বিরোধী ঐক্যে শান

 বিরোধী ঐক্যে শান
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এখন আর রাখঢাকের দিন নেই । এক এক করে ২০২৪ – এর মহাসংগ্রামের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দুই পক্ষই । আর এরই আনুষ্ঠানিক শুরুয়াত হিসেবে সোমবার তিনদিনের জন্য দিল্লী যাচ্ছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার । লক্ষ্য একটাই , আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে শক্তিশালী একটি বিরোধী ঐক্য দেশের সামনে তুলে ধরা । আর এই লক্ষ্যের কথা সাফ ঘোষণা করে শনিবার পাটলিপুত্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জনতা দল ইউনাইটেডের কার্যকরী কমিটির বৈঠক । এই বৈঠকেই মোটামুটি নীতীশ স্থির করেছেন , দেশব্যাপী বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে এখন থেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী হবেন ।

আর দেশব্যাপী বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়ার পাশাপাশি গোটা দেশের মানুষের কাছে একটা বার্তা ছড়িয়ে দেবে জেডিইউ । সেটা হল দেশে শুধু এখন গণতন্ত্রই বিপন্ন নয় , গোটা দেশেই এখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা । আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিজেপিকে রুখতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ নীতীশের ঘোষণা ২০২৪ সালে সবগুলি বিরোধী দল যদি দেশে এক ছাতার তলায় চলে আসে , তবে বিজেপির আসন লোকসভায় ৫০ – এ নেমে আসবে । মাত্র ক’দিন আগেই বিহারে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নীতীশ কুমার আরজেডি এবং কংগ্রেসকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন ।

বিহারে বিজেপিকে কার্যত একঘরে করে দিয়ে অনেকগুলো বার্তা দিতে চেয়েছিলেন নীতীশ । আগামীদিনে শুধু বিহারেই নয় , বিজেপির বিরুদ্ধে দিল্লীতে প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে চলেছেন তিনি , সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নীতীশ । পাটনার বিজেপিকে ধরাশায়ী করার পর জেডিইউর দলীয় দপ্তরে হোর্ডিং পড়েছিল ‘ প্রদেশ মে দেখা , দেশ মে দিখেগা ‘ । অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে বিহারেই শেষ নয় , এবার মোদির বিরুদ্ধে দেশে লড়াই হবে । শুধু তাই নয় , আগামীদিনে দেশে মোদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সংকল্প ঘোষণার পাশাপাশি আরেকটি স্লোগানও বিহারে সাম্প্রতিক রাজনীতিতে বড়সড় চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে ।

নীতীশের দল স্লোগান দিতে থাকে , ‘ জুমলা নেহি হকিকত ‘ । অর্থাৎ কেন্দ্রে মোদি – শাহ সরকারের বিরুদ্ধে জুমলা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগ বারবার তুলেছিল বিরোধীরা । এবার নীতীশ সেই বিষয়টাই স্লোগানে তুলে এনে পরিষ্কার বার্তা দিতে শুরু করলেন যে , এবার তার টার্গেট দিল্লীর মসনদ । এই তুমুল রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যেই শুক্রবার ঘটে যায় আরেক রাজনৈতিক নাটক । শুক্রবার মণিপুরে জেডিইউ দলের ৬ বিধায়কের মধ্যে ৫ জনই বিজেপি দলে যোগ দেওয়ার পর বিহারের বিজেপি নেতা সুশীল মোদি ঘোষণা দেন , মণিপুর জেডিইউ – মুক্ত হয়েছে , খুব সহসা বিহারেও জেডিইউ – আরজেডি জোট সরকারের পতন হবে ।

সুশীল মোদির এই বক্তব্যের পরই রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে ওঠে । মণিপুরের প্রসঙ্গ টেনে পুরো ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে নীতীশ পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বলেন , এভাবে তো দেশে গণতন্ত্র বলেই আর কিছু থাকল না । শুধুই অসাংবিধানিকভাবে দল ভাঙানো ছাড়া বিজেপির সামনে তো আর কোনও কিছু নেই । এই তুমুল রাজনৈতিক উথাল পাথাল পরিস্থিতির মধ্যেই আরও সুর চড়ালেন নীতীশ এবং বললেন , ২০২৪ সালে দেশের সব বিরোধী দল যদি এক ছাতার তলায় চলে আসে তাহলে বিজেপির আসন কমে ৫০ – এ নেমে আসবে । লক্ষণীয় হল , মাত্র কিছুদিন আগেই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন নীতীশ ।

তারপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাটনায় জেডিইউ দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে নীতীশকে তুলে ধরে বেশ কিছু পোস্টার পড়ে । ইঙ্গিতপূর্ণ দিক হল , মোদির বিকল্প হিসাবে নীতীশকে তুলে ধরার বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত কোনও বিরোধী দলের তরফেই কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়নি । যদিও মোদির বিরোধী মুখ হিসাবে এতদিন মমতা ব্যানার্জি নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের পর তৃণমূল নেত্রী অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন । অন্যদিকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পক্ষে বিরোধী মুখ হিসাবে নিরন্তর সওয়াল করে চলেছেন মণীশ শিশোদিয়া । এই রাজনৈতিক আবহের মধ্যেই বিরোধী ঐক্যে শান দিতে তিনদিনের জন্য সোমবার দিল্লী যাচ্ছেন নীতীশ কুমার । সব মিলিয়ে ২০২৪ – এর লোকসভার ভোটে মোদির বিরুদ্ধে বিরোধীদের সর্বসম্মত কেউ মুখ হতে পারবেন কি না সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন । যদি সেটা সম্ভব হয় তাহলে আগামীতে দিল্লীর কুর্সি দখলের খেলা বেশ চমকপ্রদ হবে

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.