ইডি,সিবিআই ও দেশবাসী

 ইডি,সিবিআই ও দেশবাসী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

“ আমাদের দেশে যখন ইডি , সিবিআই লইয়া বাজার গরম রহিয়াছে তখন সুদূর আমেরিকায় সেই দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়িতেও সেই দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা এফবিআইয়ের হানার খবর মিলিয়াছে । আমাদের দেশে সিবিআই , ইডির হানাগুলিকে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক খেল বলিয়া ভাবা হয় । এইরকম দাবি জনগণ বিশ্বাসও করিয়া থাকেন । তবে সকল ক্ষেত্রে নহে । যেমন ইদানিং পশ্চিমবঙ্গে যাহা ঘটিতেছে তাহা লইয়া সাধারণ মানুষের অবিশ্বাস কম , তুলনায় কৌতুহল বেশি । এক জনের বান্ধবীর ফ্ল্যাটে টাকার পাহাড়া প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হদিশ পাওয়া যায় , আর অপরজনের নাম জুড়িয়ে গিয়াছে গরু পাচারের মতন মামলায়। আমাদের দেশে এমনিতেই রাজনীতিকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস , ভক্তি কম । তাহাদের প্রতি সমীহ নাই , আছে ভয় । তবে সকল রাজনীতিককে এক পাল্লায় ফেলিয়া পরিস্থিতির সরলীকরণ করাও অনুচিত । যে অর্থে এই সময়ে ইডি পার্থ চ্যাটুজ্জের জেরা করিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হইতেছে সেই রকম ঘটনা নহে সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রে । কংগ্রেসের এই সর্বময় নেত্রীর সম্পর্কে দেশের একটি বিশাল অংশের মানুষের সমীহ রহিয়াছে । সৎ , পরিশীলিত ও সৌজন্যতার প্রতীক হিসাবে দেশের রাজনীতিতে তাহার নাম আসিয়া যায় । এমনিতেই এই সকল উপমা লইয়া রাজনীতি করা ব্যক্তির সংখ্যা দেশে আজ বিরল। স্পষ্টতই তাহার অসুস্থতার পর্যায়ে ইডির উপর্যুপরি জেরা লইয়া সাধারণ মানুষের প্রশ্ন রহিয়াছে । তার দল কংগ্রেস সারা দেশে এই ঘটনার বিরোধিতায় ময়দানে রহিয়াছে । তাহারা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক অভিসন্ধি এবং শাসকের চক্রান্ত বলিতেছেন । সাধারণ মানুষ অনেকেই তাহা বিশ্বাস করেন আবার একটি বড় অংশের দেশবাসী এই ঘটনায় নানান প্রশ্ন তুলিতেছেন । আবার বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের যে সকল মন্ত্রী বিধায়ক জেলে যাইতেছেন তাহাদের বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ হইতে কোনও কথা বলা হইতেছে না । সকল ক্ষেত্রেই হাত ধুইয়া ফেলা হইতেছে । ফলত সাধারণ মানুষও আজ বুঝিয়া গিয়াছেন এই ঘটনাগুলি সত্য বা সত্যের কাছাকাছি রহিয়াছে। মানুষের মুখ ফুটিতেছে । ভয়ের আবহ কাটাইয়া তাহারা শাসক তৃণমূলকে চোর অভীধা দিতেছেন প্রকাশ্যে । আর তৃণমূল সংগঠন এইরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্লোগান দিতেছে , আমরা সকলে চোর নহি । হয়তো তাহারা সঠিক বলিতেছেন , কিন্তু রাজনীতির নিয়ম ভিন্ন । মানুষের ভয় কাটিয়া গেলে রাজনীতিকের কথা আর শুনিতে চাহিবে না । এই হইলো আমাদের দেশের রাজনীতির চরিত্র এবং সাম্প্রতিক হালচাল । ইহার সহিত ট্রাম্পের বাড়ির এফবিআই হানার মিল খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না । ট্রাম্পের বাড়িতে হানার কারণ দেশের নিরাপত্তাজনিত বিষয় লইয়া ছেলেখেলা । অনেক গোপন নথি ট্রাম্প নিজের বাড়িতে রাখিয়াছিলেন , যেগুলি কোনও মতেই সরকারী দপ্তরের বাহিরে থাকার কথা নহে। এই ক্ষেত্রে ট্রাম্পের জবাব , কাগজগুলি মামুলিই ছিল । দেশের কোনও গুরুত্বপূর্ণ বা গোপন কিছু ছিল না । তাই তিনি কোনও অপরাধই করেননি । ট্রাম্পের বাড়িতে এফবিআই হানা লইয়া দেশবাসীর মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়াছে । সোমবার ট্রাম্পের আবাসে হানা দিয়া এফবিআই ১১ খানা অতি গোপনীয় দলিল উদ্ধার করে । অবশ্য এর আগেও জানুয়ারীতে আটক করা হইয়াছে ১৫ খানা বাক্স । দলিলে পূর্ণ এই সকল বাক্স রাখা হইয়াছে দেশের মহফেজখানায় । প্রসঙ্গত , দেশের গোপন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক দলিল দস্তাবেজ নিজের কাছে রাখায় সেই দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে । আর আমাদের দেশের রাজনেতাদের বিরুদ্ধে আরোপ , তাহারা গুপ্তভাবে বা গোপনপথে চুরি করিতেছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.