৬৪ বছর পর দুবাই খুলল হিন্দু মন্দিরের দরজা
সাড়ে ছয় দশক বাদে প্রথম হিন্দু মন্দির পেল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শহর দুবাই । গত পয়লা সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছে । যদিও আমিরশাহি সরকারের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি । তবে ইতিমধ্যে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে । সংবাদসূত্রে প্রকাশ , শুধু হিন্দুরাই নয় , সব ধর্মের মানুষ এই মন্দির দর্শন করতে পারবেন । মন্দিরে ১৬ টি দেব – দেবীর মূর্তি রয়েছে । দ্বারোদ্ঘাটনের দিন প্রধান পুরোহিত ছাড়াও অন্য লোকদেরও মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল । দ্বারোদ্ঘাটনের দিন থেকে মন্দিরে ৯ দিন ধরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়।
এই সময় প্রতিটি দেবতার পূজা করা হয় । শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রু গ্রন্থসাহিব – ও এই মন্দিরে যথোযোগ্য মন্দির সম্মানে রাখা হয়েছে । পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট আগেই তৈরি হয়েছিল । ট্রাস্টের পরিচালন পর্ষদ কিউআর কোড স্ক্যান করে দর্শনার্থীদের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং সিস্টেম চালু করেছে । দুবাইয়ে বসবাসকারী দর্শনার্থীরা মন্দিরের ওয়েবসাইটে গিয়ে কিউআর সিস্টেম ব্যবহার করে এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারছেন । এই মন্দিরের দোতলায় মুসলিমদের জন্য নমাজ পড়ার একটি ঘরও রয়েছে । নিচ তলার একটি কক্ষে ১৬ টি বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছে । তবে ভগবান ব্রহ্মার জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে । প্রথম তলায় রয়েছে চার হাজার বর্গফুটের একটি হলঘর ।
এ হলে অনেক ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। এর মধ্যে থাকবে শ্রদ্ধা সভা, বিয়ের অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠান । মন্দিরের বহিরঙ্গ যেমন সুন্দর , ভিতরের কারুকাজও অপূর্ব । মন্দিরের মূল কক্ষে ১৬ টি দেব – দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে । এই হলটিতে একটি বড় থ্রিডি প্রিন্টেড গোলাপি পদ্ম রয়েছে , যা পুরো গম্বুজ জুড়ে দৃশ্যমান । ৬৪ বছর পরে দুবাইয়ে এই মন্দির যে এলাকায় গড়ে উঠেছে , সেই এলাকার নামকরণ হয়েছে ‘ পূজা গ্রাম ‘। আদতে এই জায়গাটা দুবাইয়ের বিখ্যাত জুবেল আলী এলাকা । জুবেল আলী সেই জায়গা যেখানে একাধিক গির্জা আছে , আছে শিখ ধর্মালম্বীদের গুরুদ্বার । প্রথম দিন থেকেই , বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মন্দির দর্শনের জন্য পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ছে ।
তবে কিউআর কোডের কারণে প্রবেশ কিছুটা সীমিত করা হয়েছে । প্রথম দিন থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছে ট্রাস্ট । এখন রোজ সন্ধ্যায় মন্দিরে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো হচ্ছে । এখন মন্দিরে ১৪ জন পণ্ডিত মন্ত্র পাঠ করছেন । এই ১৪ জন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতকে ভারত থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে । সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে ১১ টা এবং তারপর দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত জপ করা হচ্ছে । দর্শনার্থীরাও এই জপে অংশ নিতে পারছেন । ট্রাস্ট সূত্রে খবর , খুব শীঘ্রই এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ভারত সরকারের কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক হবে । ট্রাস্টের কর্মকর্তা আশিস সিংঘল জানিয়েছেন , সরকারি তরফে উদ্বোধনের আগে এখনও সে ভাবে মন্দির সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি ।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য এখনও প্রবেশ নাস্তি । আগামী অক্টোবর , বিজয়া দশমী থেকে এই মন্দির আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের জন্য খুলে দেওয়া হবে । সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে । আশিস জানান , ৫ অক্টোবরের জন্য এখনই দর্শনার্থীদের বুকিং শেষ হয়ে গেছে । তারা সকলে বিনামূল্যে মন্দিরে প্রবেশ করবেন । প্রায় ৬৪ বছর আগে দুবাইয়ে একটি হিন্দু মন্দির তৈরি হয়েছিল । বুরদুবাইতে অবস্থিত ওই মন্দিরে ভগবান শিব ও কৃষ্ণকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল । সেটি এখন পর্যন্ত দুবাইয়ে নির্মিত সবচেয়ে বড় মন্দির । ৭০ হাজার বর্গফুট পরিধি নিয়ে মন্দিরের বিস্তার । এর আগে জবেল আলীতে ২০১২ সালে একটি বিশাল গুরুদুয়ারা নির্মিত হয়েছিল ।