মার্কিন ভিসা সহজ হচ্ছে দিল্লির
আমেরিকা ভিসা নীতি আমূল বদলে যাচ্ছে। ভারতকে সন্তুষ্ট করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এতটাই মরিয়া যে, ভারতীয়দেরই সবথেকে বেশি ভিসা দিতে চায় বাইডেন প্রশাসন। ঠিক যখন ভারত আগামী ডিসেম্বর মাসে গ্রহণ করতে চলেছে জি টুয়েন্টি গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সভাপতির আসন, তার প্রাক্কালে এই মার্কিন ঘোষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুত ভারত যে ক্রমেই রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি একটি সখ্য এবং বাণিজ্য তথা কূটনীতিকে ছাপিয়ে স্ট্র্যাটেজিক অংশদারিত্বেরও সাথী হতে চলেছে, সেই আভাস জোরদারভাবে পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকা।বৃহস্পতিবার দিল্লীর মার্কিন দূতাবাস ঘোষণা করেছে, নভেম্বর মাসেই খুলে দেওয়া হচ্ছে আমেরিকা যাওয়ার ভিসার দরজা। আর ভারতীয়দের জন্য এই প্রথম মাসেই এক লক্ষ ভিসা প্রদান আবেদন যাচাইয়ের স্লট দেওয়া হবে। তারপর প্রতিমাসে এক লক্ষ করে অর্থাৎ বছরে বারো লক্ষ ভিসা আবেদনের পরীক্ষা ও অনুমোদনের ব্যবস্থা করবে আমেরিকা। রাশিয়া শিবিরে ভারত যাতে স্থায়ীভাবে চলে না যায় এই মরিয়া প্রয়াস যে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমেরিকার অন্তর্বর্তী নির্বাচনে অন্যতম বড়সড় ইস্যুর ছায়া পড়বে, যদি ভারত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে যায় এবং আমেরিকার তুলনায় রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সামগ্রিক সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক যদি অনেকটাই এভাবে বাড়তে থাকে, সেটা ভোটের প্রচারে সরাসরি বাইডেনের বিরুদ্ধেই প্রচারে ব্যবহার করবে রিপাবলিকানরা। কারণ ট্রাম্পের রাজত্বে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক অনেক উষ্ণ জায়গায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বাইডেন ও মোদির সম্পর্কে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ উচ্চতা আসেনি। এমনকী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে কিছুটা কালো ছায়া পড়তে শুরু করে কোভিডকালে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তীব্র সংঘাতপূর্ণ হওয়ার সময় থেকেই। সেই সময় আগ্রাসীভাবে রাশিয়া ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। চিন ও রাশিয়ার মধ্যে বিগত চার বছর ধরে একটি বিশেষ অক্ষ তৈরি হয়েছে। আমেরিকা নিজের স্বার্থেই কোয়াড নামক একটি গোষ্ঠী গঠন করেছিল চিনকে ঠেকাতে- আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে। কিন্তু চিনের প্রবল আগ্রাসী এবং সংঘাতময় হুঁশিয়ারির আবহে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের একের পর এক সামরিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এস ২৯ ফাইটার জেট থেকে মিসাইল সিস্টেম এস ৪০০। আর তারপরই হঠাৎ রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারত কোনওভাবেই নিজেকে আমেরিকাসহ পশ্চিমি দেশগুলির চাপে রাশিয়াবিরোধী অবস্থান নেয়নি। বরং মে মাস থেকে রাশিয়ার সস্তা তেলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তেল ক্রয় বেহাল করেছে। আর তারপরই আমেরিকা আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু ভারত নিজের অবস্থানেই অনড় থেকেছে। সম্প্রতি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কররা স্পষ্ট বলেছেন, আমাদের দেশের স্বার্থে যেটা আমাদের কাছে সুবিধাজনক আমরা সেটাই করব। ভারত যে নরম হবে না এবং ভয় পাবে না আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে, এটা বোঝার পর এবার হঠাৎ আমেরিকা নিজেই নরম। তাই ভিসা নিয়ে ভারতকে খুশি করতে বৃহস্পতিবার এই বিপুল ভিসা প্রদানের ঘোষণা।