প্রতিশ্রুতি খেলাপ

 প্রতিশ্রুতি খেলাপ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ক্ষমতা দখলই যেন শেষ কথা রাজনীতিকদের জন্য । সব কয়টা রাজনৈতিক দলেরই এই চরিত্র রহিয়াছে সারা দেশে । দেশবাসী যাহাকে ভোট দিতেছেন সিংহভাগ ক্ষেত্রে ওই ভোট প্রার্থীর প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা করিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া দিতেছেন এমন নহে । ওই ভোট প্রার্থীকে ভোট দিতেছেন কারণ তাহার বিপরীতে যিনি রহিয়াছেন তিনি অতীতে মানুষকে হতাশ করিয়াছেন বা বিশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছেন । দিনে দিনে দেশের মানুষ বদ্ধমূল ধারণা লইয়াছেন , দেশের মন্ত্রী মানেই তিনি হইবেন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী । ভোট আসিলে তাঁহারা মরশুমী পাখির মতন ঘরের দুয়ারে আসিয়া জুটিবেন ।

1556205679-bhardaman_purda_WB

মানুষের চোখের জল মুছিয়া দিবেন রুমাল দিয়া , সম্ভবক্ষেত্রে পরিবারের ছোট্ট শিশুটির নাকের সিকনিও মুছাইয়া দিবেন ভোটের নিশ্চয়তা বুঝিলে । এই নেতারাই পাঁচ বছর নিজেকে লইয়া ব্যস্ত থাকিবেন । প্রতিশ্রুত মানুষগুলির সঙ্গে দেখা হইলে মিথ্যা প্রবোধ দিয়া গা বাঁচাইবেন । কিন্তু শেষতক কি বাঁচিতে পারিবেন ? সারা দেশের গণতান্ত্রিক ভোট ব্যবস্থায় জনগণ দিনে দিনে বুঝিতেছেন প্রতিশ্রুতি খেলাপ এখন রাজনৈতিক দলগুলির প্যাশন ফ্যাশন হইয়া গিয়াছে । মানুষকে ঠকাইয়া ভোটে জেতা এখন বুঝি আর দোষের নয় ।শুধু তাই নয় , মানুষ সম্যক জানিয়াছেন , রাজনীতিকদের নৈতিকতা অনেক আগেই ফুরাইয়া গিয়াছে ।

দেখা গিয়াছে দেশের সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যখনই এই ধরনের সঙ্কট দেখা দেয় , বিশ্বসের অভাব দেখা দেয় তখন মানুষের বিবেক ময়দানে অবতীর্ণ হইয়া থাকে আমাদের আদালত। এইবারও তাহার ব্যত্যয় ঘটিল না । ভোটের প্রতিশ্রুতি লইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানিতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট । দলগুলি যখন অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি লইয়া মানুষের কাছে ভোট চাইতে যায় তখন কেন্দ্রীয় সরকার কেন নীরব থাকে এই প্রশ্ন তুলিয়া সর্বোচ্চ আদালত এই ঘটনাটিকে মারাত্মক বলিয়া অভিহিত করিল । জানিতে চাহিয়াছে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি বিলির ক্ষেত্রে অর্থ কমিশনের হস্তক্ষেপ করিবে কি না ?প্রসঙ্গত , এই ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন আদালতকে আগেই জানাইয়া দিয়াছে দলগুলির প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি খেলাপ লইয়া তাহাদের কিছুই করার নাই ।

শীর্ষ আদালত এইবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানিতে চাহিয়াছে , তাহারাও এই ঘটনাকে গুরুতর বলিয়া ভাবিতেছেন কিনা ! আদালতের এই প্রশ্ন যে দেশের মানুষের বিবেকের প্রশ্ন তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি খেলাপকে সঠিক নয় বলা সহজ হইলেও গুরুতর বলা কি সহজ হইবে ? কারণ দেশের সরকার , অর্থাৎ কেন্দ্রের সরকার যাহারা চালাইতেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারও প্রতি বৎসর দুই কোটি মানুষের চাকরি- কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে । অহরহ বলিয়াছেন, তেলের দাম জ্বালানির মূল্য কমাইয়া দেওয়া হইবে ।

দেশের বুদ্ধিমান মানুষ জানিতেন এইগুলি হইবার নয় । সম্ভব নয় । অন্তত তেলের দাম , জ্বালানির মূল্য আজ একটা দেশের পক্ষে বিচ্ছিন্নভাবে কমাইয়া রাখা সম্ভব নহে । তবে বাড়াইয়া রাখা সম্ভব । যাহা করিতেছে আমাদের দেশের সরকার । – আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম থাকিলেও দেশে তেলের দাম কমে না কোনও রাজ্য বা রাজ্যগুচ্ছের নির্বাচন দুয়ারে কড়া না নাড়িলে । অতএব কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে প্রতিশ্রুত কালা টাকা বিদেশ হইতে ফিরাইয়া আনিয়া দেশের সকল নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া যেমন সম্ভব নহে তেমনি এই সকল প্রতিশ্রুতিগুলিকেও গুরুতর বলা সম্ভব নয় । তথাপিও সরকার তো জনগণের সরকার ।

তাই শীর্ষ আদালতের এই প্রশ্নের কোনও না কোনও জবাব তো সরকারকে দিতেই হইবে । সেই জবাব কী হয় উহা দেখিতে শুনিতে অধীর অপেক্ষায় থাকিবে এই দেশের জনগণ ।কারণ এই জবাবের সহিত জুড়িয়া থাকিবে রাজনৈতিক নৈতিকতা , আদর্শ আর দেশের প্রতি নিষ্ঠা । প্রসঙ্গক্রমে এই রাজ্যেও গুচ্ছের প্রতিশ্রুতি দিয়া মানুষের মন ভিজাইয়া ক্ষমতায় আসিয়াছে একটা সরকার । সেই গুচ্ছ প্রতিশ্রুতির পোশাকি নাম হইল ভিশন ডকুমেন্ট । তদান্তীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাতে এই ভিশন ডকুমেন্টের উদ্বোধন হইয়াছিল ।

কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ভাতা বেতনক্রম , বৎসরে ৫০ হাজার বেকারের চাকরি কর্মসংস্থান , সামাজিক ভাতা মাসিক ২০০০ টাকার মতন মনমোহিনী কয়েকশত প্রতিশ্রুতি রহিয়াছে তাহাতে । সেই সকল প্রতিশ্রুতির কিছুমাত্র পূরণ হয় নাই । সরকারের মেয়াদ রহিয়াছে আরও ছয়মাস । এই সময়ে এই সকল দেয় প্রতিশ্রুতি পালন কোনওভাবেই সম্ভব বলিয়া দেখিতেছেন না রাজ্যের মানুষ । এই প্রকার প্রতিশ্রুতি প্রায় সকল রাজ্যে সকল দলের তরফেই দেওয়া রহিয়াছে , প্রতিশ্রুতিদাতা দলগুলি তাহাদের প্রতিশ্রুতি খেলাপ লইয়াই আরও কিছু নূতন প্রতিশ্রুতি দিয়া থাকে মানুষকে , আবার ভোট প্রার্থনা করিয়া থাকে ক্ষমতায় ফিরিবার লোভে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.