কংগ্রেসের নিজস্ব জয়!
২২ বৎসর পর সভাপতি পদে নির্বাচন হইল কংগ্রেসে। এর আগে নির্বাচন হইয়াছিল ২০০০ সালে। সেই নির্বাচনে রাজীব গান্ধী ঘনিষ্ঠ জিতেন্দ্র প্রসাদকে হারাইয়াছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া গান্ধী পাইয়াছিলেন ৯৭ শতাংশ ভোট। ইহার পর ২০১৭ সালে রাহুল গান্ধী সভাপতি হইয়াছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে। এই হইল দেশের সর্ববৃহৎ, সর্বপ্রাচীন কংগ্রেস দলের দলীয় নির্বাচন। গান্ধী পরিবারের বাহিরের লোক হিসাবে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সীতারাম কেশরী। তিনি ১৯৯৭ সালে নির্বাচিত হইয়াছিলেন সাংগঠনিক ভোটাভুটিতে। তিনি হারাইয়াছিলেন শারদ পাওয়ার এবং রাজেশ পাইলটকে।
গান্ধী পরিবারের বাইরের তিনি হইলেন সর্বশেষ সভাপতি ।ফলত ২৫ বৎসর পর গান্ধী পরিবারের বাহিরের কেহ দলের সভাপতি হইতে চলিয়াছেন। দেখা গিয়াছে যখনই গান্ধী পরিবারের কেহ সভাপতির পদে আসিতে চাহিতেছেন না তখন নির্বাচন হইতেছে। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবার যেন সমার্থক। যখন তাঁহারা থাকিতেছেন না তখন সারা দেশ হইতে দাবি উঠিবে নানান রকম। এইবার অবশ্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর উভয়েই দক্ষিণ ভারতীয় । প্রবীন খাড়গের পাল্লাভারী বলিয়া মনে হইতেছে আপাত দৃষ্টিতে, কারন খাড়েগ যে গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ সেই বার্তা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে রহিয়াছে।
আবার রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়োতে রাহুলের পাশে হাঁটিলেন কর্নাটকে। তথাপিও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখিলেন না শশী থারুর। তিনি গুয়াহাটি আসিয়া নিজের প্রচার করিতে গিয়া বলিয়াছেন, খাড়গে আমারও নেতা, আমরা শত্রু নহি। আমি জিতিতে পারিলে কংগ্রেসের ভেতরকার পরিবর্তন সাধন করিব। দল শক্তিশালী করিতে উদ্যোগী থাকিব। থারুর শতোর্ধ্ব বয়সি কংগ্রেসে কী কী পরিবর্তন আনিতে চাহেন অনেকেই চাহেন তাহা লিখিত ভাবেই জানাইয়াছেন। প্রত্যেক ভোটারকে পাঠাইয়াছেন। শোনা যাইতেছে দলীয় নির্বাচনে শশী থারুরই প্রথম যে ব্রাহ্মণ বা লিখিত ইস্তাহার প্রকাশ করিলেন।
তাহাতে লিখিলেন, যিনিই জিতিয়া আসুন, জয় হইবে কংগ্রেসের। আবার গুয়াহাটিতে বলিলেন, আমাকে যাহারা সমর্থন দিতেছেন তাঁহারা কেহই গান্ধী পরিবারের বিরোধী নহেন। গান্ধীরা চিরকাল কংগ্রেসের সঙ্গে রহিয়াছেন, আমরাও রহিয়াছি। এইক্ষেত্রে ব্যবধান করিতে চাওয়া একটি ভুল বিষয়। থারুর দাবি করিতেছেন, দলের প্রবীণেরা খাড়গেকে পছন্দ করিতেছেন। আবার নবীনদের তরফে তিনি যথেষ্ট সাড়া পাইতেছেন। যদি সভাপতি পদে তিনি জিতিতে পারেন তাহলে তাহার প্রথম কাজ হইবে, কংগ্রেস ছাড়িয়া বিজেপি যাইবার প্রবণতা বন্ধ করা।
১৯৯৭ সালে যে বৎসর কংগ্রেসে সভাপতি পদে নির্বাচনে সীতারাম কেশরী সভাপতি হইলেন, সেই ভোটে মোট ভোট পড়িয়াছিল ৭ হাজার ৪৬০ ভোট। কেশরী পাইয়াছিলেন ছয় হাজারের বেশি ভোট। এইবার গান্ধী পরিবারের অঘোষিত পছন্দ খাড়গের বিরুদ্ধে শশী থারুর কত ভোট পাইবেন এই লইয়া যে জল্পনা চলিতেছে তাহার অন্ত আজই হইয়া যাইবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধীর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন অশোক গেহলট। কিন্তু অশোক গেহলট প্রার্থী হইলেন না। অগত্যা প্রবীন খাড়গেই রহিলেন কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের অঘোষিত পছন্দের প্রার্থী। কংগ্রেসের সামনে আজ নানান ধরনের চ্যালেঞ্জ আসিয়া দাঁড়াইয়াছে।
অতি প্রাচীন এই দলের অভ্যন্তরে নানান সংস্কার আজ জরুরি মনে করিতেছেন দলের নেতারা। কিন্তু তাহাদের কথা গ্রাহ্য হইতেছে না বলিয়া জি টোয়েন্টি থ্রি দেখিতে হইয়াছিল। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ হইতে শুরু করিয়া মাঝারি বয়সের কপিল সিবাল প্রমুখ কংগ্রেসের সহিত প্রত্যেকটা সংশ্রব ত্যাগ করিয়াছেন।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সময়ে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন কংগ্রেস ও বিরোধী সকল দলের জন্য গুরুত্ব রাখে। কংগ্রেসকে বাদ দিয়া দেশে প্রকৃত বিরোধী জোট সম্ভব নহে। আর কংগ্রেস আজ যে অবস্থায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছে, তাহাতে সকল লাগি বিজেপি বিরোধী দলকে একত্রিত করিয়া এক জায়গায় দাঁড়াইবার মতন অবস্থানে নাই। খাড়গে কিংবা থারুর যিনিই নির্বাচিত হইয়া প্রেসিডেন্ট হোন, তাহাকে চ্যালেঞ্জ লইতে হইবে। তাহাদের কর্মকুশলতার উপর নির্ভর করিবে ২০২৪-এর নির্বাচনে দল কোন্ অভিমুখে যাইবে।