আমফানের গতি নিয়ে কালী পুজোয় ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিতরাং

 আমফানের গতি নিয়ে কালী পুজোয় ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিতরাং
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এবার দুর্গাপুজোয় অসুররূপী বৃষ্টি আনন্দের অনেকটাই মাটি করেছে। পুজোর পরেও বৃষ্টি থেকে রেহাই পায়নি রাজ্যবাসী। কিন্তু এ তো সর্বে কলির সন্ধ্যা! বঙ্গোপসাগরে ধেয়ে আসছে প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়। ২০২০ সালের মে মাসে আমফান আছড়ে পড়েছিল বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়া অর্থাৎ ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। বঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ঘূর্ণঝড়ের তাণ্ডবে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়েছিল। এখনও আমফানের ক্ষত পুরোপুরি শুকিয়ে যায়নি। এবার দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, ফের বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, যা সম্ভবত কালীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হয়ে আছড়ে পড়বে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘সিতরাং’। সে ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে, আবহবিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। মনে করা হচ্ছে ওড়িশা এবং অন্ধ্রের মধ্যবর্তী উপকূলে সম্ভবত তার ল্যান্ডফল হতে পারে। আবার বাংলাদেশের আবহবিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, পশ্চিমবঙ্গ উপকূল এবং বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলের মধ্যবর্তী কোনও স্থানে সিতরাং-এর ল্যান্ডফল হতে পারে। কানাডার সাসকাচোয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তাফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ১৭ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যা ১৮ অক্টোবরের মধ্যে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং ২৫ তারিখের মধ্যে সুপার সাইক্লোনের রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে উপকূলে। পলাশ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে যে কোনও জায়গায় আঘাত হানতে পারে। জিএফএস মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করে পলাশ আরও মন্তব্য করেন, সিস্টেমটি সুপার সাইক্লোনের আকার নিতে পারে। সিতরাংয়ে বাতাসের গতি ঘূর্ণিঝড় আমফানের মতো হতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানী পলাশ। কালীপুজোর আগে যে বৃষ্টির ভ্রুকুটি রয়েছে, দুর্গাপুজোর পরেই জানিয়েছিল মৌসম ভবন। যেন কোনওভাবেই পিছু ছাড়ছে না। ঘটনা হল, উত্তর ভারত থেকে গত ১০ অক্টোবর খাতায়-কলমে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা কবে বিদায় নেবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। উল্টে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এক সঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপের প্রহর গুনছে বাংলা ও ত্রিপুরা। কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আগেই জানিয়েছিল, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণাবর্ত। কিন্তু এখন জানানো হয়েছে, ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। দিল্লির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) আগেই তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। পূর্বাভাস অনুসারে, অনুসারে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে (১৪-২০ অক্টোবর) পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। পরবর্তী পূর্বাভাসে আইএমডি জানায়, ঘূর্ণাবর্তটি শক্তিক্ষয় করে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। কেন্দ্রীয় হাওয়া বিজ্ঞানীরা মার্কিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) পর্যালোচনা করে অনুমান করছেন, ১৮-২৫ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার সাইক্লোন গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় অশনি আঘাত করেছিল। অন্ধ্রপ্রদেশে। তারপর থেকে অক্টোবরের শুরু অবধি একাদিক্রমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলেও ঘুর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মোস্তাফা কামাল পলাশ তার পূর্বাভাসে বলেছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলেও আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। মোটকথা, সিতরাংয়ের ল্যান্ডফলের স্থান নিয়ে হাওয়া বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না। একই সঙ্গে প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল হয়ে তা বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে সিতরাং।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.