বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো বোমা বানাচ্ছে চিন!
এক কথায় বললে , পারমাণবিক শক্তি ব্যবস্থায় সজ্জিত এক মানবহীন ডুবোজাহাজ । অথচ দামে আহামরি নয় । আদতে এটি বিধ্বংসী এক সমুদ্র বোমা বা টর্পেডো । কল্পনা করুন , এমন একটি টর্পেডো বোমা যা প্রশান্ত মহাসাগরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে এবং যাকে শত্রুপক্ষ সনাক্ত করতেও পারবে না । যে বোমা কাউকে না জানিয়ে , শোরগোল সৃষ্টি না করে নীরবে আমেরিকার রণতরী এবং ডুবোজাহাজকে টার্গেট করবে । শুধু নিশানা করেই ক্ষান্ত হবে না ওই বোমা , নিঃশব্দে শত্রুপক্ষের সাবমেরিনকে মাঝ সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবে ! বোমা নয় , যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল !
যার সামনে কোনও নিস্তার নেই প্রতিপক্ষের প্রবল পরাক্রমী রণতরীর । আমেরিকার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সব সময় চিন্তিত ছিলেন যে চিন হয়তো শেষ পর্যন্ত এমন মারণাস্ত্র তৈরি করবে না । এখন মনে হচ্ছে , মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ওই আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে । চিনা গবেষকরা ইদানীং এমনই এক ধরনের টর্পেডো নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে চলেছেন যা যে কোনও মুহূর্তে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে । আপনি একটি টর্পেডোকে একটি সামুদ্রিক বোমা বলতে পারেন যা সেকেন্ডের মধ্যে জলের নিচে থাকা প্রতিপক্ষের সাবমেরিনকে ধ্বংস করে দিতে পারে ।
যে টর্পেডোর লক্ষ্য থাকবে একটাই – শত্রুপক্ষের সাবমেরিন ধ্বংস করা । সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটি প্রতিবেদন চিনের বৃহত্তম নৌ ঠিকাদারী সংস্থার প্রকাশনা ‘ জার্নাল অফ আনম্যানড আন্ডারসি সিস্টেমস ‘ – এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রকে উদ্ধৃত করে এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে । ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে , চিনা গবেষকরা এমনই একটি অস্ত্রের নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন । এই টর্পেডো একটি নিষ্পত্তিযোগ্য পারমাণবিক চুল্লি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে । এটি ৩৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ( ৩০ নট ) সমুদ্রে বিচরণ করতে সক্ষম । যে কোনও পরমাণু চুল্লি ‘ মারা যাওয়ার ’ আগে ২০০ ঘণ্টা পর্যন্ত সমুদ্রে থাকতে পারে ।
এর পরে এটি সমুদ্রের তলদেশে পতিত হয় । কিন্তু চিন যে টর্পেডো নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে সেটি সমুদ্রেই ব্যাটারি থেকে চার্জ করা যাবে এবং আবার আঘাত করতে সক্ষম হবে । ঠিক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে চিন এমন বিধ্বংসী টর্পেডো তৈরির গবেষণা শুরু করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয় । এই টর্পেডোর ব্যাপারে সমর বিশেষজ্ঞরা যতদূর জানতে পেরেছেন তার ভিত্তিতে তারা বলেছেন এটি একটি রুশ টর্পেডোকে অনুকরণ করে তৈরি করছে চিন । এই সিস্টেমটি অনেকটা রাশিয়ার পসেইন্ডন টর্পেডো ড্রোনের মতো দেখতে। পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম । আবার রুশ টর্পেডোর সঙ্গে চিনের নির্মীয়মাণ টর্পেডোর কিছু পার্থক্য আছে ।
ইনস্টিটিউট অফ অ্যাটমিক এনার্জির সঙ্গে যুক্ত চিনের বিজ্ঞানী এবং গবেষক গুও তার সদ্য প্রকাশিত গবেষণাপত্রে নির্মীয়মাণ টর্পেডো সম্পর্কে অনেক কিছু তথ্য দিয়েছেন । যা থেকে আন্দাজ করা হচ্ছে , রাশিয়ার ওই টর্পেডোর সঙ্গে চিনের রহস্যাবৃত এই বোমার একাধিক ফারাক আছে । রাশিয়ার পোসেইডনকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৬ টি ‘ সুপার অস্ত্রের ‘ একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় । সতর্কর্তা ২০১৯ সালে পুতিন তার বার্ষিক ভাষণে স্বয়ং এই তথ্য দিয়েছিলেন । পুতিন বলেছিলেন , তাদের কোনও আগাম সতর্কতা ছাড়াই শত্রুকে আক্রমণ করে । এটি কেবলমাত্র লক্ষ্যবস্তুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে না , তবে এটি আক্রমণের জায়গাটিকে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের সাহায্যে পুড়িয়ে দেয়
যার ফলে পরে আর জাহাজটিকে মেরামত করা যায় না। অন্যদিকে নিজেদের সম্পর্কে সাউথ চায়না টর্পেডো মর্নিং পোস্ট দৈনিকে বিজ্ঞানী গুও ইঙ্গিত দিয়েছেন , তাদের অস্ত্রের একটি প্রচলিত ওয়ারহেড রয়েছে ( পড়ুন , পারমাণবিক ওয়ারহেড সম্ভব না হওয়ার কোনও কারণ নেই ) । এটি একটি প্রচলিত টর্পেডো টিউবে ফিট করার মতো আকারে যথেষ্ট ছোট । গুও বলেছেন , “ আমাদের টর্পেডোর উচ্চ নমনীয়তা কম খরচের জন্য বাকি সব দেশের টর্পেডোকে টপকে যাবে । পারমাণবিক শক্তি ব্যবস্থায় সজ্জিত এই মানবহীন ডুবোজাহাজটিকে একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে আক্রমণাত্মক সাবমেরিনের মতো একটি প্রচলিত শক্তি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে । ”