বিজেপিকে উৎখাত করুনঃ ইয়েচুরি
বিজেপির ঘৃণার রাজনৈতিক আবহ থেকে মুক্তিই হলো আজ মানুষের বিকল্প। আমজনতার স্বার্থে কাজ না করলে বিদায় নিতেই হবে। আস্তাবলে সিপিএমের জন সমাবেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট সরকারকে তুলোধুনো করে সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রায় আধঘন্টার ভাষণে তিনি ভোটের আগে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উজ্জ্বীবিত করে গেলেন। গুজরাটে ভোট ঘোষণা কেন হলো না এনিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেন। সমাবেশের প্রধান বক্তা সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সমাবেশের আকার আয়তনে উৎফুল্ল ছিলেন। কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এদের উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না। ভোট এলে প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরা সফরে এসে নতুন যে সব প্রতিশ্রুতি দেবেন সে সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেন, বিজেপির ঘৃণার রাজনৈতিক আবহ থেকে মুক্তিই হল আজ মানুষের বিকল্প। এদের হাতে একটাই অস্ত্র, সে হল ভাইয়ে ভাইয়ে লড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সমীকরণ তৈরি করে ভোট করানো। এরা বলে থাকে, যেই জিতুক সরকার গড়বে বিজেপি। সে জন্য তাঁরা ইডি, সিবিআই কাজে লাগায়। এতেও না হলে জেলে পুরে দেয়। উদাহরণ, গোয়া কর্ণাটক মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ। এই সময়ে গুজরাট বাদ দিয়ে হিমাচলে ভোট ঘোষণা করা হলো। কারণ গুজরাটে প্রধানমন্ত্রী তখনও ভোটের জন্য প্রকল্প ঘোষণা দেন নি। এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। ইয়েচুরি বলেন, বিজেপির সরকার বিলকিস বানু মামলার দোষীদের মুক্তি দেয় আবার বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও বলে থাকে। আবার সুপ্রিম কোর্ট বিলকিস মামলার শুনানি দিন পিছিয়ে দেয় গুজরাট নির্বাচন অবধি। প্রধানমন্ত্রীর অমৃতকাল সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বৎসর কাল আজ মোদি জামানা। সমুদ্র মন্থনে কিন্তু অমৃত ও বিষ দুই উঠেছিল। অমৃতের ভাণ্ড নিয়ে গিয়েছিল রাক্ষসেরা। দেবতারা প্রমাদ গনলেন, ভাণ্ড ফিরিয়ে আনলেন। আজ ফের সময় এসেছে এই ভাণ্ড রাক্ষসের হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। আপনারা তৈরি তো?
এদিনের এই সভাতেই ভোট ডঙ্কা বাজিয়ে দিল সিপিএম। রাজ্যদলের সম্পাদক জিতেন চৌধুরী বলেন, এই সরকারের সীমাহীন অপরাধের জবাব দিতে তৈরি মানুষ। সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, শেষবারের মতো বার্তা দিতে চাই – অপকর্ম থেকে – ক্ষান্ত হোন। জবাব দিতে তৈরি হয়ে যান। রাজ্য সরকারকে প্রতারক মন্তব্য করে জিতেন চৌধুরী ঘরে ঘরে সুশাসন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক নৈতিকতা থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। শুধু ফ্লেক্স আর ছবি দিয়ে দৃশ্যদূষণ হচ্ছে। মন্ত্রীর ছবি দেখে কিন্তু কারও পেট ভরছে না। আপনারা জানান, প্রতিশ্রুতির চাকরি কোথায় হল, ত্রিপুরায় নাকি বাংলাদেশে?
সরকারকে তীব আক্রমণ করে জিতেন চৌধুরী বলেন, নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের চেয়ে খারাপ কাজ করছেন। এদের কাজ করার হিম্মত নেই আবার যারা কাজ করতে চায় তাদের পুলিশ দিয়ে ঠেকায়। আজ যারা সত্য বলছে তারাই বাধা পাচ্ছে। শুধু বামেরাই আক্রান্ত নয়, যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে তারাও আক্রান্ত। আবার আক্রমণকারী কিন্তু কখনই গ্রেপ্তার হয় না। বিজেপিবিরোধী সবগুলি দলের ঐক্য প্রসঙ্গে জিতেন চৌধুরী এদিন বলেন, সব জাতীয়, আঞ্চলিক দল যারা গণতন্ত্রের আর ধর্মনিরপেক্ষেতার কথা বলেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। কে, কোথায় কাকে প্রার্থী করবে সে তার নিজস্ব বিষয়। তার আগে ভোটের পরিবেশ তো তৈরি করতে হবে, না হলে মানুষ ভোট দেবেন কী করে? আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। প্রসঙ্গত, এর আগে ফেব্রুয়ারীতে আস্তাবলে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশ হয়েছিল। এরপর সাত মাস পরের এই সমাবেশ। দুটির মধ্যে চরিত্রগত তফাত হল এবার যুবকদের সমাগম তুলনায় বেশি। দেখা গেছে উপজাতি মানুষের মুখ। জিতেন চৌধুরীর ভাষণেও সেই কথা শোনা গেল। বললেন, চেয়ে দেখুন আগে পিছে ডানে বাঁয়ে সবদিকেই যুবা মুখ। শাসকের আক্রমণ, সন্ত্রাস রুখতে অস্ত্র নয়, তবে প্রয়োজনে ঝাণ্ডাকেই ডাণ্ডা বানাতে হবে। দেখবেন ওরা পালিয়ে বাঁচতে চাইবে। বিপ্লব দেবের মতো পালাতে হবে। আপনারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, এবার এই সরকারটিকে উৎখাত করার শপথ নিয়ে তবেই ঘরে ফিরুন। একই সুর শোনা গেল সর্বশেষ বক্তা মানিক সরকারের গলায়। তিনি বলেন, ৫৫ মাসের এই দুঃশাসন এই ত্রিপুরার ঐতিহ্য নয়। স্বৈর, একদলীয় এক সন্ত্রাস চলছে। আজ গণতান্ত্রিক সব অধিকার অবরুদ্ধ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা কথা বলতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন, ভোটের জন্য নিজ নিজ কৌশলগত দিক আপনারা নিজেরা স্থির করুন। কিন্তু এর আগে ত্রিপুরায় মানুষের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার যে ঐতিহ্য তা পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হোন। এটাই এই সময়ের দাবি। সমাবেশে আসা কর্মী সমর্থকদের প্রতি বলেন, এই সরকারকে উৎখাত করা না গেলে কারও কোনও বিকল্প পথ নেই। একটা বিকল্প সরকার আগে দরকার। তাই শুধু সমাবেশে এলে আর ঘরে ফিরে গেলেই হবে না। এই দুঃশাসনের সরকারটিকে উৎখাত করার অঙ্গীকার করে যেতে হবে। সমাবেশ নিয়ে সিপিএমের নেতাদের দাবি এদিন সকাল দশটার পর আর কেউ আগরতলায় আসতে পারেনি। রাজ্যদলের সব বক্তাই এই কথাই বলেছেন। জিতেন চৌধুরী ভাষণের শুরুতেই জানালেন, চড়িলামের কাছে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে, আগরতলাতেও হচ্ছে। দক্ষিণের ট্রেনের বগি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন বাধা টপকে সভায় আসতে। সিপিএম সূত্রের খবর, আগের দুদিন যারা আগরতলা এসে গিয়েছিলেন তারাই মাঠ ভরিয়েছেন। এদিন আসতে পারেননি বহু লোক ।