ড্রাগন-দমন করতে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় নৌসেনার ‘শিকারী’

 ড্রাগন-দমন করতে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় নৌসেনার ‘শিকারী’
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আদতে উন্নত ধরনের যুদ্ধবিমান। কিন্তু সমর বিশেষজ্ঞরা তাকে বলে ‘শিকারী’! কারণ শিকারীর মতোই ওঁৎ পেতে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান চিহ্নিত করে, তার উপর হামলা চালায় ওই বিমান। ভারতীয় বায়ুসেনার সেই বিমান এই মুহূর্তে উড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ায়।
ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সাতপুরা এবং সামুদ্রিক টহলদারি বিমান পি৮১ এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে ঘাঁটি গেড়েছে। পি৮১ গত ছয় মাসের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছে। পি৮১ এবং আইএনএস সাতপুরা অস্ট্রেলিয়ান বিমানবাহিনীর সঙ্গে ২০২২ সালে রয়্যাল অস্ট্রে লিয়ান নেভি পরিচালিত ব্যায়াম কাকাডু-২০২২ মহড়ায় অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে পৌঁছেছে। এই মহড়াকে ভারত মহাসাগর ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা ফৌজকে ঘিরে ফেলার একটি বড় কৌশল হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এই মহড়ায় বন্দর ও সমুদ্র উভয় স্থানেই ১৪টি নৌবাহিনী অংশ নেয়। মজার বিষয় হল, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া উভয়ই কোয়াডের সদস্য এবং দুই দেশই ইন্দো-প্রশান্ত মহা সাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসনে উদ্বিগ্ন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর ১২টি পি৮১ বিমান রয়েছে যা তৈরি করেছে মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারক বোয়িং। ২০১৩ সালে নৌবাহিনীর অংশ হওয়া এই বিমানটি বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসে নার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারতই প্রথম দেশ যাকে আমেরিকা এই বিমান সরবরাহ করেছে। আটটি বিমানের একটি বহর তামিলনাড়ুতে বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে দেশের পূর্ব উপকূলের নিরাপত্তায় অষ্টপ্রহর নজরদারি করে চলেছে।ভারতের দাক্ষিণাত্য তো বটেই, গোটা পূর্ব ভারতে শত্রুপক্ষের কোনও বিমান হামলা হলেই তৎক্ষণাৎ নিজেদের কাজ শুরু করে দেবে তামি লনাড়ুতে মোতায়েন ওই আটটি পি৮১ বিমান। এর পাশাপাশি গোয়ার সমুদ্রে ভারতীয় জল-ভূখণ্ডকে আগলে রেখেছে আইএনএস হংসা রণতরীর একটি বহর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত ছাড়াও পি৮১ যুদ্ধবিমান রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্স এবং গ্রেট ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্সও ব্য বহার করে। এই বিমানগুলি ‘হান্টার’ অর্থাৎ শিকারী নামেও পরিচিত।
ভারত মহাসাগরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভারত ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২২০ কোটি ডলারের চুক্তিতে পি৮১ বিমান কেনে। সমুদ্রে নজরদারি ছাড়াও পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত অর্থাৎ এলএসিতে উত্তেজক পরিবেশ শান্ত রাখতে এই বিমানগুলিও মোতায়েন করা যেতে পারে বলে বায়ুসেনা সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল। ২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাদের সঙ্গে ভারতের পদাতিক বাহিনীর মুখোমুখি সংঘাতের পর আহত সেনাদের এই বিমানেই নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল। নৌবাহিনীর পি৮১ বিমান ভারত মহাসাগর ছাড়াও আরব সাগরের উপর দিয়ে ৩০ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় উড়েছে।
অস্ট্রেলিয়া ১৯৯৩ সাল থেকে কাকাডু মহড়া পরিচালনা করছে। তবে এবারের মহড়াটি অনেক বড় পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে। এই মহড়ার আরও বিশেষত্ব ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার তার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে রয়েছেন। এ সময় তিনি তার অস্ট্রেলিয়ান সমকক্ষ অ্যাডমিরাল মার্ক হ্যামন্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। উভয়েই তাদের সম্মতি ব্যক্ত করেছেন যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া জানাতে নিজেদের অংশীদারিত্ব তথা অস্তি ত্ব আরও জোরদার করবে।সম্প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেছি লেন, কোয়াডভুক্ত দেশগুলির সামনে চিন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে, যা কেবল স্থল সীমান্ত নয়, সমুদ্রসীমার সুরক্ষার প্রশ্নেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেছিলেন, চিনা নৌবাহিনী ছাড়াও এখন ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ছোট মাছ ধরার জাহাজও ভারতের জন্য হুমকির বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। তাদের নজরদারি করা হচ্ছে তবে আরও সজাগ থাকতে হবে। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমার আরও মন্তব্য করেছিলেন, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা কোনও পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে না, দেশের সুরক্ষার স্বার্থে যখন যেমন প্রয়োজন, বাহিনী সে ভাবে পরিচালিত হয়। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে একের পর এক এমন অনেক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন যা ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। পূর্বাঞ্চলে চিন মায়ানমার-লাওস-কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড অক্ষ দিয়ে চিন অবরোধ করতে চায়। চিনের এমন পরিকল্প না সফল হয়ে গেলে সমগ্র ভারত মহাসাগরে চিন কার্যত অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হবে। তাদের সেই পরিকল্পনা বানচাল করতে এই ধরনের যৌথ মহড়া যত বেশি হবে, সুরক্ষার নিরিখে তত লাভবান হবে ভারতীয় মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি। ইতিমধ্যে চিন মায়ানমারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। এর মধ্যে বন্দর প্রকল্পও রয়েছে যার সম্পর্কে এখনও কেউ খুব বেশি কিছু জানে না, তবে এটি চিনের জন্য কৌশলগতভাবে খুব জরুরি। এ ছাড়া লাওসে রেলওয়ে প্র কল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে কোমর বেঁধেছে চিন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.