একাধিক ‘চিনুক’-এর ইঞ্জিনে আগুন, উড়ান বন্ধ করল আমেরিকা

 একাধিক ‘চিনুক’-এর ইঞ্জিনে আগুন, উড়ান বন্ধ করল আমেরিকা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভিয়েতনাম থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত যুদ্ধে জয়ী মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘ প্রাণ ’ বলে কথিত সিএইচ -৪৭ চিনুক হেলিকপ্টারের উড়ান বন্ধ করল আমেরিকা । কারণ গত কয়েক মাসে একাধিক চিনুকের ইঞ্জিনে আগুন লাগার ঘটনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় পেন্টাগন । মার্কিন সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে , প্রায় ৪০০ টি চিনুক হেলিকপ্টারের উড়ান বন্ধ করা হয়েছে । বিবৃতিতে বলা হয়েছে , গত কয়েক মাসে একাধিক চিনুকের ইঞ্জিনে আগুন লাগলেও কেউ হতাহত হননি । জ্বালানি লিক হওয়ার কারণে ইঞ্জিনে আগুন লাগার ঘটনার পিছনে তার চিনুকের পুরো বহরকে গ্রাউন্ড মাটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন বায়ুসেনার এক কর্তা বলেছেন , ‘ আইএএফ চিনুকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নয়নের আগে যেমন ছিল তেমনই কাজ করছে । আমরা কোনও সমস্যার সম্মুখীন হইনি । বুধবার থেকে হেলিকপ্টারগুলির ইঞ্জিন মেরামত এবং ওভারহলিং শুরু হয়েছে । ‘ চিনুক কপ্টারকে বলা ‘ আকাশের দৈত্য ‘ । মার্কিন সেনাকর্তারা চিনুককে বলেন— হাল্ক । এই চিনুক হেলিকপ্টার ভারত – সহ বিশ্বের ২০ টি দেশ ব্যবহার করে । ফলে আমেরিকা তাদের আকাশে চিনুকের উড়ান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতীয় বায়ুসেনাও কার্যত চাপে পড়েছে । চিনুকের বিষয়ে ওয়াশিংটনের কাছে সবিস্তার তথ্য তলব করেছে নয়াদিল্লি । মার্কিন মিডিয়া তাদের প্রতিবেদনে বলেছে , মার্কিন সামরিক বাহিনী চিনুক হেলিকপ্টারগুলি উড়তে বন্ধ করেছে কারণ এর ইঞ্জিনে আগুনের ঝুঁকি বেড়েছে । আমেরিকার ভিয়েতনাম , যুদ্ধ থেকে শুরু করে আফগানিস্তান , পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বহু যুদ্ধে চিনুক হেলিকপ্টার তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে । চিনুক হেলিকপ্টার বন্ধ রাখার কারণ সম্পর্কে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং – এর কাছে তথ্য চেয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা । ভারতের কাছে ১৫ টি চিনুক হেলিকপ্টারও রয়েছে , যা পাহাড়ি এলাকা হোক বা সমতল ভূমি সব জায়গায় সৈন্যদের নিয়ে যেতে পারে । চিনুক হেলিকপ্টারের বিশেষত্ব হল , এর মাধ্যমে এম -৭৭৭ হাউৎজার কামানকেও যে কোনও পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় । প্রথম চিনুক হেলিকপ্টার ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল । ভারতে চিনুক হেলিকপ্টারগুলি উত্তরে চণ্ডীগড়ে অবস্থান করেছে , উত্তর- পূর্বে চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিতীয় ইউনিট আসামে স্থাপন করা হয়েছে । চিনুক হেলিকপ্টার হল অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার যা একাধিক মিশন চালাতে পারে । এই চিনুক হেলিকপ্টারটি আমেরিকার হানিওয়েল কোম্পানির তৈরি । এই কপ্টারে রয়েছে ইঞ্জিন । চিনুক হেলিকপ্টারে রয়েছে একটি সুসংহত ডিজিটাল ককপিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং একই সঙ্গে আছে অত্যাধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা । বোয়িং – এর মতে চিনুকের প্রধান কাজ হল সৈন্য , বন্দুক , অস্ত্র এবং জ্বালানি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া । এই হেলিকপ্টারটি মূলত ৬০ বছর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । এই হেলিকপ্টারের সাহায্যে ৩৬ জন সৈন্যকে নিয়ে যাওয়া যায় , তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় একটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে একটি চিনুক হেলিকপ্টার অস্ত্রশস্ত্র , গোলাবারুদের বদলে ১৪৭ জন শরণার্থী নিয়ে আকাশে উড়েছিল । বিশ্বের দ্রুততম উড়ন্ত সামরিক হেলিকপ্টারের নাম হল চিনুক । ভিয়েতনাম যুদ্ধে পিছু হঠার পর চিনুককে আরও শক্তিশালী ও বিধ্বংসী করে তোলে আমেরিকা । চিনুককে বিশ্বের দ্রুততম সামরিক হেলিকপ্টার হিসেবে সমীহ করে গোটা বিশ্ব । এর গতি ঘণ্টায় ৩১৫ কিমি , যা অন্য কোনও সামরিক হেলিকপ্টারের নেই । আমেরিকার পর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় । ভারতীয় সেনাবাহিনীও গত কয়েক বছরে এটি প্রচণ্ডভাবে ব্যবহার করছে । চিনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত দ্বন্দ্বের মধ্যে লাদাখে ভারতীয় বায়ুসেনায় বোয়িং – এর তৈরি মাল্টি মিশন হেলিকপ্টারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে । বায়ুসেনার রাফাল , মিগ -২৯ ফাইটার জেট , সুখোই -৩০ এবং অ্যাপাচে এএইচ ৬৪ ই অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলির পাশাপাশি চিনুক হেলিকপ্টারগুলি সেই প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে রয়েছে যা পাহাড়ি লাদাখ ভূখণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ মিশন পরিচালনা করছে । হেলিকপ্টার বানায় চিনুক মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িং । বাহিনীতে সিএইচ -৪৭ নামে পরিচিত । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ছাড়াও প্রায় ২০ টি দেশের বায়ুসেনা এই কপ্টার ব্যবহার করে । চিনুক এই বছরের এপ্রিলে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘতম , নন – স্টপ হেলিকপ্টার হিসাবে একটি রেকর্ড তৈরি করেছে , অপারেশনাল ট্রেনিং টাস্কের জন্য এটি চণ্ডীগড় থেকে আসামের জোড়হাট পর্যন্ত একটানা সাড়ে সাত ঘণ্টায় ১৯১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে । ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে ১৫ টি চিনুক এবং ২২ টি অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টারের জন্য ৩১০ কোটি ডলার মূল্যের অর্ডার দিয়েছে আমেরিকাকে । স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে , রাশিয়া ( ৪৬ শতাংশ ) এবং ফ্রান্সের ( ২৭ শতাংশ ) পরে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী , গত পাঁচ বছরে দেশের মোট প্রয়োজনের ১২ শতাংশ আমদানি করে । ২০২২ সালের মার্চ মাসে চিনুকস এবং অ্যাপাচে ছাড়াও অন্যান্য ইউএস অরিজিন : প্ল্যাটফর্মগুলিও লাদাখ সেক্টরে ব্যবহার করা হয়েছে , যার মধ্যে অন্যতম সি -১৭ গ্লোবমাস্টার ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.