ঝোপ বুঝে কোপ!!

 ঝোপ বুঝে কোপ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের আরও একটি উইকেটের পতন হলো শুক্রবার। এদিন বিধায়ক পদ ছাড়লেন ৪৪নং রাইমাভ্যালি উপজাতি সংরক্ষিত আসনের আইপিএফটি বিধায়ক ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। শুক্রবার সকালে ডিগ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণকে সাথে নিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তীর হাতে তার পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন। অধ্যক্ষ শ্রী চক্রবর্তী তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেও, এখন সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। সম্ভবত শনিবার অধ্যক্ষ তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

IMG-20221015-WA0002

সম্প্রতি দ্বাদশ বিধানসভার দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিন পদ্মশিবিরের করবুক কেন্দ্রের বিধায়ক বুরবো মোহন ত্রিপুরাও অধ্যক্ষের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়ে দল ছেড়ে তিপ্ৰা মথায় সামিল হয়েছেন। এর আগে ১নং সিমনা উপজাতি সংরক্ষিত আসন থেকে জয়ী আইপিএফটি বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা মথায় শামিল হয়েছিলেন। এখনও তিনি মথায় আছেন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর তার বিধায়কপদ খারিজ হয়। যতটুকু খবর, আইপিএফটি দলের আরও এক বিধায়ক আগামী কিছুদিনের মধ্যে মধায় শামিল হবেন। ইতিমধ্যে এই নিয়ে দরকষাকষি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে খবর। তিনি প্রাক্তন মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া।

মন্ত্রিত্ব হারানোর পর নারী সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন ধরে তিনি একপ্রকার আত্মগোপনে ছিলেন। কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন ? কেউ কিছু জানতে পারেনি। তার কোনও গতিবিধিই লক্ষ্য করা যায়নি। সম্প্রতি রাজ্যসভার সাংসদ পদে উপনির্বাচনের আগের দিন তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়। এরপর থেকে রাজ অন্দরে তার যাতায়াত বাড়তে থাকে। দুদিন আগে প্রদ্যোতের সাথে তাকে দেখা গেছে একই ফ্রেমে। স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে কারও অসুবিধা নেই। তারও শেষ গন্তব্য হচ্ছে মথা শিবির। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
২০১৮ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্রে লড়াই করে আটটিতে জয়লাভ করেছিলো বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি।

এরপর গোমতী-হাওড়া দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। পুরোপুরি বদলে গেছে পাহাড়ের স্থিতি। পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ এখন প্রদ্যোত কিশোরের হাতে। এডিসি নির্বাচনে আইপিএফটির ভরাডুবি হয়েছে। পাহাড়ে এখন আইপিএফটি অস্তিত্বহীন। শুধু তাই নয়, দলও এখন দ্বিখণ্ডিত। একদিকে এনসি গোষ্ঠী, অন্যদিকে মেবার গোষ্ঠীতে বিভাজিত। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আইপিএফটির টিকিটে প্রার্থী হয়ে লড়াই করা মানে, নিশ্চিত জামানত জব্দ হওয়া। তাই ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারার কৌশল নিয়ে একে একে আইপিএফটি বিধায়করা তিপ্রা মথায় শামিল হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে সবাই যে একই পথে হাঁটবে, এখন কোনও কথা নেই। এন সি গোষ্ঠীর বিধায়কদের ঝোঁক আবার পদ্ম শিবিরের দিকে। শর্ত শুধু একটাই, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট নিশ্চিত করা।

IMG-20221014-WA0028

এটা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো যে বুরবো মোহন ত্রিপুরার মতো বিধায়করা ২০২৩ সালে পদ্মশিবির থেকে টিকিট পাবে না। তাই বিধায়ক পদে থেকে তাদের আর কোনও লাভ নেই। বরং যেখানে গেলে লাভ হতে পারে (সময়ের নিরিখে) সেখানে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে যাওয়ার আগে আজীবন পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা করেই গেছেন। সে যাই হোক, বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরনের পদত্যাগ, দলত্যাগ আরও লক্ষ্য করা যাবে। শুক্রবার যিনি পদত্যাগ করলেন, তিনিও বাকি জীবন পেনশনের ব্যবস্থা করে অন্য দলে শামিল হচ্ছেন। এই সবই রাজনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থের অঙ্গ। এতে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হয় না। একে বলে ‘ঝোপ বুঝে কোপ।’

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.