পরিকাঠামোগত সঙ্কটে আগরতলা স্টেশন!

 পরিকাঠামোগত সঙ্কটে আগরতলা স্টেশন!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পরিকাঠামোগত সঙ্কটে ধুঁকছে আগরতলা রেলস্টেশন। ফলে সুচারুভাবে ট্রেন চলাচল করানো মুশকিল হয়ে পড়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে। একই কারণে নিত্য ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য। বিপদ বাড়ছে নানা দিক থেকে। বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কাও। এমনই খবর রেলের সঙ্গে যুক্ত বড় অংশের। সূত্রের বক্তব্য আগরতলা রেলস্টেশনে সামগ্রিকভাবে স্থান সঙ্কুলান বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্টেশনের মূল ভবন থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম সহ পুরো রেল ইয়ার্ড জুড়ে এই সমস্যা অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে।
আগরতলা রেলস্টেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৮ সালের ৫ অক্টোবর। তার কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয় স্টেশন তৈরির কাজ। তখন মিটার গেজের যুগ। সারা দিনে আগরতলা স্টেশনকে ভিত্তি করে কয়েকটি মাত্র। যাত্রীট্রেন চলাচল করে তখন । চলাচল করে আগরতলা-লামডিং এক্সপ্রেস নামে একটিমাত্র স্বল্প দূরপাল্লার ট্রেন। তারপর ধাপে ধাপে মেগা ব্লক নিয়ে ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই আগরতলা থেকে যথার্থ অর্থে এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল শুরু হয়। ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের মাধ্যমে রেলপথে আগরতলা যুক্ত হয় দেশের রাজধানী শহর নয়াদিল্লীর সঙ্গে। ক্রমান্বয়ে দেশের উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে যুক্ত হয় ত্রিপুরা। রাজ্যের ও অভ্যন্তরে উত্তরের ধর্মনগরের পাশাপাশি দক্ষিণের সাব্রুম রেলপথে যুক্ত হয় আগরতলা। আগরতলার সঙ্গে রাজ্যের উত্তর, দক্ষিণ উভয়দিকে কয়েক জোড়া যাত্রীট্রেনের মাধ্যমে রেলপথে সংযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। চলাচল করছে আগরতলা-শিলচর, শিলচর-আগরতলা যাত্রীট্রেন। বিস্তর ঘাটতি এবং চাহিদা থাকলেও তা আগরতলার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অংশের রেল সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। গড়ে দৈনিক কয়েক জোড়া এক্সপ্রেস ও স্থানীয় পর্যায়ের ডেমু ট্রেন চলাচল করছে আগরতলা স্টেশনকে ভিত্তি করে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মোটেও পরিকাঠামোগত অগ্রগতি ঘটেনি আগরতলা স্টেশনের। মিটার গেজের সময় থেকে চলা দুটি মাত্র প্ল্যাটফর্মের ভিত্তি তথা তিনটি প্লাটফর্ম দিয়ে এখনও চলছে স্টেশনটি। স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের আচ্ছাদনের বহর বাড়েনি এখনও। এখনও স্টেশনের এক প্রান্তের পায়ে হাঁটার সেতু তথা ফুট ওভার ব্রিজের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কর যাত্রীদের।
মূল স্টেশন ভবনে অসংরক্ষিত ও সংরক্ষিত টিকিট কাউন্টার রয়েছে একদিকেই। ফলে নিত্য নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্ল্যাটফর্মের অভাবে সকালের ধর্মনগর ও সাব্রুমমুখী উভয় দিকের ডেমু ট্রেন এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রা শুরু করে। তাতে প্রতিদিন বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রে যাত্রীদের। বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। আরও বহুদিক থেকে পরিকাঠামোগত সঙ্কটের কারণে নিত্য ভোগান্তি সইতে হচ্ছে যাত্রীদের। সমস্যা আছে অন্যদিক থেকেও। আগরতলা স্টেশন ইয়ার্ডে মোট সতেরোটি রেলপথ তথা লাইন রয়েছে। এগুলিতে প্রতিদিন গড়ে পনেরোটি যাত্রী ট্রেনের কোচ তথা তিনটি রেলের পরিভাষায় রেক রাখতে হয়। তার উপর রয়েছে বিভিন্ন মালগাড়ির ওয়াগন সহ যাত্রীট্রেনের সঙ্গে আসা ভ্যান এগুলি স্টেশনের ইয়ার্ডে রাখা এক সহ বিভিন্ন যাত্রীট্রেনের জন্য রেক ফুট তৈরি করে এগুলি চলাচলের ব্যবস্থা করতে গিয়ে মোটের উপর হিমশিম খেতে হয় স্টেশন কর্তৃপক্ষের। ফলে এখনই আগরতলা স্টেশন ইয়ার্ডের বহর না বাড়ানো হলে বিপদ অনিবার্য। এমনই মনে করেন রেলের সঙ্গে যুক্ত বড় অংশ। তার চেয়ে বড় কথা আগরতলা স্টেশনে এখনই আরও একটি স্টেশনের ভিত্তি, মানে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন। প্রয়োজন স্টেশনের অপর প্রান্তে একটি প্রশক্ত আকারের পায়ে হাঁটার সেতু তথা ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের। আশু প্রয়োজন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের আচ্ছাদনের আয়তন বৃদ্ধি করা। স্টেশনের মূল ভবনে যাত্রীদের বসার জন্য সুবন্দোবস্ত করা প্রয়োজন । তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্টেশনের মূল ভবন সহ সর্বত্র ছাদ এবং ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির জল পড়া বন্ধ করা। কারণ বর্ষায় আগরতলা স্টেশনে যাত্রীদের ভিজে একসা হয়। মোট কথায় আগরতলা স্টেশনের অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্ব অঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথার মতো।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.