করোনা পরবর্তী কর্মস্থল

 করোনা পরবর্তী কর্মস্থল
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

করোনা মহামারি সারা বিশ্ব অর্থনীতিকে উলটপালট করিয়া দিয়া গিয়াছে । কর্মসংস্কৃতিতেও আনিয়া দিয়াছে এক উলটপুরান অবস্থা । সর্বাগ্রে বলিতে হয় ঘরে বসিয়া কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম – এর কথা । অতিমারি আসিবার আগে কেহই পারে নাই যে , অফিসের কাজ ঘরে বসিয়া করা সম্ভব । কিন্তু সেই ঘটনা ঘটিল বিশ্ব জুড়িয়া । এইবার অতিমারির প্রকোপ কমিবামাত্র এই কর্মসংস্কৃতি লইয়া কথা উঠিতেছে । শুরু হইয়াছে নানা বিতর্ক । মাইক্রোসফটের মতো সংস্থা মনে করিতেছে এই বিতর্কের মীমাংসা হোক ।

আবার এই দুই – তিন বছরে ঘরে বসিয়া কাজ করিতে করিতে অনেকেই অতটা অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছেন যে , তাহারা এখন আর বাড়ি অফিস দৌড়ঝাপকে অনর্থক মনে করেন । আবার অনেক অফিসের ঊর্ধ্বতনেরা মনে করিতেছেন ওয়ার্ক ফ্রম হোম দিয়া সঠিক কাজ আদায় করা যাইতেছে না । কাজ যথাযথ হইতেছে না । প্রসঙ্গত , করোনাকালে ঘরে বসিয়া কেবল কাজই হইতো এমন নহে গুরুত্বপূর্ণ সব বৈঠকও হইতো ঘরে বসিয়া । এইবার করোনার প্রকোপ কমিয়া যাইতেই কোম্পানিগুলি নতুন যা নিয়োগ করিতেছে তাহা পুরোপুরি হোম অফিস নির্ভর নহে । সপ্তাহে একাধিক দিন কেউ কেউ অফিসে হাজিরাও দিতেছেন ।

অর্থাৎ হোম অফিস আর অফিসের মিলিত সংস্কৃতি চালু হইয়াছে । যাহারা গত তিন – চার বৎসর ধরিয়া হোম অফিসে কাজ করিতেছেন তাহাদের মধ্যে এই বিষয়টি এতটাই খাপ খাইয়া গিয়াছে যে তাহারা এখন অফিসে হাজিরা দেওয়াকে বাড়তি চাপ মনে করিতেছেন । তারা মনে করেন হোম অফিসে কাজ করিলে অধিক কাজ করা যায় । কিন্তু ইহাও ঠিক করোনার প্রকোপ কমিতেই প্রতিষ্ঠানগুলি ফের অফিস সংস্কৃতি ফিরাইয়া আনিতে চাহিতেছে । মাইক্রোসফট এই নতুন পরিস্থিতি লইয়া একটি সমীক্ষা করিয়াছে । তাহাদের রিপোর্টে দেখানো হইতেছে যে সাধারণ কর্মীদের অধিকাংশ ঘরে বসিয়া কাজ করিবার পক্ষে বলিলেও ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সিংহভাগ মনে করিতেছেন পুরানো পদ্ধতিতে ফিরিয়া যাইতে পারলেই ভালো ।

হোম অফিসে বসিয়া কাজ করিলে যথেষ্ট কাজ হইতেছে কি না এই লইয়া তাহারা সন্দেহ পোষণ করিতেছেন । ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে ৮৭ শতাংশ কর্মী বলিতেছেন তাহারা হোম অফিস হইতে কাজ করিলে অফিসে বসিয়া যত কাজ হয় তাহার সমান কিংবা অধিক কাজ করিতে পারিতেছেন । উল্টোদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ৮০ শতাংশই হোম অফিসের কাজ লইয়া আশঙ্কা প্রকাশ করিতেছেন । দ্বিমত ব্যক্ত করিতেছেন । মাইক্রোসফট ১১ দেশের মোট ২০ হাজার কর্মচারীর উপরে সমীক্ষা চালাইয়াছিল । তাহারা গোটা বিশ্ব জুড়িয়া একইরকম প্রতিক্রিয়া পাইয়াছে । মাইক্রোসফটের এই উপমহাদেশের শীর্ষকর্তারা মনে করেন , কর্মক্ষেত্রগুলি করোনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আর ফিরিতে পারিবে না । ফিরিবার সম্ভাবনা খুবই কম ।

তাই নতুন সংস্কৃতিতে মতপার্থক্যের মীমাংসা প্রয়োজন । সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হইয়াছে , “ আমাদের কাছে সকল তথ্যে দেখা যাইতেছে ৮০ শতাংশের মতো কর্মী বলিতেছেন তাহারা দক্ষ এবং যথেষ্ট কাজ করিতেছেন । কিন্তু তাহাদের ব্যবস্থাপকেরা বলিতেছেন ভিন্ন কথা । অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা আর কর্মীরা যাহা বলিতেছেন তাহার মধ্যে বৈপরীত্য কাজ করিতেছে এর মীমাংসা ছাড়া কর্মক্ষেত্রগুলি চলিতে পারিবে না । এমন ভাবনাও রহিয়াছে নানা মহলে । মাইক্রোসফট এবং তাহাদের মালিকানাধীন লিঙ্কড ইনের কর্মকর্তারা মনে করেন অতিমারির পর কর্মক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসিয়া গিয়াছে উহার সহিত খাপ খাওয়াইতে গিয়া নিয়োগ কর্তারা হিমশিম খাইতেছেন ।

মহামারি চলাকালে মাইক্রোসফট হোম অফিসের জন্য ৭০ হাজার কর্মচারী নিয়োগ করিয়াছিল । সেই সকল কর্মচারীদের এও মুহূর্তে দৈনিক কর্মকালের ৪০ শতাংশ সময় হোম অফিস হইতে কাজ করিতে বলা হচ্ছে বলা হচ্ছে । বাকি সময়টা তাহারা অফিসে থাকিবেন । এই নির্দেশের ফলে মাইক্রোসফটের কর্মী সঙ্কট দেখা দিয়াছে । একই অবস্থা অ্যাপেল কোম্পানির ক্ষেত্রেও । তাহাদের কর্মী দলকে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন অফিসে উপস্থিত থাকিতে বলা হয় । মেইল করিয়া কর্মীদের জানানো হইয়াছিল যদি তাহার সপ্তাহে অন্তত তিনদিন অফিসে না যান তাহা হইলে ধরিয়া লওয়া হইবে ওই ব্যক্তি আর অ্যাপেলের সঙ্গে নাই । প্রসঙ্গত , অতিমারিরকালে এবং এখন পর্যন্ত বিশাল সংখ্যক কর্মীদল তাহাদের কর্মস্থল পরিবর্তন করিয়া চলিয়াছে । মাইক্রোসফট এই ঘটনাকে বলিতেছে – বড় রদবদল । এই রদবদলে আন্দোলিত বিশ্বের প্রায় সকল কর্মস্থল ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.