আশঙ্কার প্রহর গুনছে পৃথিবী

 আশঙ্কার প্রহর গুনছে পৃথিবী

A Long March 5B rocket, carrying China’s Tianhe space station core module, lifts off from the Wenchang Space Launch Center in southern China’s Hainan province, on April 29, 2021.

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চিন থেকে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছে পৃথিবী । মহাকাশ থেকে যে কোনও সময় ধরিত্রীর বুকে আছড়ে পড়তে চলেছে চিনের দৈত্যাকার রকেট । এর আগেও চিনের দৈত্যাকার রকেট পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল । এই নিয়ে দ্বিতীয় বার পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটাতে চলেছে ড্রাগনের দেশ । এবার যে রকেট মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে চলেছে তার ওজন ২১ টন । অর্থাৎ ২১০০০ কিলো । এই রকেট চিন মহাকাশে পাঠিয়েছিল গত ৫ মার্চ । রকেটটির পোশাকি নাম ‘ লং মার্চ ৫ বি ’ । দশ তলা বাড়ির সমান এটি লম্বা । এই মুহূর্তে এই রকেট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে ।

বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে , এটির ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর কোথায় ভেঙে পড়বে । সাধারণত রকেট প্রথম পর্যায়ে সমস্ত জ্বালানি ব্যবহার করার পরে তার খালি অংশটি বের হয়ে যায় এবং উচ্চ গতিতে পৃথিবীতে পড়ে । তারপর বায়ুমণ্ডলে জ্বলতে থাকে । তবে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে প্রবেশের পর এই রকেট কতখানি টিকে থাকবে এবং কোথায় ভাঙবে ও কোথায় পড়বে । মোট কথা এবারের চিনা রকেটও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে চলেছে । এই রকেট বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে । গত বছর ভারত মহাসাগরে অনুরূপ একটি চিনা রকেট মহাকাশ থেকে আছড়ে পড়েছিল ।

সেই রকেটের ধ্বংসাবশেষ পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতি করে । বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন , চিনের দৈত্যাকার রকেট মহাকাশ থেকে এখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আছড়ে পড়তে পারে । বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন , চিনের ওই রকেট পৃথিবীতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই পুরোপুরি পুড়ে যাবে । এটি হঠাৎ ভূপৃষ্ঠে এসে পূর্ণ গতিতে কোনও অজানা স্থানে আছড়ে পড়বে । যদিও ঘনবসতি এলাকায় ওই রকেটের ধ্বংসাবশেষ পড়ার সম্ভাবনা কম । বিশেষজ্ঞরা বলছেন , চিন অকারণে বিশ্বের সামনে বিপদ বাড়িয়ে দিচ্ছে । এই রকেট ছাড়াও চিন গত সপ্তাহে হাইনানের ওয়েনচাং উৎক্ষেপণস্থল থেকে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে ।

ভেন্টিয়ান এক্সপেরিমেন্ট মডিউল সংবলিত একটি নতুন সৌর চালিত ল্যাব নিয়ে রকেটটি বৃহত্তর আকাশে উড়ে যায় । এটি চিনের তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু এখন গত বছরের মে মাসের মতো এবারও পৃথিবীতে বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার প্রশাসক বিল নেলসন চিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের অভিযোগ করেছেন । তিনি বলেছেন , ‘ চিন দায়িত্বের সঙ্গে রকেট উৎক্ষেপণের মানগুলি অনুসরণ করছে না এবং মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে খুব উদাসীন । ‘ এর আগে বিল নেলসন চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিলেন , চিন পৃথিবীতে রকেটের পুনঃপ্রবেশের বিপদ কমাতে পারছে না এবং তাদের মহাকাশ কর্মসূচি স্বচ্ছ নয় ।

বিল নেলসনের বক্তব্য খুব স্পষ্ট । তিনি বলেছেন , এটা পরিষ্কার যে চিন তাদের মহাকাশ ধ্বংসাবশেষের বিষয়ে দায়িত্বশীলতার মাপকাঠি পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে । চিন পাল্টা মহাকাশ কর্মসূচি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নাসার তোলা ‘ দায়িত্বজ্ঞানহীন ’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে । চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে , তাদের ২১ টনের রকেটের কারণে পৃথিবীর ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম । ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার স্পেস সেফটি প্রোগ্রাম অফিসের প্রধান হোলগার ক্র্যাগ স্পেসনিউজকে বলেছেন , ‘ বস্তুর নকশা না জেনে বেঁচে থাকা ভরের পরিমাণ এবং খণ্ডের সংখ্যা নির্ণয় করা সবসময়ই কঠিন , কিন্তু একটি যুক্তিসঙ্গত ‘ নিয়মানুষ্ঠান ‘ হল মূল শুষ্ক ভরের প্রায় ২০-৪০ শতাংশ । ’

হার্ভার্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডওয়েল বলেছেন , এটি ভেঙে যাবে পৃথিবীতে পড়ার আগেই । কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য নিয়ে আমরা নিশ্চিত , ১০০ ফুট লম্বা চিনা রকেটের ধাতব টুকরোগুলির কয়েকশো ঘণ্টায় কয়েকশো কিলোমিটার গতিবেগে মাটিতে আছড়ে পড়বে । ‘ তিনি আরও বলেছেন , ‘ দুর্ভাগ্যবশত আমরা কখন বা কোথায় তার ধাতব টুকরাগুলি আছড়ে পড়বে তা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না । ‘ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে , ২০২০ সালে প্রথম ‘ লং মার্চ ৫ বি ’ পশ্চিম আফ্রিকায় পুনঃপ্রবেশ করেছিল । তার ধ্বংসাবশেষের ফলে ক্ষতি হয়েছিল ঠিকই তবে আইভরি কোস্ট দেশের গ্রামগুলিতে কোনও আঘাত লাগেনি । সব মিলিয়ে এখন বড় প্রশ্ন একটাই তা হল , গোটা ঘটনার ফলে মানুষ কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের নির্যাস হল , যে কেউ আহত হওয়ার ঝুঁকি ন্যূনতম , কিন্তু শূন্য নয় । তার কারণ মূলত পৃথিবীর পৃষ্ঠের অনেকখানি অংশ জল দ্বারা আবৃত ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.