মিউজিয়াম অব ফিউচারে দর্শকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে রোবট অ্যামেকা

 মিউজিয়াম অব ফিউচারে দর্শকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে রোবট অ্যামেকা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পারস্য উপসাগরের তীরে দুবাই পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। বুর্জ খলিফা সহ অসংখ্য সুউচ্চ অট্টালিকা এই শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’ নামের এক উপবৃত্তাকার জাদুঘর। যাকে আন্তর্জাতিক মহল বিশ্বের সুন্দরতম স্থাপত্য বলে চিহ্নিত করেছেন। এই সাত তলা উপবৃত্তাকার বাড়িটি তিরিশ হাজার বর্গ মিটার জুড়ে অবস্থিত এবং ৭৭ মিটার উঁচু। পৃথিবীর উচ্চতম ভবন বুর্জ খলিফার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত এই নবনির্মিত ভবনটি। দুবাই প্রশাসনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এটি এমন একটি জাদুঘর যা মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্থায়ী প্রদর্শনী। তাদের আশা, এটি ভবিষ্যতে অনুপ্রেরণা, উদ্ভাবন এবং মানবাধিকার সম্পদ উন্নয়নের বাধা বিপত্তিগুলির সমাধান ও সুযোগগুলির বিকাশের জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে। এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভা বিষয়ক মন্ত্রী এবং দুবাই ফিউচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহাম্মদ আল জেরজউই জানিয়েছেন, ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার’ কার্যত একটি ‘জীবন্ত জাদুঘর’, কারণ এটি ক্রমাগত অভিযোজিত এবং রূপান্তরিত হয়। ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এখানে আয়োজিত প্রদর্শনীগুলিও। ‘কিল্লা ডিজাইন’ নামক সংস্থার শন কিল্লা এই ভবনটির মুখ্য স্থপতি। বৃহৎ উপবৃত্তাকার এই ভবনটিকে দুবাইয়ের স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক হিসাবে কল্পনা করা হচ্ছে। এটি আধুনিক কম্পিউটারকে ব্যবহার করে গড়া নকশা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিদর্শন। রোবটের মাধ্যমে বিশেষ ভাবে তৈরি করা ১০২৪টি অংশ দিয়ে তৈরি এই ভবন। এই অংশগুলির প্রতিটিই আদপে এক একটি স্বতন্ত্র শিল্পকলার নমুনা। উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে মূলত স্টেনলেস স্টিল। কিন্তু ইস্পাত ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে চারটি স্তর নিয়ে গঠিত এমন একটি সংকর ধাতু যা ১৬টিরও বেশি ধাপের মধ্য দিয়ে উৎপাদিত হয়। শুধুমাত্র সম্মুখভাগটি তৈরি করতেই সময় লেগেছে ১৮ মাসেরও বেশি। ১০২৪ টি প্যানেল বেছে নেওয়ার কারণ হল, এটি ১০২৪ টি চরিত্র নিয়ে গঠিত এক কিলোবাইটকে সূচিত করে। গোটা ভবনটিতে যে
আলোকবর্তিকা রয়েছে, তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। আরব আমিরশাহির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী তথা দুবাইয়ের শাসক শেখ মহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের তিনটি উদ্ধৃতি এই ভবনের দেওয়ালে নকশার মাধ্যমে তুলে হয়েছে। যেখানে লেখা হয়েছে; ‘আমরা শত শত বছর বাঁচতে পারি না, তবে আমাদের সৃজনশীলতার সৃষ্টিগুলি আমাদের চলে যাওয়ার পরেও থেকে যেতে পারে।’ দ্বিতীয় বাক্যের অর্থ হলো- ‘আমরা কয়েক শ বছর বাঁচব না, কিন্তু আমাদের সৃজনশীল উদ্ভাবন আমাদের প্রস্থানের পর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।’ তৃতীয় বাক্যের অর্থ হলো- ‘জীবন পুনর্গঠন, সভ্যতার উন্নতি ও মানবতার অগ্রগতির রহস্য একটি সহজ কথার মধ্যে নিহিত। তা হলো- উদ্ভাবন।” জাদুঘরটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য রয়েছে নিজস্ব সৌর পার্ক। এই পার্কটি ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। স্থায়িত্বের দিক থেকেও এটি বিশ্বমানের। ভবনটির অন্যতম আকর্ষণ ‘ভল্ট অফ লাইফ’। এই অংশে কলম্বিয়ার আমাজন অববাহিকার নিরক্ষীয় বনভূমির প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে। ‘আল ওয়াহা’ নামক একটি প্রদর্শনীতে দর্শকদের জন্য রয়েছে এমন একটি পরিসরে আত্মান্বেষণ করার সুযোগ যা তাদের অনুভূতিকে উদ্দীপিত করবে। জাদুঘরে রয়েছে ‘ফিউচার হিরোজ’ নামক একটি বিভাগ, যা তরুণ প্রজন্মের মনকে নিজেদের এবং চারপাশের বিশ্বকে নতুন করে আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.