উল্কার গতিতে উত্থান, কে এই ঋষি

 উল্কার গতিতে উত্থান, কে এই ঋষি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দলে বিদ্রোহের জেরে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কনজারভেটিভ পার্টির ৪১ জন মন্ত্রী দুই দিনের মধ্যে বরিস জনসনের ওপর চাপ করে পদত্যাগ করেছেন । তবে বরিসের ওপর চাপের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ৫ জুলাই , যখন ব্রিটিশ সরকারের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক পদত্যাগ করেন । আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্রিটশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ ওয়াজিদের পদত্যাগ করেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য সুনক ও সাজিদ ওয়াজিদ ছাড়াও সাইমন হার্ট এবং ব্র্যান্ডন লুইসও মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতেই বরিসের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়ে যায় ।

২০২০ সালে সারা বিশ্বের সঙ্গে গ্রেট ব্রিটেনও একদিকে যেমন করোনার জুজুতে সিঁটিয়েছিল , ঠিক তেমনই তীব্র আর্থিক মন্দা গ্রাস করেছিল দেশটিকে । কার্যত সেই সময় থেকেই ঋষির উত্থান । বরিস সরকারে ঋষির জনপ্রিয়তাকে অনুমান করেই মহামারির সময় প্রায় সমস্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তাকেই সরকারের মুখ হিসাবে ব্যবহার করেছিল । করোনার সময় , তিনি ব্রিটেনকে আর্থিক সংকট থেকে বের করে আনার জন্য জোর দিয়ে ছিলেন । এটা তার পরিশ্রমের ফল যে তার কাজে সকল শ্রেণীর মানুষ খুশি ছিল । করোনার সময় ধ্বংস হওয়া পর্যটন শিল্পকে তিনি ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দিয়েছিলেন ।

কিন্তু লকডাউনের সেই মুহূর্তে বরিসের সঙ্গে ঋষিও বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন । ব্রিটেনের ‘ পার্টিগেট কেলেঙ্কারি ‘ অর্থাৎ লকডাউনের সময় পানীয় হাতে বরিসকে দেখা যায় । সেই পির্টিতে বরিসের সঙ্গেই ছিলেন ঋষিও । তার উত্তাপও পড়েছিল তার ওপর । পার্টিগেট কেলেঙ্কারি মামলায় জরিমানাও হয়েছিল ঋষির । তার বিরুদ্ধে কোভিডবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির নোটিশও জারি করা হয় । উল্লেখ্য , ‘ কোভিড -১৯ প্রোটোকল চলাকালীন , ২০২০ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে একটি মদের পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল । এই পার্টির ছবি এবং কিছু ইমেইল ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি সমগ্র ব্রিটেনে ঝড় ওঠে । বরিসকেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল ।

এই মামলার পর ঋষির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে । প্রায় একই সময়ে স্ত্রী অক্ষতার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছিল । স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটন শিল্পে বিকাশে যে জনপ্রিয়তা তিনি অর্জন করেছিলেন তাতে ভাটা পড়ে যায় ।
অনেক আগে সুনকের পূর্বপুরুষরা পাঞ্জাব থেকে পূর্ব আফ্রিকার চলে যায় । পরে সেখান ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করে। খুব সম্ভবত জীবিকার সন্ধানেই এভাবে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছুটে বেরিয়েছেন ঋষির পূর্ব পুরুষরা । ব্যক্তিগত জীবনে ২০০৯ সালে নারায়ণমূর্তি ও সুধামূর্তির মেয়ে অক্ষতাকে বিয়ে করেন ঋষি । সুনকের বাবা ছিলেন পেশায় চিকিৎসক । আর তার মা ফার্মাসিস্ট । ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে ১২ মে ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন ।

তিনি গ্রেট ব্রিটেনের উইনচেস্টার কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন । এর পরে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন , ও যেখানে তিনি দর্শন ও অর্থনীতিতে স্নাতক হলেন । তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০০ শতাংশ বৃত্তি নিয়ে এমবিএ করেন । ঋষি স্নাতকের পর গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সাথে কাজ করেন এবং পরে হেজ ফান্ড ফার্মের অংশীদার হন । রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই কোম্পানি ব্রিটেনে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগে সাহায্য করত । ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন ঋষি ।

টেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি লোকাল গভর্নমেন্ট ’ – এর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন । বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার গুরুত্ব আরও বাড়ে । এরপর সরাসরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে । বর্তমানে অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টিতেও ঋষি জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন । তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে । এখন কনজারভেটিভ পার্টির ওয়েবসাইটে তাকে ‘ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ‘ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল ।
ইনফোসিসের সহ – প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবীণ ব্যবসায়ী নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষি । ধারায়ণ মূর্তির বড়মেয়ে অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেছেন ঋষি ।

তাদের দুই মেয়ে কৃষ্ণা ও অনুষ্কা । বর্তমানে বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ব্রিটেনের রাজনীতিতে বড় কোনও পটপরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।সেখানে ঋষি সুনকের রাজনৈতিক কেরিয়ার আর উচ্চতায় ওঠার সম্ভাবনাও প্রবল । তবে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দখল যে খুব সহজে ঋষির দখলে আসবে না এটা স্পষ্ট । তার সঙ্গে এখন মূলত লড়াই পাক বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদের ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.