বিহারের মিনি সিরিয়াল কিলার, বয়স মাত্র ৮

 বিহারের মিনি সিরিয়াল কিলার, বয়স মাত্র ৮
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ছোটবেলায় সব শিশুই কিছু দুষ্টুমি করে । দুষ্টুমির কারণে বাবা – মা বা বাড়ির অন্য কোনও সদস্যের কাছ থেকে বকাবকি , তিরস্কার এমনকী কিলচড়ও জোটে । শৈশবে অধিকাংশ কোনও না কোনও খেলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে । শিশুটি সেই খেলা খেলে স্বস্তি পায় । পরিবারের বকাবকির সত্ত্বেও শিশুটির মন পড়ে থাকে ওই খেলায় । কিন্তু সেই খেলা যদি হয় ‘ খুন ’ করার ‘ খেলা ’ ! ভেবে দেখুন , সাড়ে সাত বছরের কোনও বাচ্চা যদি খুনের খেলা খেলতে পছন্দ করে এবং সেই খেলা খেলতে না পারলে সে মনমরা হয়ে পড়ে থাকে— তবে সেটা কতটা ভয়াবহ হতে পারে । সত্যি বলতে কী , এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভাবতেও মন সায় দেয় না । সাড়ে সাত বছরের একটি বাচ্চা এমন ভয়ানক ‘ খেলা’য় আসক্ত হতে পারে , ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয় । হ্যাঁ , ২০০৭ সালে বিহারের বেগুসরাই জেলায় এমনই এক ‘ ভয়ঙ্কর ’ শিশুর কথা জানতে পারে পুলিশ । সেই শিশুকে বলা হয় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সাইকো কিলার । জীবনের মাত্র ৭ বছর বয়সেই সেই ছেলে হয়ে উঠেছিল সিরিয়ান কিলার । বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে ট্রেনে কলকাতায় যাওয়ার পথে ১২৭ কিলোমিটার দূরে পড়ে বেগুসাই স্টেশন । সেই স্টেশন থেকে নেমে সোজা বাস পৌঁছে যায় মুসাহারি গ্রাম । এখানে একজন মানুষ দিনমজুরের কাজ করে কায়ক্লেশে তার পরিবারের ভরণপোষণ করতেন । ১৯৯৮ সালে ওই শ্রমিকের একটি ছেলে হয় । তার প্রজন্মের পরিবারে সেটি ছিল প্রথম ছেলে । পরিবারে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে । এই শিশুর জন্মে শুধু মা – বাবাই নয় , পাড়ায় জ্ঞাতি আত্মীয়স্বজনেরাও খুব খুশি হয় । পরিবারের সদস্যরা তার নাম রাখেন অমরদীপ সাদা । তার বয়স যখন মাত্র ২ বছর তখন থেকেই নিখোঁজ হতে শুরু করেন অমরদীপ । ছোট বয়স থেকেই বন্ধুসঙ্গে তার অ্যালার্জি ছিল । একা একা থাকতে ভালবাসত । পরিবার এবং গ্রামের লোকজন বুঝতেন অমরদীপ গ্রামের আর পাঁচটা ছেলের মতো নয় । প্রতিবেশী জ্ঞাতিগুষ্টি মনে করত , অমরদীপ পড়াশোনায় বাকিদের চেয়ে আলাদা হবে । জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে । দেখতে দেখতে অমরদীপের বয়স প্রায় সাড়ে সাত বছর হয়ে যায় । একদিন তার বাবা , কাকা প্রমুখ পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে মজুরির কাজে বেরিয়েছিলেন । সেই সময় বাড়ির বাইরে খেলছিল অমরদীপ । সে দেখে পাড়ায় তার ৮ মাসের মামাতো ভাই অঝোরে কাঁদছে । মা ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন , তাই সেই ছেলেকে চুপ করাতে পারেননি । সেই সন্ধ্যায় অমরদীপের বাবা এবং কাকা কাজ থেকে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণের মধ্যে দেখেন , তাদের বাড়ির পিছনের নালায় ধারে পড়ে আছে ওই ৮ মাসের শিশুর রক্তাক্ত মৃতদেহ । ৮ মাসের ওই দুধের শিশুর মাথা থেকে শুরু করে শরীরের বাকি অংশে দগদগে ক্ষতের স্পষ্ট চিহ্ন । অবলা শিশুকে এত নৃশংস ভাবে কে খুন করতে পারে ভেবে আকূল হয় পরিবার । তাদের চোখ যায় অমরদীপের দিকে । তার শরীরে এমন কিছু চিহ্ন দেখে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অমরদীপের কোনও যোগ রয়েছে । ঘরের সন্তান এমন কাণ্ড করেছে ধরে নিয়ে তার পরিবার পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানায় না । অমরদীপ কিন্তু বাড়িতে স্বাভাবিক আচরণই করতে থাকে । ওই ঘটনার ৬ মাস বাদে অমরদীপের ৬ মাসের নিজের বোনকে বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । তাকেও খুন করা হয় অত্যন্ত নৃশংস ভাবে । বোঝা যায় , ধারালো কিছু দিয়ে তাকে ফালা – ফালা করে মারা হয়েছে । তখনও বাড়ির লোকজন অমরদীপকেই সন্দেহ করে এবং থানায় কোনও অভিযোগ জানায় না । পরিবারেরর আশঙ্কা হয় , ইতিমধ্যে তারা তাদের মেয়েকে হারিয়েছেন , এবার পুলিশের কাছে গেলে হয়তো অমরদীপকেও হারাতে হবে । সেই ঘটনার তিন মাস পরের ঘটনা । গ্রামের এক মহিলা কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে গ্রামের সরকারি স্কুলের বাইরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । মায়ের সঙ্গে ছিল ১ বছরের মেয়ে খুশবু । সে – ও মায়ের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে । ঘুমন্ত মেয়েকে রেখে মা পাশের বাড়িতে কাজে যান । যাওয়ার সময় মা দেখে যান , সেখানে অমরদীপ একা একা খেলছে । ওই মহিলা কাজ শেষ করার কিছুক্ষণ বাদে মেয়ের কাছে এসে দেখেন , খুশবু উধাও ! শুরু হয় মেয়ের খোঁজ । ওই মহিলা অমরদীপকে খুশবু সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সে মুখে কিছু না বলে মুখ টিপে হাসতে থাকে । ওই মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হন । লিখিত শুরু হতবাক অভিযোগে তিনি লেখেন , খুশবু যেখানে ঘুমাচ্ছিল সেখানে অমরদীপ ছাড়া আর কেউ ছিল না , তাই তাকে ডেকে প্রশ্ন করা হলে সে কিছু বলতে পারে । পুলিশ প্রথমে ওই মহিলার এমন অভিযোগ খুব একটা পাত্তা দেয়নি । কিন্তু নাছোড়বান্দা মহিলার অনুরোধের পর অমরদীপকে থানায় ডাকা হয় । অমরদীপ নির্বিকার চিত্তে থানায় আসে । ছোট ছেলে , পুলিশ তাকে বিস্কুট খেতে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে । দুঁদে অফিসারদের হতবাক করে হাসতে হাসতে ৩ টি খুনের কথা স্বীকার করে অমরদীপ । আসলে প্রথমে অমরদীপ কিছু বলতে চাইছিল না । পুলিশকে সে জানায় , বিস্কুট খেতে দিলে সে সব সত্যি কথা উগরে দেবে । দু – চারটে বিস্কুট খেয়ে অমরদীপ হেসে বলল , ‘ আমি ওকে ( খুশবুকে ) কাপড় দিয়ে মেরে মেরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি । ‘ ৮ বছরের এক বালকের মুখ থেকে এমন কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করেনি পুলিশ। সে খুশবুকে কোথায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে জানতে চায় পুলিশ । ওই স্কুলের কাছে আগাছায় ভরা একটি পরিত্যক্ত এলাকায় অমরদীপ পুলিশকে নিয়ে যায় । আগাছা সরানে মাত্রই পুলিশ ও গ্রামবাসীদের চোখ কপালে উঠে যায় । এক বছরের মেয়ে খুশবুর লাশ ! গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানায় , অমরদীপ তার নিজের দুগ্ধপোষ্য বোন ও তার মামাতো ভাইকেও সম্ভবত একই ভাবে খুন করেছে । মাত্র ৮ বছরের অভিযুক্তের সদস্যদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশেরও ধারণা ছিল না । পাটনা থেকে মনোবিদদের একটি দল আসে বেগুসরাই । অমরদীপ সেই দলের সদস্যদের সহাসো বলেছিল , বাচ্চাদের খুন করতে তার ‘ খুব মজা লাগে ’ , সে খুন উপভোগ করে ! সে যে বিরাট অপরাধ করছে , বুঝতে পারত না অমরদীপ । এমন অপরাধের জন্য কতটা কঠিন শাস্তি হতে পারে তার , সে ধারণাও তার ছিল না । মামলার শুনানিতে বিচারক রায় দেন , অমরদীপ তিনটি হত্যা করলেও খুন করা যে অপরাধ , সে ব্যাপারে তার কোনও ধারণাই ছিল , না । সে নেহাত খেলার ছলে জঘন্য অপরাধ করে গিয়েছে । আদালতের নির্দেশে অমরদীপকে রিমান্ড হোমের আলাদা কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয় । জুভেনাইল কোর্টে মাত্র তিন বছরের সাজা হয় । অনেকের আশঙ্কা ছিল , এই শিশুটি সমাজে মিশে গেলে ফের আরও বড় কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়বে । তাই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাকে সমাজের মূলস্রোতের অগোচরে রাখা হয় । সেই সময় প্রতিদিন কাউন্সেলিং করা হতো তাকে । এখন অমরদীপের বয়স ১৮ বছরের কিছু বেশি ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.