রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
কোটি টাকার পুজোতে আজও ব্রাত্য প্রতিমার অঙ্গ সাজের শিল্পীরা!
ঘরের ভিতরে টিমটিম করছে ডুমো বাল্ব। মাথার উপরে ক্লান্ত গতিতে পাক খাচ্ছে পাখা। পলেস্তারা খসা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন বছর পঞ্চাশের জয়ন্তী দত্ত । চোখে মুখে রাতজাগার ছাপ । অথচ তার হাত অভ্যস্ত ভঙ্গিতে তৈরি করে চলেছে ডাকের সাজের অন্যতম উপকরণ ‘ খোঁজ । ‘ ম্লান হাসছেন জয়ন্তী , ‘ চোখ দু’টো মাঝেমধ্যেই লেগে আসছে । টানা রাত জাগতে হচ্ছে । অথচ উপায় কী , বলুন ? যেমন করেই হোক , পুজোর কাজটা তো তুলে দিতে হবে । ‘ মেয়ে বাপেরবাড়ি আসছে বলে কথা । মেয়ের গা ভর্তি ঝলমলে গয়না । মাথার মুকুট থেকে গলায় সাত – লহরি হার । পরনে চোখ ধাধানো শাড়ি । জরি , চুমকির সাজে মেয়েকে সাজিয়ে তুলতে এখন বেজায় ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গার পালপাড়া । বিশ্রাম ভুলেছে দেগঙ্গা থানার পালপাড়া । এই পালপাড়া আদতে গয়নার আঁতুড়ঘর । আঁতুড়ঘর । ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের গয়না । ডাকের সাজ , জরি , চুমকি নিয়ে দিন রাত ব্যস্ত আট থেকে আশি । কৃষি প্রধান এলাকা দেগঙ্গা । সেখানকার পালপাড়ায় পঁচিশ বছর আগে শুরু হয় প্রতিমার গয়না তৈরি । আজ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আড়াইশোরও বেশি মানুষের রুজি রোজগার । দুর্গার মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হয়ে ওঠা এই শিল্পীদের হাত ধরেই । এই দেগঙ্গা থেকেই মূলত আসে যে কোন প্রতিমার অস্ত্র এর সজ্জা । আর পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতিমার সাজ তৈরির কাজ ছড়িয়ে পড়েছে ভূতপাড়া , গোয়ালদহ ,গোবরাপোতা , চিত্রশালী , দোগাছি , শক্তিনগর এলাকায় । হাতে গুনে আর কয়েক সপ্তাহ বাকি দুর্গাপুজোর । এ বছর আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মাস ব্যাপী পুজোর অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন । ফলে পুজো উদ্যোক্তা কিংবা বারোয়ারিরা সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই ক্লাবের প্রতিমা নিয়ে যাবার ব্যস্ততা দেখাবেন । নিঃসন্দেহে স্বাভাবিকভাবেই একদিকে যেমন কুমোরপাড়ার উপর চাপ , তেমনি কুমোরপাড়ার অনুসারী শিল্প হিসেবে পরিচিত ঠাকুরের সাজ কিংবা অস্ত্র তৈরি কারখানাতে চলছে রাত জাগা পরিশ্রম । ডাকের সাজের সূক্ষ্ম সব কাজে ভরসা মহিলারাই । মুগ্ধ করা ঝলমলে ডাকের সাজের আড়ালে ওদের পরিশ্রমের কথা জানতে পারে না কেউ । কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজ পৃথিবী বিখ্যাত । সে সাজ আলোয় ঝলমল করে । চোখ ধাঁধিয়ে যায় । অনেকেই মনে করেন , ডাকের সাজ মানুষকে আকর্ষণ করে , ডাকে । সেই কারণে একে ডাকের সাজ বলা হয় । আবার কেউ কেউ মনে করেন , এক সময় ডাকে এই সাজ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হতো বলেই এর নাম ডাকের সাজ । কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত ডাকের সাজের শিল্পী আশিসকুমার বাগচী বললেন , ‘ দুর্গাপুজোর ইতিহাস যদি সাড়ে তিনশো বছরের হয় তাহলে সেই সময় সাজের উপকরণ এখানে পাওয়া যেত না
ডাক যোগে নিয়ে আসা হতো জার্মানি থেকে । জাহাজে করে । সেই কারণে এই সাজের নাম ডাকের সাজ । ‘ কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের হাতে তৈরি ডাকের সাজের চাহিদা বেড়েছে বহু গুণ । সেই কারণে এখন প্রায় সারা বছরই ডাকের সাজ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন শিল্পীরা । আশিসবাবু বলছেন , ‘ মহিলাদের দিয়ে আমরা সাজের উপকরণ তৈরি করাই । কারণ , ওদের কাজ অনেক সূক্ষ্ম হয় । দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত কাজের চাপ থাকে মারাত্মক । সেই কারণে মহিলারাও এখন যোগ দিয়েছেন সেই কাজে । শিল্পীদের কাছ থেকে কাঁচা মাল নিয়ে যান বাড়িতে । সংসার সামলেও সময় বের করে সেই কাজ করেন । কাজের হিসাব মিলিয়ে মেলে মজুরি । জয়ন্তী দত্ত , সঞ্চিতা দাসেরা হলুদ মাখা আঁচলে আঠা মুছতে মুছতে বলছেন , ‘ পুজোর আগে এই কাজটা করি বলেই না সংসারের চাকা গতি পায় । ‘