শিক্ষকের মারে গুরুতর আহত ছাত্র!!
দৈনিক সংবাদ অনলাইন, ধর্মনগর।। আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়ার অপরাধে শাসনের নামে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রকে লাঠি দিয়ে মেরে পশ্চাদ্দেশ লাল করলো এক শিক্ষক! ঘটনা গত ৮ আগস্ট রাত ৯টায় উত্তর জেলার চুরাইবাড়ি থানাধিন প্রেমতলা এলাকার মনসুর আলী একাডেমীতে। শিক্ষকের নাম ইমাম হুসেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায় মনসুর আলী একাডেমীর হোস্টেলে থাকা ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রের সাথে বাবা মা দেখা করতে এলে ছেলের আবদারে বাবা ছেলেকে নগদ ৫০ টাকা দিয়ে যান। সেই ৫০ টাকার কথা নাবালক ছাত্রটি স্কুলের ইনচার্জ ইমাম হোসেন কে জানিয়েছিল। সে টাকায় ওই ছাত্র আইসক্রিম ও ঠান্ডা পানীয় খেয়েছিল। এটাই নাকি ছাত্রটির অপরাধ। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
গত সোমবার সকালে ছাত্রটি চুরাইবাড়ি স্কুলে সাইন্স সহ এসএসটি পরীক্ষা দিতে যায়। স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার দেওয়া সেই টাকায় আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা পানীয় কিনে খায়। এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিলো। এদিন স্কুল থেকে হোস্টেলে ফেরার পর রাতে মোটা ঠান্ডা নিয়ে হোস্টেলের রুমে আসেন শিক্ষক ইমাম হোসেন। ছাত্রটিকে ডেকে এনে বলেন, আজ স্কুলে গিয়ে তুই কি কি খেয়েছিস? আমি জানি তুই বল তুই কি খেয়েছিস? তখন সে সরল মনে আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা জল কিনে খাওয়ার কথা স্বীকার করে। নাবালকের অভিযোগ, এরপর শিক্ষক তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বলে এবং নড়াচড়া করলে ৫০ টাকার জন্য ৫০টি লাঠির বাড়ি খেতে হবে বলে জানান। অসহায় ছাত্রটি তখন চোখ বুঝে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সময় শিক্ষক তার পশ্চাদ্দেশ সহ বাম হাতে মোটা লাঠি দিয়ে গায়ের জোরে প্রহার করতে থাকে। এর ফলে নাবালক ছাত্রটি চিৎকার করে কান্না শুরু করে।
অমানবিক শিক্ষক প্রহার করতে থাকে প্রায় ৬ থেকে ৭ টি আঘাত করে নাবালকটিকে। যার ফলে নাবালক স্কুল ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড জ্বর অনুভব করতে থাকে। এদিকে, ৯ আগস্ট হোস্টেলে ছেলের সাথে দেখা করতে যান মা- বাবা। ছেলের সাথে দেখা করে তারা সম্পূর্ণ বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর মা- বাবা হোস্টেলের ইনচার্জকে এই বিষয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষক জানায় সে দুষ্টুমি করেছিলো তাই একটু শাসন করা হয়েছে। এরপর মাতা পিতা অসুস্থ ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাবার কথা বলেন। কিন্তু হোস্টেলের ইনচার্জ ওই শিক্ষক তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হননি। বেশ কিছুসময় কথা বলার পর পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হলে সর্তসাপেক্ষে নাবালক ছাত্রকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। অভিযোগ, মঙ্গলবার নিজের ছেলেকে হোস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে আসলেও ছাত্রের কোন খোঁজখবর নেই নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বুধবার এই ঘটনা সামনে আসার পর সাংবাদ মাধ্যমের সামনে বিস্তারিত জানায় নাবালক ছাত্রটি। দেখা যায় শাসনের নামে তার পশ্চাদ্দেশে যেভাবে মারা হয়েছে তাতে তার পশ্চাদ্দেশ সম্পূর্ণ ভাবে লাল হয়ে গেছে। রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। ঠিক মতো বসতে পারছেনা সে। তার বাম হাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে, সংবাদ মধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে বুধবার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের লোকজনদের ফোন মারফৎ কাকুতি মিনতি শুরু করে সমস্যাটি সমাধানের জন্য। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে অন্যান্য শিক্ষকরা এসে ছাত্রের পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের কথা বললেও অভিযুক্ত শিক্ষক পরিবারের সাথে দেখা করেনি। এই ঘটনা জনসমক্ষে আসার পর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবক মহলে ক্ষোভ চরমে উঠে। এই বিষয়ে স্কুলের ইনচার্জ ইমাম হোসেনের সাথে দৈনিক সংবাদ অনলাইনের পক্ষ থেকে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ, এখন সেটাই দেখার।