রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
ইয়াদাম্মার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোদি থেকে চন্দ্রশেখর
হায়দরাবাদে ভারতীয় জনতা পার্টি জাতীয় কার্যনির্বাহীর বৈঠকে ঢালাও খাওয়া – দাওয়ার আয়োজন হয়েছিল । আর সেই দায়িত্ব বর্তে ছিল ইয়াদাম্মার উপর । নামটা শুনেই আশা করি পাঠকদের বুঝতে অসুবিধা নেই , একজন মহিলার উপর দায়িত্ব ছিল প্রায় হাজার খানেক পদ্ম সমর্থকদের রান্নাবান্নার । মহিলার হাতের জাদুর সেই রান্না খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । বৈঠক শেষে তিনি ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী ইয়াদাম্মাকে । তাকে সমস্ত ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি । ইয়াদাম্মার অতিথি তালিকায় শুধু যে মোদিজি রয়েছেন তা নয় , তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে লোকসভা এবং রাজ্যসভার একাধিক সাংসদরা রয়েছেন । আর তাদের অতিথি সেবার দায়িত্ব তারা তুলে দিয়েছেন ইয়াদাম্মার হাতেই । ভেজ পোলাও থেকে শুরু করে বাটার পনির কিংবা ডাল মাখানি বা ছোলে ভাটরে এসব নিরামিষ পদগুলো যেমন ইয়াদাম্মার হাতে লা – জবাব । তেমনই গানোস মাছের ফ্রাই , কাউন্টি চিকেনের স্যুপ কিংবা মাটন বোটি সর্বক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ইয়াদাম্মা । নিরামিষ কিংবা আমিষ পদে ভিভিআইপি অতিথিদের সেবায় সবসময় তার কদর সবার উপরে । কোন রাজনৈতিক রং নয় , যখন যে শিবির থেকে ডাক আসে তখনই ছুটে যান ইয়াদাম্মা । যেমন হায়দরাবাদে পদ্ম শিবিরের সাংগঠনিক বৈঠকে ডাক পড়েছিল তার , তেমনই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের পার্টিতেও রান্নার দায়িত্ব ছিল আম্মার ও পরেই । খাম্মাম পঙ্গুলেটি থেকে জিতে লোকসভায় সাংসদ হয়েছিলেন শ্রীনিবাস রেড্ডি । সেটা অবশ্য অতীতের ঘটনা । রেড্ডির মেয়ের বিয়েতেও অতিথি সেবার দায়িত্ব বর্তে ছিল ইয়াদাম্মার উপর । ইয়াদাম্মার লড়াইটা শুরু প্রায় দু দশক আগে । হঠাৎ করে তার স্বামী চন্দ্ৰাইয়া মারা যাবার পরেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল । তিন মাসের ছোট্ট শিশু পুত্রকে নিয়ে সেদিন কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে করিমনগরে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল জুটে গিয়েছিল একটা কাজ । বাড়ির পরিচারিকা হিসাবে থাকতে হয়েছিল ইয়াদাম্মাকে । কয়েক মাস সেখানে চাকরি করে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন তিনি । তারপরে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে রান্নার কাজ শুরু করলেন তিনি । বাড়ি – বাড়ি , অফিসে – অফিসে খাবার পৌঁছেতে লাগলেন তিনি । সম্ভবত সেটাই ছিল স্বামীহারা ইয়াদাম্মার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেবার একটা মুহূর্ত । হঠাৎ করেই ইয়াদাম্মার রান্না স্বাদ মুখে উঠল মাস্টারসেফ ভেঙ্কন্নার । একটি পাঁচতারা হোটেলের নামী সেফ ভেঙ্কন্না । এমন লা – জবাব খাবার মুখে তুলতেই তিনি সন্ধান করতে থাকেন রান্নার স্রষ্টাকর্তার । আর তারপরেই ভেঙ্কন্না ইয়াদাম্মাকে তার কেটারিং ব্যবসার সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করলেন । তবে শর্ত একটাই , অফিসের নয় কেটারিং – এর কাজে সার্বক্ষণ থাকতে হবে ইয়াদাম্মাকে । মশলার পরিমাণ দেখা মশলা বাটা , তরকারি কাটা কিংবা মাছ মাংসের ট্রাক রান্নার প্রস্তুতি দায়িত্ব ছিল ইয়াদাম্মার উপর। এখানে টানা প্রায় পাঁচ – সাত বছর কাজ করার পর ধীরে ধীরে রান্নার কাজে হাতপাকাতে লাগলেন তিনি । তারপরে হয়ে উঠলেন মুখ্য রাঁধুনি । বছর আগে ভেঙ্কন্নার কেটারিং ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজেই রান্নার কাজ শুরু করলেন । বিয়েবাড়ি কিংবা অনুষ্ঠান বাড়ির শ’খানেক লোকের খাওয়া – দাওয়ার দায়িত্ব একাকী এক মহিলার হাতে তুলে দিতে অনেকেই সেদিন পিছপা হয়েছিলেন । প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের ফ্ল্যাশ – লাইট পড়েছে ইয়াদাম্মার জীবনের উপর । আর তখনই নিজের অতীতের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ইয়াদাম্মা বললেন , ‘ একটা সময় রান্নার ব্যবসা ছিল পুরুষকেন্দ্রিক কিন্তু মানুষ বুঝতে চায় না আপনার বাড়ির রান্নাটা ও করেন আপনার স্ত্রী কিংবা আপনার মা কিংবা আপনার বোন।মহিলাদের হাতের রান্নার কাটা কিংবা মাছ মাংসের ট্রাক রান্নার স্বাদটাই আলাদা।।। তাই মহিলাদেরকে একটু বিশ্বাস করে অনুষ্ঠান বাড়ির রান্নার দায়িত্ব দিলে ঠকবেন না । ‘ এখন অবশ্য ‘ মাস্টার্স সেফ ‘ ইয়াদাম্মাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না । বছরের বারোটা মাস , ৩৬৫ দিন তিনি রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকেন।ইয়াদাম্মাকে দিয়ে বাড়ির কোন অনুষ্ঠান রান্না করাতে গেলে অন্ততপক্ষে সাত থেকে আট মাস আগে তাকে অগ্রিম দিয়ে বায়না করতে হবে । আগামী বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি উৎসব । আর তার ছয় মাস আগেই ইয়াদাম্মা ব্যস্ত হয়ে যাবেন প্রায় হাজার দুয়েক ভক্তের রান্নার দায়িত্বে । তিনি নিজেই বলেছেন , শিবরাত্রি উপলক্ষে তিন দিনের জন্য তিনি আগস্ট মাসেই বায়না নিয়ে নিয়েছেন ।