অপসারিত কুমার অলক, সব মহলে খুশির হাওয়া

 অপসারিত কুমার অলক, সব মহলে খুশির হাওয়া
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অবশেষে ঔদ্ধত্যের চরমসীমায় পৌঁছে যাওয়া রাজ্যের মুখ্যসচিব কুমার অলককে অপসারণ করা হলো । তাকে মুখ্যসচিবের পদ থেকে সরিয়ে সিপার্ডে ডিরেক্টর জেনারেল পদে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে । তার জায়গায় মুখ্যসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে
মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব জেকে সিনহাকে । শনিবার দুপুরে রাজ্য প্রশাসন থেকে এই অপসারণের নোটিফিকেশন জারি হতেই মহাকরণ থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এমন কী রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সদস্যাদের মধ্যেও খুশি ছড়িয়ে পড়ে । অনেকের মতে , নয়া মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । আরও আগেই কুমার অলককে মুখ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করে দিলে অন্তত দুই মাসে কিছু কাজ করতে পারতেন ।

কথায় আছে , ‘ পড়ের জন্য খাদ তৈরি করলে সেই খাদে একদিন নিজেকেই পড়তে হয় । এই প্রবাদ বাক্যটি যেন হুবহু কুমার অলকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে গেছে । এই প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে আজ খুব বেশি করে মনে পড়ছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব এলকে গুপ্তার কথা । রাজ্য প্রশাসনে এলকে গুপ্তার মতো সৎ নিষ্ঠাবান এবং স্বনামধন্য আইএএস অফিসার হাতে গোনা । অথচ এই কুমার অলকের চক্রান্তের শিকার হয়ে তাকে সড়তে হয়েছিল মুখ্যসচিবের চেয়ার থেকে কুমার অলকের এই পরিণতি দেখে আজ সম্ভবত সবথেকে খুশি হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব এলকে গুপ্তা । এলকে গুপ্তাকে মুখ্যসচিবের চেয়ার থেকে সরিয়ে ঠিক ওই সিপাৰ্ডেই ডিজি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।

দুঃখে , অপমানে , ক্ষোভে , কাউকে কিছু না বললেও শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন । যার কারণে সেদিন এলকে গুপ্তার মতো সৎ , নিষ্ঠাবান শীর্ষ আমলাকে অপমান সহ্য করতে হয়েছিল দেরিতে হলেও আজ কুমার অলকের ঠিক একই পরিণতি হয়েছে । খুব বেশি পেছনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই । ২০১৮ সরকার পরিবর্তনের পর আচমকাই কুমার অলক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন । সে সাথে প্রশাসনে অনৈতিক ছড়ি ঘোড়াতে থাকেন । কুমার অলকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে প্রশাসনে ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে থাকেন । এক সময় কুমার অলকের সাথে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর মতানৈক্য বাঁধে ।

বিপ্লব দেব কুমার অলককে দিল্লীতে সরিয়ে দেন । কিন্তু রহস্যজনকভাবে এবং পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুনরায় রাজ্যে ফিরে আসেন । এবার একেবারে মুখ্যসচিবের পদে বসে তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করতে থাকেন । এই সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে । মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি মন্ত্রীদের পর্যন্ত ধমকান । এমন অভিযোগও তার বিরুদ্ধে উঠেছে । মুখ্যসচিবের চেয়ারে বসে প্রশাসনে পৃথক লবি তৈরি করা থেকে শুরু করে প্রতিহিংসা এবং চরম আমলাতন্ত্র কায়েম করেন । মন্ত্রীদের কথা , নির্দেশ পর্যন্ত পালন করতেন না । তার বিরুদ্ধে দৈনিক সংবাদেও ধারাবাহিক খবর প্রকাশিত হয়েছে । জেআরবিটির পরীক্ষায় বহি : রাজ্যের যুবক যুবতিদের আবেদন করার বিষয়টি তারই মস্তিষ্কপ্রসূত।

নিচুস্তরের অফিসারদের সাথে দুর্ব্যবহার ছিলো তার স্বভাবসিদ্ধ । পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে জনগণের অর্থে ভিয়েতনাম সফর করে এসেছেন । ব্যাঙ্কার্স বৈঠকে অফিসারদের সাথে দুর্ব্যবহার নিয়েও বহু জলঘোলা হয়েছে । ডা . মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়ে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর পর্যন্ত করিয়ে নেন । পরে তাকে ডেকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসাহা । তারপরও কর্ণপাত করেন নি । সম্প্রতি আবার জনগণের অর্থে দুবাই ভ্রমণের যাবতীয় বন্দোবস্ত করে নিয়েছিলেন । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই ফাইলে অনুমোদন দেননি ।

শুক্রবার মুখ্যসচিব কুমার অলক তার ঔদ্ধত্যের চরমসীমা অতিক্রম করে গেছেন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে তিনি ঊনকোটি চলে যান প্রশাসনিক বৈঠকের নামে সরকারী অর্থ উজার করতে । যতটুকু খবর , রাতে জম্পেশ আয়োজন হয়েছিল । শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে একসাথে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান , কুমার অলককে যেন চাকরি থেকে সাসপেণ্ড করার সুপারিশ করেন মুখ্যমন্ত্রী । জানা গেছে , মুখ্যসচিবের এ ধরনের আচরণে নিজেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা ।

অবশেষে শুক্রবার শপথ নিয়ে শনিবার মহাকরণে গিয়েই চরম সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী । কুমার অলককে এক ঝটকায় সরিয়ে দেন মুখ্যসচিবের দায়িত্ব থেকে । তাকে পাঠিয়ে দেন গুরুত্বহীন সিপার্ডে । মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে শুধু প্রশাসনিক মহলেই নয় , সাধারণ্যের মধ্যেও খুশি পরিলক্ষিত হয় ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.