জটিল সমীকরণ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে দিল্লীর কনস্টিটিউশন ক্লাবে বুধবার বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক সারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিনের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আগে থেকেই তৃণমূল নেত্রী বিরোধী শিবিরের ২২ জন নেতাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন । যদিও এই বৈঠকে আম আদমি পার্টি , ওয়াই এস আর কংগ্রেস পার্টি , তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি , আকালি দল এবং ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের বিজেডির প্রতিনিধিরা অংশ নেননি । অরবিন্দ কেজরিওয়াল দল আম আদমি পাটির সঙ্গে মমতার বরাবরের সুসম্পর্ক থাকলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আপ পার্টি অনেকটা দেখেশুনে পা ফেলতে চাইছে সেটা তাদের ভাবভঙ্গি থেকে পরিষ্কার ।
আর সে কারণেই বিরোধীরা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসাবে কার নাম চূড়ান্ত করেন সেটা আগে দেখেশুনে পরখ করেই নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাতে চায় আম আদমি পার্টি । সম্প্রতি দিল্লীর পর পাঞ্জাবেও ক্ষমতা দখল করেছে আপ । শুধু তাই নয় , ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী অন্য রাজ্যেও নিজেদের পায়ের তলায় জমি শক্ত করছে তারা । জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী মুখ হিসাবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের ভূমিকা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ফলে আজকের বিরোধী শিবিরের বৈঠকে আম আদমির পার্টির অনুপস্থিতি বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে অবশ্যই বড় দুঃসংবাদ । তবে আপ দলের অনুপস্থিতি কিংবা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির বৈঠকে উপস্থিতি না থাকা , বিজেডির নবীন পট্টনায়কের আজকের বৈঠক বয়কট সত্ত্বেও বাদবাকি বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ নি : সন্দেহে বিরোধী ঐক্যের জন্য বড় বার্তা । বিশেষ করে কংগ্রেসের মতো দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন দলের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকা ।
তৃণমূলের সঙ্গে সাম্প্রতিককালের দলের দ্বৈরথকে দূরে সরিয়ে কংগ্রেস দল মমতার ডাকা বৈঠকে যাদের প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছে তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ । শুধু তাই নয় , রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রশ্নে মমতার একতরফা বৈঠক ডাকার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেও এদিনের বৈঠকে বামপন্থী দলগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বিরোধীদের জন্য যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক খবর । একইসঙ্গে মমতার বৈঠকে জনতা দল সেকুলারের প্রতিনিধিত্ব , ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের অংশগ্রহণ , মেহবুবা মুফতি , তেজস্বী যাদব , টিআর বালুর মতো নেতাদের প্রতিনিধিত্ব কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । সমাজবাদী পার্টি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে , রাষ্ট্রপতি পদে মমতা যার নামই প্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব করবেন , দল সেটা সমর্থন করবে । মঙ্গলবারই মমতা দিল্লী পৌঁছে সরাসরি এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । জানা যাচ্ছে , বিরোধী শিবিরে সম্মিলিত জোটের প্রশ্নে এনসিপির সম্মতি থাকলেও রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসাবে পাওয়ার নিজে রাজি হতে চাইছেন না ।রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের অনুমান , বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হলেই যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাফল্য আসবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ ।
কারণ সংখ্যার নিরিখে আপাতত বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ খানিকটা হলেও এগিয়ে । এই অবস্থায় বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত প্রার্থী হিসাবে শারদ পাওয়ার আপাতত নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদে তার নাম প্রস্তাব হলেও বিরোধীদের প্রার্থী নিয়ে বিকল্প যার নাম সামনে এসেছে তিনি হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী । যদিও ২০১৭ সালে দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন গান্ধীপৌত্র । সেবার অবশ্য ভেঙ্কাইয়া নাইডুর কাছে হেরে যান গোপালকৃষ্ণ । এই অবস্থায় নতুন করে তাকে রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী দলের সম্মিলিত প্রার্থী করার জন্য রাজনীতির অলিন্দে দৌড়ঝাপ চলছে । আবার তৃতীয় নাম হিসাবে কংগ্রেসের গোলাম নবী আজাদের কথাও বুধবারের মমতার বৈঠকে শোনা গেছে ।
সব মিলিয়ে কনস্টিটিউশন ক্লাবের বৈঠকে আপ , আকালী দল , বিজু জনতা দল , কিংবা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির মতো দলগুলো মমতার বৈঠকে গরহাজির থাকলেও বিরোধী দলের সম্মিলিত ঐক্যের প্রয়াসকে কোনওভাবে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই । কারণ জয় – পরাজয়কে ছাপিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীরা একজোট হলে বিজেপিকে জোরালো বার্তা দেওয়া যাবে । যা কিনা ২০২৪ সালের আগে পদ্ম শিবিরের চিন্তা যেমন বাড়াবে , তেমনি বিগত দিনগুলোতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল সেটা কিন্তু নতুন দিশা পাবে । সেদিক থেকে বুধবারের দিল্লীর বৈঠকে ১৭ দলের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতভাবে এক হয়ে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । তবে বিরোধী ঐক্যের এই বৈঠকে ৫ দলের অনুপস্থিতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের অঙ্ককে যথেষ্ট জটিল করে তুলেছে তা বলাই বাহুল্য ।