মর্যাদার লড়াই!

 মর্যাদার লড়াই!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন প্রত্যাশা মতই বৃহস্পতিবার ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশ করে দেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ১৮২ আসন সংখ্যার গুজরাটে মোট দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় নির্বাচন হবে ১ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ৯৩ টি আসনের জন্য ভোট নেওয়া হবে ৫ ডিসেম্বর। আর গুজরাট নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের পার্টি ফল ঘোষণার পূর্ব নির্ধারিত ৮ তারিখেই। অর্থাৎ একই দিনে ফল ঘোষণা হচ্ছে হিমাচলপ্রদেশ ও গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের।

ইতিপূর্বে দেশের থেকে নির্বাচন কমিশন হিমাচল প্রদেশের বিধানসভার ভোট ১ দফায় অনুষ্ঠিত করার আনুষ্ঠনিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে হিমাচল প্রদেশের ভোট ঘোষণার দিন গুজরাট বিধানসভার ভোট ঘোষণা করা হয়নি। বিরোধীরা অবশ্য প্রথম থেকেই হিমাচলপ্রদেশের ভোটের দিন ঘোষণার সময়, গুজরাটে ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষিত না হওয়ায় খোঁচা দিয়ে বলেছিল, মোদি-শাহকে নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেই নির্বাচন কমিশন একসাথে ভোট ঘোষণা করেনি। গুজরাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু উদ্বোধন, শিলান্যাস এবং একগুচ্ছ প্রকল্প বিলির ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলো নির্বাচন কমিশন। সেগুলো গত কয়েকদিনে মিটে যেতেই এবার ভোটের সানাই বাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিরোধীদের উত্থাপিত অভিযোগ অবশ্য কমিশন খণ্ডন করে বলেছে, গত বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রথমে হিমাচলপ্রদেশের ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গুজরাটে ভোট ঘোষণা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে গুজরাটে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে দেরি করে ভোট ঘোষণা হয়েছে—এই ধরনের অপবাদ’ ঠিক নয়। অপবাদই হোক কিংবা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই হোক, এটা কিন্তু সর্বজনের নজরে আসা একটা ঘটনা যে, গত এক মাসে ভোটের আগে নানা অজুহাতে গুজরাটে ৭২ হাজার কোটি টাকার নানান ধরনের প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি।

যার মধ্যে শুধুমাত্র ১ সপ্তাহ আগে ঢালাও হারে মহারাষ্ট্র থেকে দুই প্রকল্প তুলে এনে তা বিনিয়োগ করা হয়েছে গুজরাটে। এর মধ্যে মেহসানা জেলায় ৩৯০০ কোটির, মোধেরা গ্রামে ২৪ঘন্টা সৌরশক্তি চালিত প্রকল্প, ভারুচ জেলায় ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পচ জামনগরে ১৪৬০ কোটির প্রকল্প, আমেদাবাদের ১৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প সবই ভোটমুখী ঘোষণা, উদ্বোধন, শিলান্যাস, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। গুজরাট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মভূমি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরও বাসভূমি এই গুজরাট। দীর্ঘ ২৭ বছর গুজরাটে শাসন করছে বিজেপি। অথচ সেখানেই গত নির্বাচনে বেশ বেগ দিয়েছিল কংগ্রেস।

১৮২ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১১১টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৬৬টি আসন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল এবং অনগ্রসর শ্রেণীর নেতা জিগনেশের কারণে গত নির্বাচনে যথেষ্ট চাপে ছিলেন মোদি শাহ জুটি। কিন্তু এবছর অন্ততঃ কংগ্রেসের দিক থেকে এই চাপটা আর নেই। কারণ হার্দিক প্যাটেলরেই মধ্যে বিজেপিএর জার্সি গায়ে দেওয়ায় কিংবা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে কংগ্রেস অন্তত শহরাঞ্চলে ততটা আর চ্যালেঞ্জিং অবস্থার মধ্যে নেই। কংগ্রেসের মূল ভিত্তি এখন গুজরাটের গ্রামাঞ্চলেই। আর বিরোধী শক্তির রসায়ন চিন্তা করলে আম আদমি পার্টির গুজরাটে রেকর্ড গতিতে উত্থান অবশ্যই ভোটের রাজনীতিতে নতুন চিন্তার কারণ হতে চলেছে বিজেপির জন্য।

এক্ষেত্রে কেজরিওয়াল কার ভোটে থাবা বসাবেন সেটাই হলো আসল কথা। আপ পার্টি গুজরাট নির্বাচনে দিল্লী মডেলকে সামনে রেখে ভোটে নেমেছে। দীর্ঘ ২৭ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া অবশ্যই শাসকের জন্য সুখের বার্তা নয়। এই অবস্থায় নিজেদের দুর্গ অটুট রাখতে গেরুয়া শিবির সব ধরনের প্রচেষ্টাই কাজে লাগাতে চাইছে। মুখে ও শরীরী ভাষায় মোদি-শাহকে যতটা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মনে হোক না কেন, লড়াইয়ের ময়দানটা যে ততটা মসৃণ নয়, ভোটের গুজরাটে ঢালাও উপঢৌকন তথা প্যাকেজ ঘোষণা তারই প্রমাণ।

এখন দেখার গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ ও অভিযোগ গুজরাটে কতটা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়। গত নির্বাচনে মোদি শাহর দুর্গে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও আসন্ন নির্বাচনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনাই উজ্জ্বল। তাই গুজরাট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। গুজরাটের নির্বাচনের ফলাফল দেখেই ২০২৪ সালের লোকসভার ভোটের দেশের পথচলার আভাস মিলতে পারে। এমনটাই মনে করছেন দেশের ভোট রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.