মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
ইউক্রেন যুদ্ধে গত পাঁচ মাসে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু
মস্কো : প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। মিসাইলের আঘাতে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা ট্যাঙ্ক ও সাজোয়াঁ গাড়ির ছবি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে এই লড়াইয়ে রক্তাক্ত হয়েছে দুই দেশই। তবে দু’পক্ষই দাবি করছে পরিস্থিতি তাদের হাতে। ফলে সেনা মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান মিলছে না। এহেন সময়ে আমেরিকা দাবি করেছে যে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার রুশ সেনার। আর ইউক্রেনের ১০হাজার। সব মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার সেনা মৃত্যুর খবর প্রথম প্রকাশ্যে আনল আমেরিকা। আহত কমপক্ষে আরও ৪৫ হাজার।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শেষবার মার্চের ২৫ তারিখ সেনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়েছিল মস্কো। তখন জানানো হয়েছিল, যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে ১,৩৫১ রুশ সেনার। বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক বেশি বলেই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। একইভাবে, জুনে কিভ জানিয়েছিল তাদের ২০০ সেনার মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার উদ্বেগ বাড়িয়ে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রাশিয়ার সামরিক লক্ষ্য দোনবাসের চাইতেও বিস্তৃত।’ তিনি আরও জানান, আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলি কিভকে যতদিন দূরপাল্লার অস্ত্র জোগান দেবে ততদিন রাশিয়ার সামরিক লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে। অর্থাৎ, নিজেদের দখলে থাকা ইউক্রেনের জমি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ মাসের যুদ্ধে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে রাশিয়ার। এখনও পর্যন্ত পুতিন বাহিনীর অন্তত ১৫ হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছে। আহত কমপক্ষে আরও ৪৫ হাজার। কলারাডোয় এসপেন সিকিউরিটি ফোরামে বার্নস বলেন, ‘রাশিয়ার থেকে কিছুটা কম হলেও, এই যুদ্ধে বিপুল ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনেরও।’ শুরুর দিকে কিভ দখল করতে গিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে রাশিয়া। তাই এবার তারা দোনবাস অঞ্চল দখলে জোর দিচ্ছে। এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সরাসরি লড়াইয়ে না জড়িয়ে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। আমেরিকার দাবি, সৈন্য সংখ্যা কম থাকলেও ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করছে রাশিয়া। আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। তবে ইউক্রেনে মৃতদের মধ্যে সিংহভাগ সাধারণ নাগরিক। বার্নাস রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘ইউক্রেনের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন; মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য ইউক্রেনের নাগরিকরা যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেছে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। কিন্তু এখনও কিভ দখল করতে পারেনি তারা। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র খুইয়ে গত এপ্রিলে সামরিক অভিযানের প্রথম পর্বে ইতি টানার কথা ঘোষণা করে মস্কো। পাশাপাশি, মারিওপোল ও দোনবাস অঞ্চলে অভিযান তীব্র করে তোলে পুতিনের বাহিনী। ইতিমধ্যে মারিওপোল দখল করে ফেলেছে রুশ ফৌজ। দোনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনের শেষ ঘাঁটি সেভেরদোনেৎস্কও দখল করেছে পুতিন বাহিনী।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে অন্যান্য দেশে গম ও শস্য রপ্তানি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। যা বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তেহরানে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি নিয়ে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য ‘অগ্রগতি’ হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন পুতিন। আমেরিকা যেখানে বিশ্বজুড়ে খাবারের সংকটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে তখন পাল্টা মন্তব্য করেছেন পুতিনও। তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমী দেশগুলির ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল যেকোনো চুক্তির বিশ্বের কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
আমরা ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির পথ সহজ করতে সহযোগিতা করব, কিন্তু তার আগে রাশিয়ার শস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।