ওয়েট ব্রীজে রহস্য ত্রুটি ঘিরে চরম ভোগান্তি!!
দৈনিক সংবাদ অনলাইন।। চুরাইবাড়ি পরিবহন দপ্তরের ওয়েট ব্রীজে রহস্যজনক যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যান-চালকরা। রাজ্য পরিবহন দপ্তরের ওয়েট ব্রীজে একেক সময়ে একেক পরিমাপ আসছে। ফলে আর্থিক জরিমানা সহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রাজ্য ও বহিঃ রাজ্যের যান-চালকরা। অভিযোগ, এই ওয়েট ব্রীজের রহস্যজনক যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডিজেল বোঝাই একটি আন্ডার লোড ট্যাংকার ওভার লোডে পরিণত হওয়ায় পরিবহন দপ্তরের কর্মীদের সাথে লরি চালকদের মধ্যে ঝামেলা বাধে। প্রতিবাদে সোমবার সকাল এগারোটা থেকে দুইটা অবধি প্রায় তিন ঘন্টা ওয়েট ব্রিজ বন্ধ করে রাখে লরি চালকরা। এর ফলে শতাধিক লরি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাই বেলা দেড়টা নাগাদ। গুয়াহাটি থেকে NL02K-1988 নম্বরের একটি ডিজেল বোঝাই ট্যাংকার চুরাইবাড়ি গেটে আসার পর তৈরি হয় বিতর্ক । চালক রণজিৎ নাথের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ওই দিন দুপুরে আন্ডার লোড ডিজেল বোঝাই ট্যাংকারটি ওয়েট ব্রিজে ওজন পরিমাপ করতে গেলে দেখা যায় তাতে ১৭ টন ৮০ কেজি ওজন রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই গাড়িটিকে ওভার লোডেড ঘোষণা করে পরিবহন দপ্তরের কর্মীরা ২২ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা দিতে বলেন। লরি চালকের দাবি, লরির ওজন সঠিক আছে। তিনি এই জরিমানা দিতে পারবেন না। লরি চালকের অভিযোগ, সেখানে থাকা দালালরা তার সাথে যোগাযোগ করে জানায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দিলে তারা লরিটি সেখান থেকে ছাড়িয়ে দেবে। কিন্তু চালক তাতেও রাজি হয়নি।
চালক লরির মালিক সহ ধর্মনগর ওয়েল ডিপোর কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানিয়ে লরিটিকে ওয়েট ব্রীজ থেকে নামিয়ে কমপ্লেক্সের ভিতর রেখে বাড়িতে চলে যায়। তিনদিনের মাথায় সোমবার ১৮ জুলাই সকালে লরিটি পুনরায় ওয়েট ব্রিজে তুলে পরিমাপ করলে দেখা যায় তাতে প্রায় ৫০০ কেজি ওজন কম। ফলে গাড়িটি পুনরায় আন্ডার লোড হয়ে যায়। একইভাবে আসাম থেকে আন্ডার লোড অবস্থায় পাথর নিয়ে লরি ওয়েট করে নিয়ে আসলেও ত্রিপুরার পরিবহন দপ্তরের ওয়েট ব্রীজে এসে পরিমাপ করে ওভার লোড হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন বদরুল নামে এক লরি চালক। এদিকে, বিনাদোষে দুই দিন লরি আটকে রাখার কারণে চালকরা দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ধরে ব্রিজ বন্ধ রেখে এর প্রতিবাদ জানায়। স্থায়ী সমস্যার সমাধানের জন্য ধর্মনগরে ভারতীয় মজদুর সংঘের অফিসের খবর পাঠানো হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সভাপতি ও সম্পাদক ছুটে এসে জেলা পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। ডিজেল বোঝাই লরিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে আগামী দুদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধানের জন্য উচ্চ স্তরীয় বৈঠক করে এর স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন জেলা পরিবহন আধিকারিক হেমন্ত দেববর্মা। চালকরা রাজ্য সরকারের নিকট এই সমস্যার তদন্ত করে এবং শীঘ্রই ওয়েট ব্রিজ মেরামত করার পাশাপাশি আরও একটি ওয়েট ব্রিজ চালু করার দাবি জানিয়েছে।
তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, চুরাইবাড়ি ওয়েট ব্রিজে যান্ত্রিক সমস্যা আছে জেনেও এটি সারাইয়ের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ এর পেছন রয়েছে পরিবহন দপ্তর ও দালাল সিন্ডিকেট চক্রের বন্ধুত্বপূর্ণ মেলবন্ধন। এদের উপর রয়েছে স্থানীয় শাসকদলের নেতাদের আশীর্বাদ। তৎকালীন উত্তর ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, বর্তমানে দালাল চক্রের একটা বড় সিন্ডিকেট চুরাইবাড়ি এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। যার ফলে দেখা দিচ্ছে সমস্যা।