ব্যাঘ্র প্রকল্প বাঁচাতে কঠিনতর পদক্ষেপ নিতে চলেছে প্রশাসন

 ব্যাঘ্র প্রকল্প বাঁচাতে কঠিনতর পদক্ষেপ নিতে চলেছে প্রশাসন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একসময় গুজরাত, রাজস্থান সহ পশ্চিম ভারতের চাপের ভারতের জাতীয় পশু তকমা
বাঘের থেকে কেড়ে সিংহকে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু সারা বিশ্বের বাঘের মধ্যে প্রায় ৩৬.৩৯ শতাংশ বাঘ আছে ভারতে। তাই এই প্রস্তাব বাতিল হয়। সারা বিশ্বে যেখানে ৩,৮৯০টি বাঘ আছে, সেখানে ভারতে মোট বাঘের সংখ্যা ২০১৪ সালের ব্যাঘ্রসুমারি অনুযায়ী ২,২২৬টি। এরপর ২০১৮ সালে
বাঘ সুমারি হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট এবছর জানুয়ারিতে প্রকাশ করার কথা থাকলেও বেরোয়নি। বলা হয়েছে, নতুন সরকার এসে বের করবে। বাঘ সম্বন্ধে বেশিরভাগ ভারতীয়র ধারণা, ভারতে বাঘ সবচেয়ে বেশি
আছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক নয়। পশ্চিমবঙ্গে বাঘ আছে সুন্দরবনের লবণাক্ত ভূমিতে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে জঙ্গলমহলে। সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশে পড়েছে বলে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের লবণাক্ত আর্দ্রভূমিতে যেখানে এখন প্রায় ৭৬টি বাঘ আছে, সেখানে বাংলাদেশে আছে ১০৩টি। ভারতে বাঘ সবচেয়ে বেশি
আছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা অঞ্চলের ২৯,৫১১ বর্গকিলোমিটার অরণ্যে। ২০১৪ সালের ব্যাঘ্র সুমারির হিসাবে ৭৭৬টি। এরপরেই স্থান হল মধ্য ভারতে পূর্বঘাট পর্বতমালা অঞ্চলের ৪১,৯৭৪ বর্গ কিলোমিটার অরণ্য। সেখানে আছে ৬৮৮টি বাঘ। এখানে অরণ্যাঞ্চল বেশি হলেও বাঘের সংখ্যা কিন্তু তুলনায় কম। এরপরে স্থান হল শিবালিক পার্বত্য ও গাঙ্গেয় সমভূমি
অঞ্চলের ১০,০১৭ বর্গকিলোমিটার অরণ্যে ৪৮৫টি বাঘ রয়েছে। তারপরে স্থান হল উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলের অরণ্যে। সেখানে রয়েছছ ২০১টি বাঘ। পঞ্চম স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের বক্সা
ব্যাঘ্র সংরক্ষিত অঞ্চল। ভারতের বাইরে বাঘ আছে রাশিয়ায়- ৪৩৩টি, ইন্দোনেশিয়ায়- ৩৭১টি, মালয়েশিয়ায় ২৫০টি, নেপালে ১৯৮টি, থাইল্যান্ডে ১৮৯টি, ভুটানে ১০৩টি আর চিনে ৭টি। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস পালন করা হয় ২৯ জুলাই। শিকার ও ব্যবসার নামে বাঘ
হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন হয় ১৯৭২ সালে। বাঘদের নিশ্চিন্তে বসবাসের জন্য সাত থেকে আটের দশকে ৬৬টি জাতীয় উদ্যান ও ৪২১টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। পরে তা বেড়ে ১০৪টি জাতীয় উদ্যান, ৭৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ৪৬টি সংরক্ষিত গোষ্ঠী অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঘ শিকার
বন্ধ হয়নি। বাঘের চামড়া ও অন্যান্য
দেহাংশ বিক্রির লোভে ২০১৮ সালে ৩৪টি ও এবছর এখনো পর্যন্ত ১৯টি বাঘ মারা হয়েছে। আর ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১,১৪৮টি বাঘ হত্যা হয়েছে। বাঘকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল চিনের অশুভ ব্যবসায়ীরা। চিনে আজও বাঘের চামড়া আর নেকড়ের বিভিন্ন অঙ্গের বিক্রিবাটা চলে, যা সারা বিশ্ব আটকাতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চোরাশিকার কমলেও উত্তরবঙ্গের ৭৬০ বর্গকিলোমিটারের বক্সার জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ১৯৮৩ সালে এই জঙ্গলকে ১৩তম ব্যাঘ্র প্রকল্পের মর্যাদা দেওয়া হলেও চোরাশিকার ও প্রাকৃতিক কারণে বাঘের সংখ্যা কমছে। গত ৩০ বছরে অনেক চেষ্টা করেও বক্সায় বাঘেদের অস্তিত্বের কোনো প্রামাণ্য নথি প্রকাশ্যে আনতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বন দফতর। যদিও বন দফতর বরাবর দাবি করে এসেছে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের গভীরে এখনও রয়েছে প্রচুর বাঘ। ২০১৫ সালের বাঘ গণনার চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে সাকুল্যে ৩টি বাঘ থাকলেও থাকতে পারে। ওই তথ্য সামনে
আসার পরই সারা দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আরও একধাপ এগিয়ে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানতে চায়, এত কিছুর পরও বক্সার ব্যাঘ্র প্রকল্পের মর্যাদা কেন কেড়ে নেওয়া হবে না? এরপরই ওই অরণ্যে বাঘদের ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বন দফতর। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় বক্সার বাঘদের পুনর্বাসনের আবেদন জানায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন দফতর। অনেক চিঠি চালাচালির পর ২০১৮ সালে বক্সায় ফের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ফিরিয়ে আনার সবুজ সংকেত দেয় এনটিসিএ। কিন্তু বাঘ আনা হবে কোথা থেকে? তাতেই পদে পদে হোঁচট খেতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন দফতর। কারণ সুন্দরবনের লবণাক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বাঘরা পাথুরে বক্সায় কোনওভাবেই মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই জোরকদমে শুরু হয় বাঘ খোঁজার পালা। বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বক্সার ভূমি বৈচিত্র্যের সঙ্গে একমাত্র মিল রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য অসমের মানস, ওরাং ও কাজিরঙা বাঘবনের। এনটিসিএ’র মধ্যস্থতায় ২ রাজ্যের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা। প্রাথমিক অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গকে বাঘ দিতে বেঁকে বসে অসম। কিন্তু ব্ৰহ্মপুত্র ও সঙ্কোশ দিয়ে জল গড়ানোর পর এখন অসম সরকার রাজি হয়েছে বাঘ পাঠানোয় তবে জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ কিছু শর্ত আরোপ করেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.