স্বপ্নদ্রষ্টার জন্মদিন

 স্বপ্নদ্রষ্টার জন্মদিন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আজ এমন একজন রাষ্ট্রনেতার জন্মদিন যার ভাবনা আর মনস্কতার কোনও মূল্যায়ন হয়নি তার জীবদ্দশায় । অথচ তার ভাবনা আর কাজের ভিত্তিটাকে পুঁজি করেই আজকের দিনে মানে তার মৃত্যুর তিন দশক পরের রাজনীতি , নিজেকে অত্যধুনিক বলার চেষ্টা করছে । বর্তমান শাসকের ডিজিটাল ইন্ডিয়া আর ডিবিটি তো রাজীব গান্ধীর আমলেই সূচিত হয়েছিল । হ্যাঁ , আজ রাজীব গান্ধীর জন্মদিন । বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হত ৭৮ বৎসর । গান্ধী পরিবারের থেকে আসা শেষ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্ম ১৯৪৪ সালে , মুম্বাইয়ে । রাজনীতিতে আসতে চাননি । পুরোপুরি মায়ের ইচ্ছায় এই ময়দানে তার অনিচ্ছুক পদচারণা । আর মা সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটে মারা গেলে সেই শূন্য আসনে তাকে আসতে হলো রাজনীতিতে নবীন আর অর্বাচীন পরিচয়ে । তার বিরুদ্ধে বিরোধীরা যতো অকারণ কুৎসা আর সমালোচনা করেছিল তা বুঝি দেশের রাজনীতিতে নজির । তার উত্তর আধুনিক ভাবনাচিন্তাকে বুঝতেই পারেননি সেই সময়ের বিরোধীরা । কম্পিউটার শিক্ষার প্রবর্তন , অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হিসাবে বোফর্স কামান কেনা , নবোদয় শিক্ষা , খেল রত্ন প্রচলন , মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাত থেকে বেনিফিসিয়ারীকে রক্ষায় ডিবিটি চালুর ভাবনাগুলির বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন । কিন্তু সংক্ষিপ্ত জীবনে সেই সবের পূর্ণতা দিয়ে যেতে পারেননি , জনগণের সুফল ভোগ তিনি দেখে যেতে পারেননি । তার মানসিক ভাবনাগুলি যে স্তরে ছিল সেই স্তর ধরতে পারেন না আজকের রাজনেতারাও । তার মৃত্যুর পর তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল । যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীর সাংবাদিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় । সেই সাক্ষাৎকারে রাজীব গান্ধী বলে গেছেন , আমি ভাবি , মুক্তির পথ কোথায় ? শিক্ষার বিস্তারে ? কোন শিক্ষা ? শিক্ষা যদি মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত না হয় , শিক্ষা যদি মানুষকে সৎ হতে না শেখায় , বহিঃরঙ্গ শিক্ষায় দুর্নীতি বাড়বে বই কমবে না । শিক্ষা যদি মানুষকে শুধুই বস্তুতান্ত্রিক হতে শেখায় , নীতি আর দুর্নীতিকে এক করে ফেলে তাহলে আগামী প্রজন্মের ভারত গুণহীন, বিক্ষিপ্ত, ভোগবাদী সমাজে পরিণত হবে। সর্বস্তরে দুর্নীতিই হবে নীতি । অসুস্থ , দুর্বল হবে ভারত । অগৌরবের ভারত । আমি চাই মূল্যবোধ জাগরণী শিক্ষা । সেই শিক্ষার এক রূপরেখা আমি দিলাম । আশ্চর্য , প্রথম বাধা পেলাম পশ্চিমবঙ্গে । আমার নবোদয় শিক্ষা পরিকল্পনায় তারা অন্য কিছুর গন্ধ পেলেন । দুর্ভাগ্য আমার , না দুর্ভাগ্য দেশের ।… ‘ দেশের অগ্রগতি কোন ছকে এগোবে , এই পর্যায়ে তার ভাষা ছিল ভিন্ন । তিনি নেহরুর আদর্শবাদী ভাষায় অভ্যস্ত ছিলেন না , সমাজতন্ত্রী ভাষাও জানা ছিল না । তার ভাষা ছিল বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে আস্থাশীল মুক্তমনা মানুষের ভাষা । এই ভাষা যেমন দেশীয় রাজনীতিকেরা কোনও দিন শুনেননি , তেমনি পশ্চিমী দেশগুলিও ভারতীয় কোনও নেতার মুখ থেকে এর আগে শুনেনি । তিনি বিজ্ঞান , প্রযুক্তি নির্ভর কথা বলতেন বলে তার মধ্যে কোনও নীতি বা আদর্শ কাজ করেনি এমন কথা বলা যাবে না । সেই সময়ে ইরাকের ওপর মার্কিন আগ্রাসনের সাধ্যমত বিরোধিতা করেছেন , যদিও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না তিনি , প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন চন্দ্রশেখর । তাছাড়া বিদেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সময়ও পাননি । এর পরও ইন্দিরা যা করেননি অর্থাৎ পাকিস্তান ও চিন সফর করেছিলেন । সেইদিক থেকে বৈদেশিক নীতিতে তার পূর্বজরা নেহরু ছিলেন আদর্শবাদী , ইন্দিরা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী , আর রাজীব ছিলেন বাস্তববাদী । তবে এখনকার মতন অন্ধ সুবিধাবাদী নন । আর তিনজনের মধ্যে তিনি ছিলেন এক মুক্তমনের অধিকারী । তার এই মনোভাব ভারতকে কোনও শীর্ষে নিয়ে যেত তা আর দেখা হলো না । আজ এই কর্মবীরের ৭৮ তম জন্মদিনে এই হোক আমাদের ভাবনা ।

—–_শ্রেয়সী লস্কর

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.