আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে এবার সুর চড়াবে রাইসিনা?

 আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে এবার সুর চড়াবে রাইসিনা?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি পদে সোমবার আনুষ্ঠানিক শপথ নেবেন দ্রৌপদী মুর্মু । সংসদের কেন্দ্রীয় হলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না । প্রথাগত ভাবে নতুন রাষ্ট্রপতি ডাক দেবেন ‘ বিবিধের মাঝে ঐক্যের ‘। একুশবার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলে ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেবেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা । স্বাভাবিক ভাবেই জনগণের বিশেষত আদিবাসীদের প্রত্যাশা পুরণে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

সেই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন উপরাষ্ট্রপতি , বর্তমান প্রধানমন্ত্রী , প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী , সংসদের উভয় কক্ষের সাংসদরা , বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী , বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এবং কূটনীতিবিদরা । দ্রৌপদী হবেন ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি । ওড়িশার রায়রাংপুরের এক প্রান্তিক , আদিবাসী পরিবারের ঘর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি রাইসিনা হিলসে ৩৪০ কামরার রাষ্ট্রপতি ভবনের বাসিন্দা , অন্তত আগামী পাঁচ বছরের জন্য । ১৯৫৮ সালে তিনি এক সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ওড়িশার পিছিয়ে পড়া জেলা ময়ূরভঞ্জ । সেখানকার উপরবেদা পঞ্চায়েতের সাতটি গ্রামের একটিতে তার পরিবার থাকতেন ।

উপরবেদা থেকে তিনিই প্রথম মহিলা , যিনি কলেজে পা রেখেছিলেন । পড়েছেন রামাদেবী মহিলা কলেজ । যা এখন ভুবনেশ্বরের রামাদেবী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় । রাজনীতিতে পা রাখার আগে তিনি ময়ূরভঞ্জের রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন । পরে ওড়িশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগে জুনিয়র সহকারী আধিকারিক হিসেবে কাজে যোগ দেন । দ্রৌপদী ১৯৯৭ সালে রায়রাংপুর নগর পঞ্চায়েতের নির্বাচনে জয়লাভ করেন । কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ২০০০ এবং ২০০৪ সালে তিনি দুই মেয়াদে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন । তার মধ্যে ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি বিজেপি জোট সরকারে মন্ত্রী ছিলেন

ওড়িশা সরকারের বাণিজ্য ও পরিবহণ এবং পরবর্তীকালে মৎস ও পশুপালন দফতরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে , তিনি ওড়িশার ৫৮ টি মহকুমায় পরিবহণ অফিস স্থাপনের জন্য বিশেষ কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন । বিজেপির তপশিলী উপজাতি মোর্চার সহ – সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন। সফল রাজনৈতিক জীবন সত্ত্বেও , দ্রৌপদীকে বিভিন্ন সময় নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল । ২০০৯ সালে তিনি ময়ূরভঞ্জ কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । কিন্তু বিজেডি এবং বিজেপি সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে হেরে যান । নির্বাচনী ধাক্কার পাশাপাশি এই সময়ে তার ব্যক্তিগত জীবনেও বড় ধাক্কা লাগে । পরের ছয় বছরে , তিনি তার পরিবারের তিন সদস্যকে হারান

তাদের মধ্যে একজন বড় ছেলে লক্ষ্মণ মুর্মু ২০০৯ সালে মারা যায় । ছোট ছেলে সিপ্পুন মুর্মু ২০১৩ সালে মারা যায়। ২০১৪ সালে মারা যায় তার স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু । এই কঠিন সময়ের পরের বছরই তিনি ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন । ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি রাজ্যপাল থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার দুটি শতাব্দীপ্রাচীন ভূমি আইন পরিবর্তন করে । ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব ( সিএনটি ) আইন ও সাঁওতাল পরগণা প্রজাস্বত্ব ( এসপিটি ) আইনে সংশোধনী পাস করে । যাতে শিল্পে ব্যবহারের জন্য জমি হস্তান্তর সহজ ও নিশ্চিত করা হয় । ওই আইন দুটির বিরুদ্ধে আদিবাসীরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানান ।

তাদের অভিযোগ , সরকারের এই এই পদক্ষেপে জমির ওপর তাদের অধিকার খর্ব হবে । মাত্র সাত মাসের মধ্যে দ্রৌপদী বিলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । সরকারকে বলেছিলেন সংশোধনীগুলো যে কীভাবে উপজাতিদের উপকৃত করবে তার ব্যাখ্যা দিতে । যে দলের তিনি নেত্রী , সেই দলের সরকারের পাস করা বিতর্কিত বিলগুলোকে সম্মতি দিতে অস্বীকার করায় দ্রৌপদী তখন কেবল অন্তর্দেশীয় রাজনীতিতে নয় , আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভেসে গিয়েছিলেন প্রশংসায় । তিনিই ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল , যিনি পুরো মেয়াদ শেষ করেছিলেন । ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার নাম ভেসে উঠেছিল পদ্ম শিবিরে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিহারের রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দের নামে ছাড়পত্র দেয় গেরুয়া শিবির

দ্রৌপদী , একজন সাঁওতাল নেত্রী হিসেবে তার সম্প্রদায়ের জন্য এবং সাধারণ মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন । আদিবাসীদের সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে রাজ্যপাল হিসাবে দ্রৌপদী বলেছিলেন , ‘ যদিও ঝাড়খণ্ড সরকার ( তখন শাসনে বিজেপি ) এবং কেন্দ্র আদিবাসীদের জন্য ব্যাংকিং পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা প্রসারিত করার জন্য কাজ করছে । কিন্তু , তপশিলী জাতি এবং উপজাতিদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ । ‘ এই অভিযোগ করার পাশাপাশি , তিনি আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সাহিত্যের অনুবাদেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন ।

তিনি রাষ্ট্রপতি পদের বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিংহকে পরাজিত করেন ৬৫.৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে । শপথ নেবার আগে দেশের ৭২ বছরের ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রীতি মেনে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পর , তিনি সরাসরি চলে যাবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সাথে সাক্ষাৎ করতে। সেখান থেকে প্রথাগত প্রোটোকল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ঘোড়সওয়ার ও দেহরক্ষী পরিবৃত শোভাযাত্রা সহকারে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে তিনি আসবেন সংসদ ভবনে। শপথ গ্রহণের পর নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী নতুন দিল্লির ১০ নং রাজাজি মার্গে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথকে তার অবসরকালীন বাসভবনে ছাড়তে যাবেন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.