নিয়োগ খতিয়ে দেখবে সুপ্রিমকোর্ট!!

 নিয়োগ খতিয়ে দেখবে সুপ্রিমকোর্ট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট চাইল। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল যেহেতু নির্বাচন কমিশনারের প্রধান দায়িত্ব দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা এবং সেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা, তাই এই পদে যারা থাকবেন, তাদের সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন হওয়া দরকার। আর সেই পক্ষপাতহীন কমিশন গঠনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে বর্জন করা। সুপ্রিম কোর্ট বুধবার কেন্দ্রকে বলেছে, সদ্য মনোনীত অরুণ গোয়েলকে কেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করা হল, তার জবাব দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কমিশনার কতটা স্বাধীন? কাল্পনিকভাবে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, প্রধানমন্ত্রীকে কোনও কারণে কমিশনের পক্ষ থেকে সমালোচনা করা দরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি চাইতে হবে, সেটা কি কমিশন পারবে? এটা একটা উদাহরণ। প্রশ্ন হল, সেটা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কি পারবেন? যদি না পারেন তাহলে সেটা কি গোটা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার একটা লক্ষণ নয়? সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকবে সবরকম চাপমুক্ত থেকে। সরকার বলেছে, চরিত্রগতভাবে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে যোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এই যে যোগ্যতার নির্ণায়ক ব্যবস্থা, এটা কীভাবে নির্ধারিত হয়? চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের মাপকাঠি কী? চরিত্র তো অনেক কিছু নিয়েই গঠিত হয়। কিন্তু মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে সর্বাগ্রে তো হতে হবে স্বাধীন ও মুক্ত। সেটাই আসল মাপকাঠি । সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছে, শুধুই মন্ত্রিসভা নির্বাচন কমিশনকে মনোনীত করতে পারবে এটা কাম্য নয়। আরও বৃহত্তর কোনও কমিটি থাকা উচিত। এখন নির্বাচন কমিশনের কাঠামোয় একজন থাকেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। আর দুজন নির্বাচন কমিশনার। যারা সরকারী উচ্চতর আধিকারিক, তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করে নেওয়া হয় এই কমিশনারদের। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের মনোনয়ন নিয়ে জানতে চাইছে যে এই নিয়োগের পিছনে কী প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত ফাইল পেশ করা হোক। অর্থাৎ কীসের ভিত্তিতে তাকে বাছাই করা হল। আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এমন কোনও কমিটি থাকা উচিত যাদের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কারণ তিনি নির্বাচন পরিচালনা করেন। তাই কোনও রাজনৈতিক দলই যেন তার মনোনয়নে কোনও ভূমিকা পালন করতে না পারে। এটাই কাম্য। এই গোটা বিষয়টি নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। বিচারপতি কে এম জোসেফ এই বেঞ্চের প্রধান। আদালত আরও বলেছে, ২০০৪ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে গোটা সময়সীমা পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করেছেন এ রকম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নেই। শুধুমাত্র কেন সরকারী আধিকারিকদের মধ্য থেকেই কমিশনার নিয়োগ হবে? প্রশ্ন তুলছে সুপ্রিম কোর্ট। বারবার তীক্ষ্ণ মন্তব্য এবং প্রশ্ন ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট ১৯ নভেম্বর কমিশনে অরুণ গোয়েলের নিয়োগ সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ফাইল চেয়েছে। বিচারপতি কে এম জোসেফের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে যে তারা জানতে চান যে নিয়োগে কোনও ‘হ্যাঙ্কি প্যাঙ্কি’ ছিল কিনা, কারণ তাকে সম্প্রতি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর দেওয়া হয়েছিল। বুধবার নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়ে পেশ করা একগুচ্ছ আবেদনের শুনানি চলাকালীন অরুণ গোয়েলের নিয়োগের কথা উল্লেখ করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। কেন্দ্ৰ গোয়েলের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি দেখাতে আপত্তি জানায়। কেন্দ্র বলেছে, এর কোনও প্রয়োজন নেই কিন্তু আদালত কটূক্তি করে বলেছে, আপনারা নথি উপস্থাপন করুন। আদালত কড়া মন্তব্য করে বলেন, নিয়োগে কিছু ভুল হয়েছে কিনা তা আমরা দেখবো। একই সঙ্গে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার করবে সুপ্রিম কোর্ট।

সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার গোয়েলকে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়েছিল – প্রধান রাজীব কুমার এবং অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে ছাড়াও গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের বৃহত্তর ইস্যুটি নিয়ে শুনানি শুরু হওয়ার পরে। সে কারণেই আদালত বলেছে, তারা দেখতে চায় এত দ্রুত পদক্ষেপের কারণ কী। শনিবার চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার একদিন পর অরুণ গোয়েলকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। উল্লেখ্য, দেশের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আগে অনেকবার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আজ থেকে ৩০-৩২ বছর আগে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএন সেশন নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেছেন এবং তার সময়েই নির্বাচন কমিশনের সঠিক ভূমিকার উদ্দেশ্য দেশের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.