অধিকার মানবাধিকার

 অধিকার মানবাধিকার
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বালিতে জি টোয়েন্টির বৈঠকে ভাষণ দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জোর দিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনের উপর। আবার বৈঠকে কথা হইলো মোদি বাইডেনের মধ্যে । কোয়াডের মতন নানান ফোরাম গড়িয়া পারস্পরিক কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে কথা হইলো। সংবাদ সংস্থার এই সকল খবরে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের স্বীকারোক্তি রহিয়াছে। বাইডেন নয়াদিল্লীর কূটনৈতিক কৌশলের প্রশংসা করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়। মোদি তাহার ভাষণে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ লইয়া বলিয়াছেন, ইহা যুদ্ধের সময় নহে। কূটনৈতিকভাবে কি প্রকারে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় এই লইয়া সকলকে ভাবিতে হইবে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের গুরুত্ব বরাবরই বেশি। চিনের প্রতিবেশী বলিয়াই হোক কিংবা ভারতের বিশাল বাজার, ভারতের জোট নিরপেক্ষ কূটনীতিক পরম্পরার কারণেই হোক কিংবা প্রাচীন সভ্যতা- সংস্কৃতি, ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ আসন অলঙ্কৃত করিয়া থাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সেই দিক হইতে প্রধানমন্ত্রী মোদিও সেই সকল মঞ্চে যোগ্য রাষ্ট্রনেতা এবং পরম্পরার বাহক হিসাবে কাজ করিতেছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর ভারত জি টোয়েন্টি গোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্ব লইতে যাইতেছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাহার ভাষণে বলিয়াছেন, আগামী বছর জি টোয়েন্টি নেতারা যখন বুদ্ধ এবং গান্ধীর দেশে মিলিত হইবেন, আমি নিশ্চিত তখন আমরা বিশ্ববাসীকে শান্তির বার্তা দিতে পারিব।

কিন্তু দেখা গেল একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন বিশ্ব রাজনীতি লইয়া নয়াদিল্লীর মূল্যায়ন, মতামত জানাইতেছেন জি টোয়েন্টির ফোরামে প্রায় কাছাকাছি সময়ে তার নেতৃত্বাধীন দেশ সমালোচিত হইতেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে। সমালোচনা আসিতেছে অন্যান্য সদস্য দেশের তরফে। যে সকল বিষয় লইয়া ভারত সরকারের সমালোচনা হইলো সেই বিষয়গুলি সকলই দেশের অভ্যন্তরে আলোচিত। সেই সমালোচনা সরকার কানে তুলিতে চাহিতেছেন না, ফলত এইবার একই সমালোচনা সহ্য করিতে হইতেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। বিশেষ করিয়া ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করিল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য দেশগুলি।

গত বৃহস্পতিবার এই ফোরামে আলোচিত হয় ভারত প্রসঙ্গ। মানবাধিকার পরিষদে নিয়োজিত মার্কিন দূত মিশেইল টেইলর সুপারিশ করিয়াছেন, ভারত যেন মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ আইন অর্থাৎ যাহাকে ভারতে ইউএপিএ বলা হয়, সেই আইনের প্রয়োগ কমাইয়া দেয় । প্রসঙ্গত, এই আইন দেশে কালা আইন হিসাবেই সমালোচিত। দেশদ্রোহ বা সন্ত্রাসবাদী বলিয়া দাগাইয়া দিয়া জামিন না দিয়া বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় বন্দি করিয়া রাখা যায় এই আইনে। মানবাধিকার পরিষদ ভারত সরকারের সমালোচনা করিয়া বলিয়াছে এই আইন ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার কর্মীদিগের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হইয়া থাকে।

মানবাধিকার লইয়া রাষ্ট্রপুঞ্জে যে ইউপিআর অর্থাৎ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ হইয়া থাকে গত বৃহস্পতিবার ছিল ভারতের ইউপিআর। এর আগে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের সর্বশেষ ইউপিআরে ভারতের প্রতি যে যে সুপারিশ করা হইয়াছিল এই ফোরাম হইতে তাহার কিছু কিছু বাস্তবায়ন করিতে পারায় এই ফোরামে ভারতের প্রশংসাও করা হইয়াছে। অন্যান্য দেশ সকল এই বৈঠকে ভারতের সমালোচনায় বলিয়াছে, ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুণ্ন হইতেছে, মুক্ত মতো বাধাপ্রাপ্ত হইতেছে এবং নারীরা হিংসার সম্মুখীন হইতেছে। প্রতি চার বৎসর অন্তর অন্তর এই ইউপিআর হইয়া থাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার ফোরামে।

প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সমালোচিত হইয়াছিল প্রায় একই বয়ানে। এই বছর এপ্রিলের সূচনায় আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক (ইউএসসিআইআরএফ) অভিযোগ তুলিয়াছিল, ভারত ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন করিতেছে।গান্ধী বুদ্ধের অহিংসার দেশ, পরমতো সহিষ্ণুতা আর শান্তির বাণীর উৎস দেশ, জোট নিরপেক্ষ কূটনৈতিক অবস্থানের দেশ ভারতের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগের জবাব তো দিতেই হবে। এই দেশের বহমান সভ্যতার ধারা আর পরম্পরায় দেশবাসীর অধিকার আর মানবাধিকার লইয়া আজ যাহারা আঙুল তুলিতেছে তাহাদের সভ্যতা, পরম্পরা কোনও কালেই ভারতের তুলনায় অগ্রণী নহে। জগৎসভায় ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি ভারতবাসীর স্বপ্ন তাই রাষ্ট্রনেতাদের আর কূটনীতিকগণেরই দায়িত্ব জগৎসভায় সম্যক জবাব পৌঁছাইয়া দেওয়ার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.