রাজ্যকে লুটে উধাও সিকারিয়া রহস্য ভূমিকা শিল্প নিগমের
শিল্পের নামে রাজ্যে দুর্নীতির আরেক পীঠস্থান ভাগি একথা সিকারিয়া’ শীর্ষক তথ্যমূলক সংবাদ বুধবার দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, জনমনেও এই সাগর চুরি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। য়নে পূর্বতন বাম সরকারের আমলে শিল্পের নামে রাজ্যে যে দুর্নীতির বীজ বপন হয়ে দেশ হয়েছিলো, রাম সরকারের আমলে জনৈক ফ্ল্যাক্স ব্যবসায়ী ও তার শাকরেদদের কল্যাণে সেই দুর্নীতি ফুলে ফেঁপে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। তথ্য বলছে, ২০১২ সালে ‘মেসার্স সিকারিয়া মেগা ফুড পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে বহি:রাজ্যের সংস্থাটিকে ডেকে আনা হয়েছে আদতে লুট করার জন্য আর এই লুঠের ভাগিদার হয়েছে অনেকে। রাজ্যে শিল্প স্থাপনের নামে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রজেক্ট ভিত হতেই অনুমোদন করিয়ে পুরো অর্থ আত্মসাৎ বিদ্যু য়ছে। করাই ছিলো মূল লক্ষ্য। সেটাই করা হয়েছে।সম্প্রতি তথাকথিত ওই ফুড পার্কের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং তার সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে যা পাওয়া গেছে তা একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। টিআইডিসির দেওয়া সার্স ৬১.৭১ একর জমিতে এখন শুধু জঙ্গল। সাপ থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রাণীর নিশ্চিন্ত বিচরণভূমি । ভিতরে একটিমাত্র গুদাম রয়েছে। তাতেও নানা বেআইনি সামগ্রী মজুত করা হয় বলে অভিযোগ। ফুড পার্কের ভিতরে রাস্তার ইট সলিং কিছুই নেই। বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন। খবর নিয়ে জানা গেছে, ১৭ লক্ষ টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। এ জন্য বিদ্যুৎ নিগম বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় কোটি টাকার ডকাছাকাছি টিআইডিসির মাসিক লিজ রেন্ট বকেয়া পড়ে আছে। সিকারিয়া সংস্থা ওই টাকা টিআইডিসিকে দিচ্ছে না। অথচ তথাকথিত শিল্পের ধ্বজাধারীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। অভিযোগ,সংস্থার কর্ণধার অবিনাশ সিকারিয়ার সাথে সলিড সেটিংয়ের কারণে বশ হয়ে রয়েছেন শিল্প নিগমের কর্তারা। মোটা অর্থের বিনিময়ে বশ করে রাখা হয়েছে। গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই সীমাহীন দুর্নীতি চললেও টিআইডিসি নীরব কেন? জানতে চায় রাজ্যবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পের নামে ১৩টি ভুয়ো সংস্থার নামে ফুড পার্কের জমি এলটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আসলে ওই সংস্থাগুলির কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা সন্দেহ। যাদের শিল্প গড়ার নামে জমি এলটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি সংস্থাও আসেনি। অভিযোগ, এই সব ভুয়ো এলটমেন্টের কাগজ তৈরি করা হয়েছে বদ উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা মাফিক। যাতে ওইসব দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরুতে দুর্নীতির কারণে একবার এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। তৎকালীন মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা সংস্থাটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কড়া চিঠি দিয়েছিলেন। এই চিঠি পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ কোটি টাকা রিলিজ করার পর প্রজেক্ট বন্ধ করে দিয়েছিলো। অভিযোগ, পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের এক প্রধান সচিবের দৌলতে সেই প্রজেক্ট আবার চালু হয়। এই চালুর পিছনে রাজ্য সরকারের সেই প্রধান সচিব ও কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু শীর্ষ আধিকারিক বড় মাপের দক্ষিণা পেয়েছিলেন সিকারিয়ার কাছ থেকে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর গত সাড়ে চার বছর ধরে একই কায়দায় লুট চালানো হয়েছে বর্তমান শাসক দলের কিছু নেতা-আমলাকে ম্যানেজ করে। বর্তমানে সেই সিকারিয়া তুলাকোনা ফুড পার্কে নতুনভাবে দুর্নীতির রাস্তা খুলতে তোড়জোড় শুরু করেছে বলে খবর। ইতিমধ্যে আমাদের হাতে কিছু তথ্য এসেছে। আরও কিছু তথ্যের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এগুলো হাতে এলেই রাজ্যবাসীর সামনে উপস্থাপন করবো। এক্ষেত্রে টিআইডিসির ভূমিকা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও শিল্প নিগমের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে এই পত্রিকায় ধারাবাহিক তথ্যমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তদন্তের অগ্রগতি কতটা তা এখনও জানা যায়নি।