‘পিসার হেলানো মিনার’-এর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ, বিদেশের মিনার যেমন বিশ্বখ্যাত, এই মন্দিরটি রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে – নিঃশব্দ,অথচ শক্তিশালী।এই মন্দির ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি কাহিনি। একটি কাহিনি থেকে জানা যায়, রাজা মানসিংহের এক ভৃত্য তাঁর মা রত্নাবাঈ-এর নামে এই মন্দির নির্মাণ করেন। গর্ব করে তিনি বলেছিলেন, ‘মায়ের ঋণ শোধ করলাম।’ আর সেই কথাতেই নাকি দেবতার অসন্তোষ জন্মায় এবং মন্দিরটি হেলে পড়ে – যেন ধরিত্রী নিজেই স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘মায়ের ঋণ শোধ হয় না, তা কেবল বহন করা যায়।’আরেকটি কাহিনি বলছে, রত্নাবাঈ নামে এক দাসী, ইন্দোরের রানি অহল্যাবাঈ হোলকারের সেবিকা ছিলেন। নিজের নামে মন্দির নির্মাণ করায় রানির ক্রোধে নাকি অভিশপ্ত হয়ে মন্দিরটি হেলে পড়ে। আশ্চর্যের বিষয়, বর্ষাকাল ও শীতে গঙ্গার জলস্তর বেড়ে গেলে মন্দিরের গর্ভগৃহ সম্পূর্ণ ডুবে যায়। সেই সময় সেখানে পুজোর রীতি পালিত হয় জলে মন্দির ডুবলেও পূজো কিন্তু স্থগিত থাকে না। এ এক নিঃশব্দ আধ্যাত্মিকতা জড়ানো অভিজ্ঞতা।
স্থানীয় মাঝি রজনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘বহু বিদেশি পিসা দেখতে যায়, অথচ আমরা নিজের দেশে এমন মন্দির থাকা সত্ত্বেও তার অস্তিত্ব ভুলে যাই। এটা শুধু স্থাপত্য নয়, এটি বিশ্বাসের প্রতীক।’
ইতিহাসবিদরা বলেন, মন্দিরটি নগরশৈলীতে নির্মিত ও ১৮৬০ সালের পর থেকে হেলতে শুরু করে।এই তথ্য সামনে এনেছে আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটিও। তবে, নির্মাণকাল ও এই হেলার কারণ নিয়ে আজও নিশ্চিত তথ্য ইতিহাসবিদদের কাছে নেই। কিন্তু সে যত কারণই হোক না কেন, রত্নেশ্বর মহাদেব আজও দাঁড়িয়ে –গঙ্গার জলে, জনতার অগোচরে, এক আধ্যাত্মিক ঋণের চিরন্তন স্মারক হয়ে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.