শুধু সাপ চাষ করেই কোটিপতি হয়েছেন জিতিসিয়াবাসী

 শুধু সাপ চাষ করেই কোটিপতি হয়েছেন জিতিসিয়াবাসী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাড়িতে বড় বড় কাঠের বাক্স । গ্রামের প্রতিটি পরিবার সাপের চাষ করেই নিজের অর্থ রোজগারের চাকাকে পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিয়েছেন । আগের তুলনায় গোটা গ্রামটাই আর্থিক দিক থেকে অনেক বেশি উন্নত হয়ে গিয়েছে । আসলে , চিনের কিছু অংশে সাপের মাংসের বেশ চাহিদা রয়েছে । সেগুলি চিলি চিকেনের মতো সয়া সস , পেঁয়াজ পাতা দিয়ে রান্না করা হয় । কখনও বা স্যুপের মতো করে বানানো হয় । খেতে অনেকটা যেন মাছ ও চিকেনের মাঝামাঝি । তবে একটু শক্ত । অন্যদিকে , সাপের পিত্তি , শরীরের বিভিন্ন অংশও খান অনেকে । সাপের দেহ মদের বোতলের মধ্যে পুরে রেখে দেওয়া হয় । সেটা পান করেন কেউ কেউ । মনে করা হয় , এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করে । শরীর সতেজ রাখে ও দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে । আধুনিক প্রজন্ম যতই শিক্ষিত এবং আর্থিক দিক থেকে বলীয়ান হয়ে উঠুক না কেন , প্রাচীন পন্থা থেকে আজও তারা বেরিয়ে আসতে পারেন নি । প্রতিটি পরিবার এই সাপের কারবার করেই ভারতীয় মুদ্রায় বছরে ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি আয় করেন । সাপের বিষ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ওষুধ তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হয় । শুধু চিনের মধ্যেই নয় । চিনের বাইরেও সাপের চাহিদা আছে । জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি করা হয় । সাপ পাঠানো হয় জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও । স্থানীয়দের কথায় , ইয়াং – হং – চাং নামের এক কৃষকই প্রথম সাপ পালন করা শুরু করেন । আজ থেকে বেশ কয়েক দশক আগের কথা । এই সাপের ব্যবসা করেই বেশ জাঁকিয়ে বসেন তিনি । তার দেখাদেখি অন্যান্য গ্রামবাসীরাও তখন কৃষিকাজ জান বা অন্য পেশা ছেড়ে দেন । তারপর সবাই মিলে সাপের ব্যবসাতেই নেমে পড়েন । 66 বছর বয়সী ইয়াং হং – চাং জিসিকিয়া স্নেক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওখানকার ‘ বসবাসকারী মানুষজন তাকে ‘ সাপের রাজা ‘ বলে অভিহিত করেছেন । স্থানীয়রা জানালেন , বিশ বছরের বেশি সময় সাপের প্রজননের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার । জিসিকিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন যে , তারা বহুবার সাপের ছোবল খেয়েছেন , ওটাকে তারা এখন আর সেরকম আমল দিতে নারাজ । বরং গোটা গ্রামবাসীরা এতটাই বেপারো হয়ে গিয়েছেন , যে সাপে কাটাকে বিন্দুমাত্র ভয় পায় না তারা । বড় কোন বিষধর সাপের কামড়ে প্রাণসংশয় থেকে বাঁচতে অ্যান্টিডোট ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয় । অ্যান্টিডোট তৈরি হয় বিষধর সাপের বিষ থেকেই । যা বিষধর সাপের উপরের চোয়ালের সামনের দিকের দুটি বড় দাঁতের গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । আর প্রতিদিন জিসিকিয়ার মানুষগুলো ওষুধ সংস্থাগুলিকে এই বিষ জোগান দিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করছেন । এছাড়াও সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন রকমের সিরাম তৈরি হয় , যা বিভিন্ন রকমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হইয়ে থাকে । লাও ইয়াংয়ের মতো বিষাক্ত সাপকেও পোষেন তারা । এই ধরনের সাপ যদি কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় , তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না করা হলে তা প্রাণঘাতী হবে । কিন্তু এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জিসিকিয়ার মানুষগুলি নির্ভয়ে সাপ চাষ করে চলেছেন ।বড় বড় ঔষুধ কোম্পানিকে তারা সাপের বিষ বিক্রি করে থাকেন , এ ছাড়াও বিষাক্ত সাপের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি বের করার পর সাপের পিত্ত কেটে একটি পাত্রে ডুবিয়ে রেখে দেয় , বাকি শরীরের অংশ মশার কয়েলের মতো ভিসরেটেড সাপগুলিকে রোদে শুকিয়ে ওষধি উপাদান ব্যবসায়ী সমিতিকে চড়া দামে বিক্রি করে দেন । আর নির্বিষ সাপগুলির মাংস , পিত্ত , সাপের ছাল বেশ চড়া দামে আলাদা আলাদা বিক্রি করে জীবন যাপন করেন জিসিকিয়ার মানুষগুলি ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.