শিক্ষক সঙ্কটে ডিগ্রি কলেজ, পাঁচ বছরে নিয়োগ মাত্র ৭১

 শিক্ষক সঙ্কটে ডিগ্রি কলেজ, পাঁচ বছরে নিয়োগ মাত্র ৭১
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শিক্ষক সঙ্কটে ধুঁকছে সাধারণ ডিগ্রি কলেজ। ফলে নিয়মিত পঠনপাঠন সরকারী ডিগ্রি কলেজগুলিতে ব্যহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছে রাজ্যের হাজারো ছাত্রছাত্রী। কিন্তু এরপরও সরকার এবং তার দপ্তরের বিভাগে কোনও হেলদোল নেই। ফলে নানা প্রশ্ন উঠছে। কারণ রাজ্য একটি সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম মোতাবেক শিক্ষক শিক্ষিকা নেই। ফলে ইউজিসির ২৫:১ ছাত্র-শিক্ষক কোর্সের অনুপাতের নিয়মও লঙ্ঘন হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি রাজ্য সরকার তরফে আরও তিনটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের সূচনা করা হয়েছে। ফলে সহজেই অনুমেয় নতুন কলেজগুলিতেও শিক্ষক সঙ্কটে নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া একের পর এক কলেজ সূচনায় ব্যস্ত সরকার। শুধু তা নয়, নতুন সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে অন্যান্য কলেজ ফাঁকা করে, অধ্যাপক, অধ্যাপিকাদের বদলি করা হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, রামঠাকুর কলেজ, এমবিবি কলেজ, উইমেন্স কলেজ, বিবিএম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অভিযে ইতিহাস ও ইংরেজি বিভাগে পঠনপাঠন বন্ধের মুখে। রাজধানী শহর আগরতলার এই চারটি কলেজে শিক্ষক সঙ্কটের জন্য অনার্স ক্লাসই সঠিকভাবে হচ্ছে না। আর পাস কোর্সে পঠনপাঠনরত হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর আরও শোচনীয় অবস্থা।অধ্যাপক, অধ্যাপিকা সঙ্কটের জন্য জেলা ও মহকুমাস্থিত সাধারণ ডিগ্রি কলেজের পঠনপাঠন নিয়মিত করছে না। বর্তমানে অতিথি শিক্ষকের ভরসায় চলছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা! উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ছাত্র অনুপাতে প্রায় ১৭৮১জন অধ্যাপক অধ্যাপিকার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে কলেজগুলিতে ইউজিসি স্বীকৃত কর্মরত অধ্যাপক অধ্যাপিকার সংখ্যা মাত্র প্রায় ৪৭১ জন! এর মধ্যে আবার প্রত্যেক মাসেই অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা অবসরে যাচ্ছেন।অনেকে আবার চাকরি ছেড়ে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও যোগদান করছেন। ফলে শিক্ষক সঙ্কট প্রত্যেক মাসেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আর এর প্রভাবে ইউজিসির সেমেস্টার পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী কলেজগুলিতে শ্রেণীকক্ষে ১৮০ দিন ক্লাস হচ্ছে না। এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে রাজ্য। বিজ্ঞান বিভাগে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে করুণ অবস্থা। কারণ একটি সেমেস্টারেও পড়ুয়াদের প্র্যাকটিকেল ক্লাস সঠিক অনুপাতে হচ্ছে না। আর রাজ্যের জেলা, মহকুমার কলেজগুলিতে প্র্যাকটিকেল ক্লাসই বন্ধ। অনার্স ও পাস কোর্সের ক্লাসেরও একই হাল। যদিও ২০১৭ সালে ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ১৮২টি পদে অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকার এসে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর দুই বছর নিয়োগ বন্ধ। শিক্ষক সঙ্কটে উচ্চশিক্ষা বন্ধের পথে থাকলেও ২০২১ সালে ওই সময়ে বাইশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের জন্য মাত্র ৩৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এরপর বর্তমান বর্ষে আর ৩৬ জন নিয়োগ হচ্ছে। যদিও এই নিয়োগ নিয়ে আবার নানা অভিযোগ এখন আদালতে। এই সাতান্ন মাসে মাত্র ৭১ অধ্যাপক, অধ্যাপিকা প্রায় সাতাশ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য নিয়োগ করেছে সরকার ও তার দপ্তর। এদিকে, নেট, স্লেট, পিএইচডি উত্তীর্ণ যুবক যুবতীদের আরও অভিযোগ, এই মুহূর্তে ডিগ্রি নিয়ে প্রায় দেড় হাজার যুবক যুবতী রাজপথে ঘুরছে। কিন্তু সরকার তাদের নিয়োগ করছে না। উল্টো ২০১৭ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়াও বর্তমান সরকার নানা অজুহাতে বাতিল করে দিয়েছে। সরকারের এই অমানবিক মনোভাবের জন্য হাজারো মেধাবান রাজ্যের যুবক যুবতী বয়স উত্তীর্ণ বেকারে পরিণত হচ্ছে। আর এই সুযোগে রাজ্যে এসে চাকরি করছেন বহি:রাজ্যের বেকাররা। সরকার শুধুমাত্র কলেজগুলিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে অতিথি শিক্ষক নিয়োগে ব্যস্ত। ফলে একই কারণে রাজ্যের যুবক যুবতীদের চাকরিও হচ্ছে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.