বহু টালবাহানার পর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল নাসার ‘আর্টেমিস-১’

 বহু টালবাহানার পর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল নাসার ‘আর্টেমিস-১’
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পৃথিবীর ‘মায়া’ কাটিয়ে চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করল নাসার ‘আর্টেমিস ১’। সেই সঙ্গে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ‘ডিপ স্পেস এক্সপ্লোরেশন’-র প্রথম পর্বও শুরু হয়ে গেল। গত এক সপ্তাহ ধরে সাজো সাজো রব চলছিল ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। সেখানকার ৩৯-বি লঞ্চপ্যাড থেকেই রওনা দিল ‘আর্টেমিস ১’। সোমবার কেনেডি লঞ্চ প্যাড থেকে এই মিশন লঞ্চের কথা ছিল। কিন্তু আচমকায় তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। উৎক্ষেপণের নির্দিষ্ট সময়ের ৪০ মিনিট আগে স্থগিত রাখা হয় এই মিশনের লঞ্চ। পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে শক্তিশালী রকেট হচ্ছে আর্টেমিস-১। এই রকেটে করে এক সঙ্গে ৪ জন নভোশ্চরকে চাঁদে নিয়ে যেতে সক্ষম। যদিও প্রথম বার লঞ্চের কোনও মানুষে চাঁদে পাঠানো হয় নি ‘আর্টেমিস-১’ এর মাধ্যমে। কিন্তু নভোশ্চর সাজে সজ্জিত একটি
ম্যানিকুইনকে পাঠানো হয়েছে ওই রকেটের মাধ্যমে। ত্বরণ, কম্পনের তথ্য সংগ্রহের জন্যই নভোশ্চর সদৃশ ওই নভশ্চর পাঠানো হবে। সেই ম্যানিকুইনের নাম দেওয়া হয়েছে- ‘কমান্ড্যার মুনকিন কাম্পোস’। ওরিয়ন ভাইব্রেশন টেস্টের জন্য ব্যবহার করা হবে মুনকিনকে। এই ম্যানিকুইন কম্যান্ডারের চেয়ারেই বসে থাকবে। রকেট যখন লঞ্চ করা হয়, তখন নভোশ্চরদের পোশাকই ছিল এই ম্যানিকুইনের গায়ে। তথ্য সংগ্রহের জন্য এই মুনকিন গায়ে লাগানো থাকবে ২টি রেডিয়েশন সেন্সর। এর পাশাপাশি যে আসনে বসে থাকবে ওই মুনকিন, তার নীচেও থাকবে বিভিন্ন রকমের সেন্সর। ভাইব্রেশন এবং অ্যাক্সিলারেশনের তথ্য সংগ্রহের জন্য থাকবে সেন্সরগুলি। গোটা মিশন জুড়ে ওই তথ্যগুলি সংগ্রহ করবে ওই সেন্সর। তবে মুনকিন একা নয়। আরও দুটি ম্যানিকুইন থাকবে ওই মহাকাশযানে। তারা অবশ্য মহিলা সদৃশ ম্যানিকুইন। তাদের নাম ‘জোহর’ এবং ‘হেলগা’। ইজারায়েলের স্পেস এজেন্সি এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার বানিয়েছে ওই ম্যানিকুইন। এই বিশেষ চন্দ্রাভিযানের প্রথম পর্বে ‘ওরিয়ন স্পেসক্রাফট’, ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম রকেট’ এবং সুনির্দিষ্ট গ্রাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করছে নাসা। তবে ‘আর্টেমিস ১’-এ কোনও মহাকাশচারী থাকছেন না। এটি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ‘ডিপ স্পেস এক্সপ্লোরেশন-র একেবারে গোড়ার পর্ব। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হলে ২০২৪ সালের
মধ্যে চাঁদের মাটিতে প্রথম মহিলা নভোশ্চর পাঠাবে নাসা। ওই বছরেই কোনও অ-শ্বেতাঙ্গ মহাকাশচারীকেও চন্দ্রপৃষ্ঠে দেখা যাবে।
সেক্ষেত্রে নাসার বিশালাকার এসএলএস রকেট এবং ওরিয়ন স্পেসক্রাফট-এ চড়ে চাঁদের বৃত্তে পৌঁছে যাবেন মহাকাশচারীরা। তার পর সেখান থেকে তারা স্পেক্স-এক্স
হিউম্যান সিস্টেম বা এইচএলএস করে চাঁদের বরফাবৃত দক্ষিণ গোলার্ধে যাতায়াত করতে পারবেন। সার্বিকভাবে এর মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করতে চায় নাসা। সাফল্য এলে ভবিষ্যতে সেখান থেকে মঙ্গল-অভিযানের প্রস্তুতি নেবেন বিজ্ঞানীরা। আর্টেমিস চন্দ্রাভিযানের প্রথম পর্ব আসলে একটি পরীক্ষামূলক অভিযান। এসএলএস রকেটের মাথায় বসিয়ে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটি মহাকাশে
পাঠানো হবে এই পর্বে। মহাকাশের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ‘ওরিয়ন ক্যাপসুল’ বিজ্ঞানীদের হিসাব মতো কাজ করতে পারছে কিনা, সেটাই দেখে নেওয়া হবে এই পর্বে। যদি এই পর্বে সাফল্য আসে, তবেই বাকি দুই ধাপে এসএলএস রকেট এবং ওরিয়ন ব্যবহার করার ছাড়পত্র মিলবে। সেই দুটি পর্বে
মহাকাশচারীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবে নাসা। নাসা জানিয়েছে, অভিযানের প্রথম পর্বের মেয়াদ ৪২ দিন ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটে চেপে রওনা দেবে ওরিয়ন। মানুষের তৈরি যে কোনও মহাকাশযানের থেকে বেশি দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার কথা তার। অঙ্কের নিরিখে পৃথিবীর থেকে সাড়ে চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে যাবে সে। দ্রুত ফিরেও আসার কথা তার। তবে ভয়ঙ্কর তেতে উঠবে ওরিয়ন। ফেরার পথে তার তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে ২৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.