সদিচ্ছা ও মুখের কথা

 সদিচ্ছা ও মুখের কথা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্য রাজনীতিতে সঙ্কটপর্ব চলিতেছে । এই সঙ্কট প্রায় সকল দলেই কম বেশি চলিতেছে । আপাতদৃষ্টিতে সঙ্কট শাসক দলের ভেতরে প্রতিভাত হইলেও সুখে নাই কোনও রাজনৈতিক দল । ফলে ঘর সাজাই বার কাজে মনোনিবেশ সকলের । এই ক্ষেত্রে শাসকদলের সঙ্কট তুলনামূলকভাবে কম বলা চলে । বিরোধীদের প্রচার হইলো এই সরকার যেহেতু সাড়ে চার বৎসরে তাহাদের ভিশন ডকুমেন্টের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি পালন করিয়া উঠিতে পারেনাই এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা পূর্বের চাইতে খারাপ হইয়াছে তাই জনগণ আগামী ভোটে শাসক বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করিবে ।

এই বিশ্বাস অধিক দেখা যায় প্রধান বিরোধী সিপিএমের মধ্যে । আবার অপর বিরোধী কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নতুন করিয়া জোয়ার দেখা যাইতেছে । এই জোয়ার সুদীপ রায় বর্মণকে ঘিরিয়া । বলাই বাহুল্য সম্পূর্ণ কংগ্রেস সেই জোয়ারে শামিল হইতে পারিতেছে না ।সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যতটা রহিয়াছে তাহার কিছুমাত্র পুঁজি করিতে পারিতেছে না বিরোধী দলগুলি । আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার বদল যে প্রকারে হইয়া থাকে তাহার আভাসও রাজ্য রাজনীতিতে দেখা যাইতেছে না । সরকার বদল তখনই হয় , যখন বিরোধী ঐক্য চূড়ান্ত হইয়া থাকে । যেমন হইয়াছিল ২০১৮ সালে ত্রিপুরাতেও ।

বিরোধী দল বলিতে এই সময়ে ত্রিপুরায় রহিয়াছে কংগ্রেস , বাম আর মথা । আইপিএফটি ভাঙিয়া রসিয়া পাহাড় এখন মথায় আসিয়া জুটিয়াছে । অপরদিকে বামেরা পাহাড়ে আজও ঢুকিতে পারিতেছে না সকল জনপদে । কিছু কিছু পকেট বাদ দিলে বামেরা পাহাড়ে আজও অনাকাঙ্ক্ষিত , অপাংক্তেয় । আবার কংগ্রেস সকল সময়ের মতন এই সময়েও পাহাড়ে নিজেদের বন্ধু খুঁজিতেছে । শাসক বিজেপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আইপিএফটির সঙ্গে জোট করিয়া ১০ খানা উপজাতি আসন জিতিলেও আজ মথার দবদবায় পাহাড়ে বিজেপি অনেক এলাকাতেই ছিন্নমূল হইয়াছে । লাকাতেই ছিন্নমূল হইয়াছে ।

২০২৩ নির্বাচনের আগে পাহাড় লইয়া রাজনৈতিক দলগুলিকে সেমি ফাইনালে যাইতে হইতেছে । আদালতের নির্দেশে ভিলেজ কমিটির নির্বাচন করাইতে হইবে এই বৎসরের শেষ পর্বে । এই নির্বাচনে শাসকদল বিজেপি , সিপিএম আর মথার অগ্নিপরীক্ষা । এডিসি রহিয়াছে মথার হাতে । দুই বৎসর আগে এডিসির নির্বাচনে বিশাল জয় লইয়া মথার উত্থান ঘটিয়াছিল । সেই উত্থান কিন্তু পাহাড়বাসীদের কল্যাণ করিতে পারেনাই । গ্রামগঞ্জে সরকারী কাজকর্ম , গ্রামবাসীদের দুয়ারে প্রশাসনিক সুযোগ পৌঁছাইয়া দিবার কাজটি তাহারা দুই বৎসরে কিছুই করিতে পারে নাই । ফলে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের সামনে তাহারাও অগ্নিপরীক্ষায় রহিয়াছে ।

আবার বিজেপিকে বুঝাইতে হইবে পাহাড়ে তাহাদের বিধায়কদের এলাকাগুলি অন্তত অক্ষত রহিয়াছে । কিন্তু এই বিষয়টি মোটেও সহজ হইবে না বলিয়াই বুঝা যাইতেছে । একই অবস্থা সিপিএমের ক্ষেত্রেও ঘটিতেছে । সেই দিক হইতে কংগ্রেস এই ভোট লইয়া চাপহীন । তাহারা পাহাড়ে সকল আসনে নিঃশর্তভাবে মথাকেই সমর্থন করিয়া দিতে পারে উপনির্বাচনের সুরমা কেন্দ্রের মতন । অথবা রাজনৈতিক শিষ্টাচারে যদি কংগ্রেসকে ছিটেফোঁটা কয়েক খানা আসন দিয়া দেয় তাহাতেও খুশি থাকিবে ।কংগ্রেসের অভ্যন্তরের দুর্বলতা কাটাইতে আরও অনেক সময় লাগিবে , হয়তো ২০২৩ এর নির্বাচনও গত হইয়া যাইতে পারে ।

এই দলে উপনির্বাচনে সুদীপ রায় বর্মণের জয়ের রেশ রহিয়াছে । এই কোরামিনেই দলকে সংহত করিতে চেষ্টা চলিতেছে । এই চেষ্টা সুদীপ রায় বর্মণের তরফে যতটা হইতেছে ততটা হইতেছে না কংগ্রেসের তরফে । কংগ্রেস আজও তাহার স্বভাবসুলভ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটাইতে পারেনাই । আবার প্রধান বিরোধী দলের ভেতরকার অবস্থাও কিন্তু তাহাদের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার চাম্পাকাম্পা বেড়ার ভেতর হইতে প্রকাশ্যে উঁকি মারিতেছে । দলের সম্পাদক হইয়া জিতেন চৌধুরী যে তৎপরতায় পাহাড়ে সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু করিয়াছিলেন সেই সকল দৌড়ঝাঁপ এখন আর নাই । আবার সমতলে জিতেন চৌধুরী নাই । এই অঞ্চলে রহিয়াছে বিরোধী দলনেতা এবং তাহার পরিষদীয় এর দলের সদস্যরা ।

1556205679-bhardaman_purda_WB

ইহাকে আপাতদৃষ্টিতে দায়িত্ব ভাগাভাগি বলার চেষ্টা হইলেও এই দলে নতুন মুখের কোনও আনাগোনা কিন্তু নাই । এই দলে নতুন মুখ যেমন স্থান পাইতেছে না তেমনি নতুন চোহারা আসিতে আগ্রহ দেখাইতেছে না । এই সঙ্কটের জন্য মাথাব্যথা বাম দলের একেবারেই একান্ত নিজের । কিন্তু তাহারা যে বিজেপি উৎখাতের কথা বলিয়া সাধারণ মানুষকে সতত পথে নামিতে বলিয়া থাকেন তাহা কি কেবলই কথার কথা নয়তো ? ইহা ভাবিয়া বাজাইয়া দেখার লোকও কিন্তু কম নাই । বামেদের , কংগ্রেসের সদিচ্ছা কতটা তাহা যাচাই না করিয়া মানুষ পথে নামিবে না । সাধারণ মানুষ সকল রাজনৈতিক দলের মুখের কথা আর কাজ মিলাইয়া দেখিতেছেন রাজ্যে রাজনৈতিক সঙ্কটের এই পর্বে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.