প্রথমবার ত্রিপুরা সফরে এসে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেলেন নাড্ডা !

 প্রথমবার ত্রিপুরা সফরে এসে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেলেন নাড্ডা !
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত সোমবার খুমুলুঙে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সমাবেশে লোক সমাগমের করুণ অবস্থা দেখে গোটা রাজ্যজুড়েই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে । শুধু তাই নয় , বিজেপি শাসিত একটি রাজ্যে প্রথমবারের মতো দুই দিনের সফরে এসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা একরাশ হতাশা এবং রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেছেন বলে খবর । বিশেষ করে খুমুলুঙে জনসভায় লোক সমাগমের হাল দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে , উপরে উপরে সব ঠিক আছে এবং ঝা চকচকে দেখালেও , দলের তৃণমূল স্তরে সংগঠনের হাল যে বেহাল বিশেষ করে দলের জনজাতি সংগঠনের ভিতটাই যে নড়বড়ে হয়ে গেছে , তা তিনি নিজের চোখেই দেখে গেছেন ।

রাজনৈতিক মহল পুরো বিষয়টিকে অন্য চোখে দেখছেন । তাদের মতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের যিনি সভাপতি , যিনি এতবড় একটি দল পরিচালনা করেন এবং সে দল দেশের ও দেশের একাধিক রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে তার মতো একজন শীর্ষস্তরের নেতার কাছে পুরো বিষয়টি অপমানজনক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল । খুমুলুঙে জনসভা শেষ না হতেই , খুমুলুঙে নাড্ডার সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে । প্রশ্ন উঠে , এটা কি দলের সার্বিক সিদ্ধান্ত ? নাকি বিশেষ কোনও দলীয় ক্ষমতাবানের সিদ্ধান্তকে মোড়কে সীলমোহন দেওয়া হয়েছে ? নাকি এর পেছনে বিশেষ কয়েকজনের অন্য কোনও বদ উদ্দেশ্য কাজ করেছে ?

প্রশ্ন উঠেছে , কোথায় গেল দলের জনজাতি মোর্চার সংগঠন ? ডজন ডজন জনজাতি নেতা – নেত্রী , মন্ত্রী , বিধায়ক এমডিসি , এমপি এরা কোথায় ? কি তাদের ভূমিকা ? রাজ্য বিধানসভায় বর্তমানে বিজেপির দশজন জনজাতি বিধায়ক আছেন । স্ব – শাসিত জেলা পরিষদে বিজেপি দলের দশজন এমডিসির মধ্যে একজন কয়েকদিন আগে মথায় যোগ দিয়েছেন । তাকে বাদ দিলেও নয়জন এমডিসি । সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা , দলের সহ সভাপতি পাতালকন্যা জমাতিয়া । জনজাতি অন্যান্য নেতা – নেত্রীদের কথা না হয় বাদ দেওয়া গেল । কিন্তু দলের বিধায়ক , এমপি , এমডিসিরা যদি প্রত্যেকে কম করেও এক হাজার করে তাদের নিজস্ব এলাকার জনজাতি ভোটারদের নাড্ডার সভায় নিয়ে আসতেন , তাহলেও তো সংখ্যাটা নেহাত কম হয় না ।

কুড়ি থেকে বাইশ হাজার লোক সমাগম হতো । তাহলে তো ধরেই নিতে হয় , শাসক দলের জনজাতি বিধায়ক , এমপি , এমডিসি’দের এই ন্যূনতম ক্ষমতাও নেই । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে , তাহলে কিসের জোরে এবং কোনও তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে রাজ্যে এনে খুমুলুঙে জনসভা করানো হলো ? কার এবং কাদের নাক – কান কাটার জন্য এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি প্রদেশ নেতৃত্ব ? এই দায় কি মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা নিজেও এড়াতে পারেন ? কারণ , দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার প্রথম বারের মতো রাজ্য সফর ঠিক হওয়া থেকে শুরু করে , নাড্ডার সফর উপলক্ষে যা যা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে , তা তিনি প্রদেশ সভাপতি পদে থাকাকালীন নেওয়া হয়েছে । খুমুলুঙে নাড্ডার সভাকে সফল করার জন্য যে কুড়ি জনের সাব কমিটি করা হয়েছে , সেই কমিটির কনভেনার ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ ।

তাছাড়া জে পি নাড্ডার দুই দিনের সফর সূচিকে সার্বিক সফল করার জন্য প্রাক্তন সভাপতি ডা . মানিক সাহার নেতৃত্বে এগারোজনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল । যারা পুরো বিষয় দেখভাল করবে । সবই হলো , কিন্তু আসল কাজটি রূপায়ণে তারা কতটা সফল হয়েছে , তা গোটা রাজ্যবাসী এবং দেশবাসী দেখেছে । হাতে আর মাত্র ছয় মাস । এই সময়ের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । গত চার , সাড়ে চার বছরে জনজাতি সংগঠনের ভিত কোন্ জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে , তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে নাড্ডার সভাকে কেন্দ্র করে । সমতলেও যে খুব একটা ভালো অবস্থা রয়েছে , এমন ভাবার কোনও কারণ নেই । এখনও সময় আছে , শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে না পারলে নৌকা ডুবতে বেশি সময় লাগবে না । ফলে দায় কিন্তু সকলের ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.