ভোটের বাতাস তেজি!

 ভোটের বাতাস তেজি!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভোট আসিতেছে। শরৎ আসিলে যেমতে নীল আকাশ, কাশ ফুল আসিয়া যায়, শেষ রাতের ঝরা শেফালির গায়ে লাগিয়া থাকে বিন্দু বিন্দু শিশির তেমনি ভোট আসিলে নেতাদের সভাগুলির চেহারা সুরতে নানান পরিবর্তন দেখা যায়। প্রতিটি সভা সমাবেশের খবর শেষ হইবে এক রকম কথা দিয়া। ইহা হইল-অদ্যকার সভায় অমুক অমুক দলের এতো সংখ্যক পরিবারের এতোজন ভোটার আজ নেতার দলে যোগ দিয়াছেন। নেতা তাহাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলিয়া দিয়া দলে বরণ করিয়া লইয়াছেন। ইহাকে ভোট রঙ্গ বলা যাইতে পারে। কখনও কখনও দেখা যায় একেকটি বিধানসভা কেন্দ্রে এতো লোক দলবদল করিয়া ফেলেন যে সেই সব দলবদলুর যোগফল সেই কেন্দ্রের মোট জনসংখ্যার সমান হইয়া যাইতেও পারে।

photo

এই সকল মানুষ কি প্রতি ভোটের আগেই এইরূপে দলবদল করিয়া থাকেন? কেন করেন? শাসকের কু-শাসনে নাকি বিরোধী দলের নিষ্ক্রয়তার প্রতিবাদে ? যে কারণেই হোক মানুষ এ মতে যখন প্রকাশ্যে জেহাদ জানাইতে পারিতেছে তখন বুঝিতেই হইবে আমাদের জনগণ সাহস অর্জন করিয়াছেন। যাহা গণতন্ত্র ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ সমাজ গড়িবার পক্ষে সুখকর বিষয়। কিন্তু মনে খটকা থাকিয়াই যায়, সত্যই কি আমাদের কপালে এতো সুখ সয় ? নাকি ব্যক্তিগত পাওয়া না পাওয়া কিংবা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি অথবা কিছু সংঘবদ্ধ মানুষের ভয়ে এই দল বদল ? এই সকল প্রশ্নের জুতসই জবাব কোনও দিনই পাওয়া যায় না। বহিরঙ্গে যে সকল ভোট রঙ্গ আমরা দেখিয়া থাকি ভোট গণনার পর তাহার বিপরীত চিত্রও দেখিতে পাওয়া যায়।

1579659193

অতএব আপাতত আমরা এই মীমাংসায় শুধু আসিতে পারিতেছি যে, রাজ্যে ভোটের মরশুম দ্রুত তেজি হইতেছে। বিভিন্ন দল তাহাদের গৃহীত কিছু কৌশল গোপন রাখিতেছেন কিছুটা আবার প্রকাশ্য হইতেছে। নেতারা রাজ্যের নানান প্রান্তে যাইতেছেন, শত্রু দলের লোক ভাঙাইতেছেন। জোট গড়িবার বা জোটবদ্ধ হইবার কথা কখনও প্রকাশ্যে বলিতেছেন, আবার কখনও প্রকাশ করিতেছেন না। বিরোধী আকাশ দলনেতা মানিক সরকার হামেশাই বলিতেছে, বিরোধী সকল দল মিলিয়া ভোটের পরিবেশ ফিরাইয়া আনিতে হইবে। পরিবেশ থাকিলেই না কেবল ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন আসিবে। কোন দল কিমতে কি কৌশলে লড়াই করিবে সেইটি তাহাদের নিজ নিজ বিষয়। কিন্তু ভোটের ভয়হীন পরিবেশ আনিতে হইবে।

jitendra-choudhury-35798

এক কদম আগাইয়া সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরী বলিতেছেন,গণতান্ত্রিক ভাবনায় পরিচালিত জাতীয় এবং আঞ্চলিক সকল দলকে জোটবদ্ধ হইয়া ভোটের পরিবেশ তৈরিতে আগাইয়া আসিতে হইবে। আর কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ উত্তর জেলা সফরে যাইয়া প্রকাশ্যেই বলিলেন তিন দল আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসিয়া বিজেপি সরকার হটাইবার কৌশল গ্রহণ করা হইবে। আর সর্বশেষ শোনা গেল, বুবাগ্রা বলিতেছেন, বিজেপি টাকা দিয়া তিপ্ৰা মথাকে কিনিতে চাহিতেছে। তাহার এই কথা হইতে বুঝা হইতেছে, ভোটের আগে মথাকে লইয়া জোট গড়িতে চাহিতেছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির যে সকল পর্যবেক্ষক বা প্রভারি ভোটপ্রস্তুতি লইয়া এই প্রান্তে হইতে ওই প্রান্তে ঘুরিতেছেন তাহারা বলিতেছেন-বিজেপি একাই একশো।

জোট তখনই গড়িতে হয় কাহারও সংগঠন দুর্বল থাকিলে। কিন্তু বিজেপি একাই লহারা-লাল সিং আর্য বলিলেন, মানুষ কাজের নিরিখেই বিজেপিকে সমর্থন করিবে। একই দিনে রাজ্যের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক জানাইলেন, ৬০ খানা আসনের মধ্যে ত্রিশ খানা বিধানসভার ভোট প্রস্তুতির দায়িত্ব ন্যস্ত রহিয়াছে তাহার ওপরে। এই ত্রিশ খানা আসন কি পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভার অধীন আসনগুলিই কি না তাহা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী খোলসা না করিলেও ইহা বুঝাই যায় তেইশের ভোট লইয়া শাসকদল কেবল সক্রিয়ই নহে অতিসক্রিয় হইয়াছে। প্রতিমন্ত্রী মণ্ডলে মণ্ডলে যাইয়া প্রবাস কর্মসূচি করিতেছেন। মণ্ডলের সাংগঠনিক অবস্থা, কর্মীসকলের খোঁজ লইতেছেন। অবশ্য লওয়াই প্রয়োজন।

89344933df8eed634aab0354afe7e516_original

কারণ ভোটের আর বিশেষ বাকি নাই। পাঁচ জানুয়ারী চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হইয়া গেলে নির্বাচন কমিশন এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে যদি ভোটের দিনক্ষণ জানাইতে চাহে তাহাতে কোনও বাধা থাকিতেছে না। তাই ঘর গুছাইতে আর দুই মাস সময়ও বাকি নাই। এই সময়ের মধ্যে পাহাড় কিংবা সমতল সর্বত্র কর্মীদের উজ্জীবিত করিবে সকল দল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ উৎসব হিসাবে পরিগণিত এই নির্বাচনকে রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া ভাবিতেছেন। যদিও সকল ভোটই রাজনীতিকদের নিকট অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভোট বড় বালাই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.