আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদর কমছে নিজস্ব ঐতিহ্যের!!!

 আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদর কমছে নিজস্ব ঐতিহ্যের!!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধিঃ অমরপুরঃ রাজ্যের জনজাতি রমনীরা আজও তাদের ঐতিহ্যবাহী হাতে বুনা পাছড়া পরিধান করতেই ভালোবাসেন এবং স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। গ্রাম পাহাড়ের পর্বত দুহিতারা এখনো তাদের নিজেদের তৈরি পাছড়া পরিধান করেই দিন অতিবাহিত করেন। পাহাড়ের একটা ক্ষুদ্র অংশের জনজাতি রমনীরা হাটে বাজারে আসার ক্ষেত্রে শাড়ি কিংবা অন্য পোষাক পরিধান করলেও অধিকাংশ পর্বত দুহিতারা বাড়ি ঘরে আজও পাছড়া ও রিসা পরিধান করেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। 
পাহাড়াঞ্চলের জনজাতি রমনীরা সাংসারিক বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ফাঁকে পাছড়া তৈরী করে থাকেন। শুধুমাত্র পাছড়াই নয় বিছানার চাদর,রিসা কিংবা আমরা যাকে উত্তরীয় বলি সেসব বিভিন্ন তাঁত বস্ত্র তৈরীতে পুরোপুরি সিদ্ধ হস্ত পাহাড়াঞ্চলের পর্বত দুহিতারা।

জনজাতিদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের রমনীরা আজও তাদের প্রধান পরিধেয় বস্ত্র হিসাবে পাছড়া এবং রিসাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আজও বায়োবৃদ্ধ জনজাতি রমনীরা পাছড়া ও রিসা পরিধান করে সুসজ্জিত হয়েই হাটে বাজারে,অফিসে আদালতে স্বাচ্ছন্দেই আসা যাওয়া করে থাকেন। তবে ব্যতিক্রম হল বর্তমান প্রজন্মের কিশোরী ও যুবতীদের একটা অংশ। আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সাথে ওইসব জনজাতি কিশোরী ও যুবতীদের আধুনিক পোষাক পরিচ্ছদের প্রতি ঝোঁক অনেকটাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে জনজাতি রমনীদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পাছড়া ও রিসার ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।একটা সময় রাজ্যের রিয়াং সম্প্রদায়ের জনজাতি রমনীরা গলায়, কানে,নাকে পয়সার তৈরী মালা সহ রুপোর তৈরী বিভিন্ন অলঙ্কার এবং রং বেরংয়ের মালা পরিধান করতেন। যা বর্তমান সময়ে প্রায় অবলুপ্তির পথে। যদিও এরজন্য বর্তমান সময়ের আর্থ সামাজিক অবস্থানকেই দায়ি বলে মনে করেন জনজাতিদের বিদগ্ধ মহল।

তবে আসার কথা হল জনজাতি রমনীদের হাতে তৈরী পাছড়া, রিসা তথা উত্তরীয় এবং বিভিন্ন ধরনের চাদরের চাহিদার এবং কদর কিন্ত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। রাজ্যের জনজাতি রমনীদের তৈরী রিসা বর্তমান সময়ে দেশে তো বটেই বিদেশেও সমাদৃত। তবে জনজাতিদের ওই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলাকে সরকারের তরফে যে পরিমাণ উৎসাহ এবং সহযোগিতা করা প্রয়োজন তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে জনজাতি বিদগ্ধ মহলের অভিমত। 
অমরপুর মহকুমার বিভিন্ন পাহাড়াঞ্চলে আজও জনজাতি রমনীরা সাংসারিক কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে পাছড়া,রিসা,চাদর সহ নিজেদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র ইত্যাদি তৈরী করে থাকেন। মহকুমার প্রত্যন্তের লালগিড়ি ভিলেজের এক বাড়িতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করা গেল ওই বাড়ির পর্বত দুহিতা লক্ষী রানী জমাতিয়া নিজের ব্যবহারের জন্য পাছড়া বুনছেন। তিনি জানান প্রতিটি পাছড়ায় ৭০০গ্রাম সুতার প্রয়োজন হয়। আর প্রতিটি পূর্নঅয়ব পরিধেয় পাছড়া বুনতে ছয় থেকে সাতদিন লেগে যায়। আর একটি ডিজাইনিং করা পাছড়া বুনতে সবমিলিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ পরে। রিসা বুনতে সুতো এবং সময় দুইটিই কম লাগে। ডিজাইন এবং দৈর্ঘ্য প্রস্হের উপর নির্ভর করে এক একটি রিসা বুনতে দেড়শো থেকে শুরু করে চারশো,পাঁচশো টাকা পর্যন্ত খরচ পরে যায়। বিছানার চাদর সহ বিভিন্ন নক্সা করা ডিজাইনিং চাদর বুনতেও খরচ এবং সময় দুটোই বেশী লাগে। একটা সময় সরকারী ভাবে জনজাতি রমনীদের পরিধেয় পাছড়া ইত্যাদি বুননের জন্য বিনামূল্যে সুতো প্রদান করা হতো। এমনকি ভোটের প্রাক্কালে দাদন হিসাবেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে পাছড়া বুনার সুতো দেওয়ার অভিযোগ উঠতো।  কিন্তু বর্তমানে জনজাতি রমনীদের আর সরকারী ভাবে সুতো প্রদান করা হয় না বলে পাহাড়াঞ্চলের জনজাতি রমনীদের অভিযোগ। ফলে পাহাড়াঞ্চলের জনজাতি রমনীরা বাজার থেকে চড়া মূল্যে সুতো ক্রয় করেই নিজেদের পরিধেয় পাছড়া,রিসা ইত্যাদি বুনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর নব প্রজন্মের কাছে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পরিধেয় বস্ত্র পাছড়া,রিসা ইত্যাদি পরিধানে অনিহার কারণে কদর কমছে এই ঐতিহ্যবাহী কুঠির শিল্পের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.